লাশের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত

আজ বিশ্ব মে দিবস। বিশ্ব মে দিবসেও সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন বাংলাদেশ। বিদেশী প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোতে প্রতিদিন উঠে আসছে এদেশে শ্রমিকদের নিপীড়ন ও বঞ্চিত হওয়ার কথা।
সাভারের মর্মান্তিক ভবন ধসের ঘটনায় মঙ্গলবার মধ্যরাত পেরিয়ে শত শত লাশের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন কংক্রিটকে সরাতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে সরকারী-বেসরকারী উদ্ধারকারী দল অবিরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতি মূহুর্ত তারা বিশাল ধ্বংসস্তূপ সরাতে রাত-দিন কাজ করছেন।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মিডফোর্ট হাসপাতালের মর্গে রাখা অজ্ঞাত পরিচয়ের ৫০ লাশের মধ্যে মঙ্গলবার ৮ টি লাশ তার স্বজনরা শনাক্ত করেছে। বাকী লাশগুলোকে বুধবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত স্বজনদের জন্য রাখা হবে। তারা সেখানে গিয়ে শনাক্ত করতে পারবে।
সকাল ১০টার পর অজ্ঞাত লাশগুলোকে জুড়াইন কবর স্থানে জানাযা শেষে দাফন করা হবে। অজ্ঞাত লাশগুলোর ডিএনএ সংগ্রহ করেছে হাসপাতাল ও সিআইড কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে নিখোঁজ থাকাদের স্বজনরা ডিএনএ মিলিয়ে নিতে পারবেন।
মঙ্গলবার রাত একটার সময় রানা প্লাজার সামনে শত শত স্বজনহারা মানুষ নিখোঁজদের সন্ধানে অধীর আগ্রহে রয়েছেন। এসব অপেক্ষমান স্বজনরা এখন আর তাদের নিখোঁজ ব্যাক্তিদের জীবিত সন্ধান পাওয়ার আশা করছেন না। এখন তাদের চাওয়া লাশটা দিয়ে দেন আমরা বাড়ি নিয়ে মাঠি দিবো। যেনো আফসোস না করতে হয়।
উদ্ধার অভিযানের সপ্তম দিনের মধ্যরাত পেরিয়ে একটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এনিয়ে আইএসপিআরে হিসাব অনুযায়ী মঙ্গলবার গভীর রাত পৌনে দুইটা পর্যন্ত ৩৯৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে সাড়ে পাঁচশ’ পোশাক শ্রমিক চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
উদ্ধার অভিযানের সপ্তম দিনে অথাৎ ১৫৯ ঘন্টা পর ধ্বংসস্তূপ মৃতদেহের সন্ধান পেতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে উদ্ধারকারী সর্তকতার সঙ্গে অভিযান চালাচ্ছে। মূলত গত দুই দিনে ধসে পড়া ভবনের সামনে ও পিছন দিকে কংক্রিট অপসারণ করা হচ্ছে। তবে এক দিকে কাজ চললে অন্যদিকে বন্ধ রাখা হচ্ছে উদ্ধার অভিযানে ভারসম্য বজায় রাখতে এমন কথাই বলেছেন উদ্ধার কাজে দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল হাসান শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
ভবন থেকে প্রাণের স্পন্দনের দেখা মিলছেনা। এখন শুধু মৃতদেহ উদ্ধারের পালা। প্রতি মূহুর্তে বাড়ছে সেই সংখ্যা। ৫০টির বেশী ভারি যন্ত্রপাতি ধ্বংসস্তূপ সরানের নিয়ে আসা হলেও ব্যবহার হচ্ছে ৪টি। তাও আবার পর্যায়ক্রমে, পিছন দিকে কাজ চললে সামনের দিকে বন্ধ আর সামনের দিকে চললে পিছন দিকে বন্ধ।
ধ্বংসস্তূপ ও এর আশেপাশের এলাকায় এখনও লাশের গন্ধ বিরাজমান । মুখে মাস্ক ছাড়া সেখানে অবস্থান করা সম্ভম নয়। ভবন ধসের তিনদিনের মাথায় এখানকার বাতাসে লাশের গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, যা এখনও কমেনি।
ঢাকা জেলা প্রশাসন ও ঢাকা জেলা পুলিশের সর্বশেষ (অসমাপ্ত) তালিকা অনুযায়ী এখনও সাতশ’ জনের বেশী মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ও এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ রানা প্লাজার সামনে আশেপাশে দেয়ালে নিখোঁজদের ছবি টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘সন্ধান চাই’ এমন পোস্টারে সাভারের বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে দেয়ালে ভরে গেছে।
সপ্তম দিনে মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের একটি লেন খুলে দেওয়া হয়েছে। রানা প্লাজার সামনে রাস্তার একটি লেন খুলে দেওয়া হলেও সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে। সাধারণ মানুষ ও স্বজনহারাদের নিরাপত্তা বেষ্টিত এলাকা অতিক্রম করতে দেওয়া হচ্ছেনা।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিলে পুরো ভবনটি বন্ধ ঘোষণা করে মার্কেট কর্তৃপক্ষ। কিন্তুু ভবন মালিক পৌর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নেতা মো. সোহেল রানার এ ফাটলকে প্লাস্টা খসে পড়া বলে চালিয়ে দেয়। পরবর্তীতে বুধবার নিউ ওয়েব বটমস লি: চাকরী থেকে ছাটাইয়ের হুমকি দিয়ে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সাভারের সেন্টা পয়েন্টে অবস্থিত সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে এ ভবনটি ধ্বসে পড়ে। ভবনটি বিকট শব্দে ধ্বসে পড়ার পর পরই স্থানীয়রা প্রথমে উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে।