সরকার লাশ গোপনের চেষ্টা করছে : খালেদা জিয়া

ডেস্ক রিপোর্ট : সাভার ট্র্যাজেডির ঘটনায় মহাজোট সরকারের কড়া সমালোচনা করে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকার রাতের আঁধারে লাশ গোপন করে নিহতদের সংখ্যা কম দেখানোর চেষ্টা করছে।
ঘটনার কয়েকদিন পর প্রধানমন্ত্রী ঘটনাস্থলে যাওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, যেদিন এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে সেদিন রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠান হয়েছে। রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাওয়া।
শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এ হত্যাকারী সরকারকে বিদায়ের জন্য আন্দোলন করতে হবে।
বুধবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ব্রিজ সংলগ্ন বালুর মাঠে এক শ্রমিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সাভারের ঘটনায় হতাহতদের প্রকৃত তালিকা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, নিহত প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরকারকেই দিতে হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, এ ঘটনার পর সেনাবাহিনীকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয়নি।
তিনি বলেন, এ ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর আমাদের দলের নেতাকর্মীরা বসে থাকেনি। তারা উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। রক্তদান কর্মসূচি, ওষুধ সরবরাহ, আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার জন্য তারা তৎপর থেকেছে।
মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল এ সমাবেশের আয়োজন করে।
বিকাল ৩টার দিকে ঢাকার গুলশানের বাসা থেকে সমাবেশস্থলের উদ্দেশে রওনা করেন বেগম খালেদা জিয়া। পৌনে চারটার দিকে শ্রমিক সমাবেশে পৌঁছান তিনি। এ সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের নেতৃত্বে দলের নেতারা বিরোধীদলীয় নেতাকে অভ্যর্থনা জানান।
বেগম খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়ক সাজানো হয় ফেস্টুন আর ব্যানার দিয়ে।
বেগম খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে বলেন, এমন এক সময় আমরা মে দিবস পালন করছি যখন দেশে শোকের আবহ বিরাজ করছে। লাশের মিছিল আর শোকার্তদের আর্তনাদে ভারী হয়ে আছে এদেশের আকাশ-বাতাস।
তিনি বলেন, সাভারে কিভাবে মানুষ হত্যা করা হয়েছে দেশবাসী দেখেছে। এ সরকার একটা খুনি সরকার। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মানুষ খুন করছে। এ সরকার অপয়া সরকার। এ সরকার যতদিন থাকবে মানুষ ও দেশের ক্ষতি হতেই থাকবে।
সময় এসেছে এ সরকারকে বিদায় করার। সাভারে ভবন ধসে যারা নিহত হয়েছে বেগম খালেদা জিয়া তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
পিলখানা ট্র্যাজেডির কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ৫৭ কর্মকর্তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে এ সরকারের যাত্রা শুরু আর সাভারের রক্ত নিয়ে এ সরকার বিদায় নিবে।
তিনি বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর শ্রমিকদের কল্যাণে কোনো কাজ করেনি। শ্রমিকরা চাকরিহারা হয়েছে। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। সরকার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি দিতে পারছে না। নিরাপত্তা দিতে পারছে না। আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজি থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না।
দেশের মানুষ শান্তিতে নেই, নিরাপদে নেই উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, গত চার বছরে দেশে নতুন কোনো শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা না হয়ে বরং চালু শিল্প-কারখানাগুলো বন্ধ হয়েছে সরকারের লুটপাট আর চাঁদাবাজির কারণে।
তিনি বলেন, এ সরকার জনগণকে ভালো কিছু দিতে পারেনি। খুন, সন্ত্রাস, গুম, হত্যা এগুলোই মানুষকে দিয়েছে তারা।
তিনি প্রশ্ন করেন, ক্ষমতায় গেলে তারা ১০ টাকা দরে চাল খাওয়াবে বলেছিল। কোথায় আজ সেই ১০ টাকার চাল? ৪০ টাকা কেজি দরে মানুষকে চাল কিনতে হচ্ছে।
বেগম জিয়া বলেন, শ্রমিকরা এতো পরিশ্রম করেও দুই বেলা পেটভরে খেতে পারছে না। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারছে না। শ্রমিকরা কষ্টে আছে।
চাল-ডাল তেল-লবণ, শাকসবজি প্রতিটি জিনিসের দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সরকার গরিব মানুষের কথা চিন্তা করে না।
ডেসটিনি, হলমার্ক, পদ্মা সেতু, শেয়াবাজারের টাকা চুরি করে তারা ভালো আছে।
আগে থেকেই তাদের সম্পদ বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। সেখানে গিয়ে তারা ভালো থাকবে। আমরা যারা দেশে থাকবো তাদের কষ্ট হবে।
তিনি বলেন, একজন হিন্দু লোকের এবং সরকারি জায়গা জবর দখল করে এ ভবন তৈরি করা হয়েছে। ডোবা ঠিকমতো ভরাট করা হয়নি।
আমাদের হরতালের দিন সব শ্রমিককে ডেকে এনেছিল তারা। হুমকি দিয়েছিল কাজ না করলে বেতন দেয়া হবে না। জোর করে তাদের উপরে পাঠিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল।