মোট লাশ ৪৩১

সাভারে ভবন ধসের নবম দিন সকালে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আরও আটজনের লাশ। এ নিয়ে মোট উদ্ধার হওয়া লাশের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৩১ এ। ভারী যন্ত্র ব্যবহার করে দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্ধার অভিযানে এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ৪৬জনের লাশ।
বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এ আটটি লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া দুপুরে উদ্ধার হওয়া দু’জনের লাশের কাছাকাছি থাকা আরও ছয়টি লাশ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে দু’জন নারী ও ছয়জন পুরুষ। তবে মরদেহগুলো গলে-পচে এমনভাবে বিকৃত হয়ে গেছে যে চেনা কঠিন।
সকালে উদ্ধার হওয়া ছয়জনের লাশ প্রথমে সাভার অধরচন্দ্র বিদ্যালয় মাঠে রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর এখান থেকে পাঠানো হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) মর্গে। দুপুরে উদ্ধার করা লাশ দু’টি অধরচন্দ্র বিদ্যালয় মাঠে রাখা হয়েছে।
সব মিলে ভবন ধসের নবম দিন পর্যন্ত জীবিত ও মৃত মিলে উদ্ধার করা হয়েছে দুই হাজার চারশ আটষট্টি জন। এর মধ্যে জীবিত ২৪৩৭ এবং মৃত ৪৩১জন।
বৃহস্পতিবার সকালে এক প্রেস বিফিংয়ে জিওসি চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী এ সব তথ্য জানান।
বর্তমানে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে উদ্ধারকারীরা ক্রেনসহ আরও অন্যান্য ভারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার করে উদ্ধার কাজ চালানো হচ্ছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ের অভিযান হিসেবে অভিহিত এ ধাপের উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছে সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের অধীনে প্রকৌশল বিভাগ, বিমান বাহিনী, নৌ-বাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও রেডক্রিসেন্ট।
সহযোগিতা করছেন আনসার, ৠাব ও পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা।
মঙ্গলবার সকালেও অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ে আপনজনের মরদেহ বুঝে নিতে অপেক্ষা করেন শোকাহত স্বজনরা। পরিচয় শনাক্ত চূড়ান্ত হওয়ার পরই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে মরদেহ।
উল্লেখ্য, রোববার রাত দশটার দিকে জীবিত চারজনকে উদ্ধারের প্রাথমিক প্রচেষ্টা হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের কারণে ভেস্তে গেলে কর্তৃপক্ষ ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে উদ্ধার কাজ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়।
ওই সময় পর্যন্ত জীবিত থাকা নারী গার্মেন্টস শ্রমিক শাহানাকে উদ্ধারের প্রচেষ্টা শেষ পর্যায়ে ছিল।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আইএসপিআরের রাতের প্রেস ব্রিফিংয়ের পর রোববার রাত সাড়ে এগারোটা থেকে শুরু হয় উদ্ধার কাজে ভারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার।
তবে আগের অগ্নিকাণ্ডে সৃষ্ট ধোঁয়ার কারণে ব্যাঘাত ঘটে উদ্ধারকাজ। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে আবার পুরোদমে শুরু হয় উদ্ধার অভিযান।
এদিকে, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আরেক দফা আগুন লাগলেও সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে আনে উদ্ধারকর্মীরা।
ইতোমধ্যে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এ পর্যন্ত ওই ভবনের মালিক, মালিকের বাবা, ভবনে অবস্থিত কারখানাগুলোর মালিক ও সাভার পৌরসভার প্রকৌশলীসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার দুপুরে বেনাপোল থেকে গ্রেফতার করা হয় ভবনের মালিক সোহেল রানাকে। আর সোমবার দুপুরে রানার বাবা আব্দুল খালেক ওরফে কলু খালেককে গ্রেফতার করা হয় রাজধানীর মগবাজার থেকে।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে।
সাভার পৌর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানার মালিকানাধীন এই ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ইলেকট্রনিকস, কম্পিউটার, প্রসাধন সামগ্রী ও পোশাকের দোকানের পাশাপাশি তৃতীয়তলা থেকে ওপরতলা পর্যন্ত ছিলো গার্মেন্টস কারখানা। এগুলোতে কাজ করতেন কয়েক হাজার শ্রমিক।