রানা প্লাজা নিয়ে ইকোনোমিস্ট: ভুপালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ শিল্প বিপর্যয়

ডেস্ক রিপোর্ট সাভারের রানা প্লাজার ধসকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করেছে দ্য ইকোনোমিস্ট পত্রিকা। পত্রিকাটি তার অনলাইন সংস্করণের এশিয়া বিভাগে ‘বাংলাদেশে বিপর্যয়: ধ্বংসস্তূপে ছিন্নবস্ত্র’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ ছেপেছে।
নিবন্ধটিতে বলা হয়েছে, এটি ১৯৮৪ সালে ভুপালের বিপর্যয়ের পর দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনা।
উল্লেখ্য, ভারতের মধ্যপ্রদেশের ভুপালে ইউনিয়ন কারবাইড ইন্ডিয়া লিমিটেডে ১৯৮৪ সালের ২ ও ৩ ডিসেম্বর গ্যাস বিস্ফোরণে ৩ হাজার ৭৮৭ জন নিহত হয়।
নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজধানী ঢাকার কাছে শিল্প এলাকা সাভারে ২৪ এপ্রিল একটি ভবন ধসে পড়ে যেখানে একটি শপিং সেন্টার ও ৫টি পোশাক কারখানা ছিল। এক সপ্তাহ পর মৃত্যুর সংখ্যা ৪২৭ হয় যা ছোট করে দেখা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রায় দুই হাজার ৪শ জন বেরিয়ে আসতে সক্ষম বা উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু নিকটবর্তী হাসপাতাল ও বিদ্যালয়গুলোতে গগনবিদারী কান্নারত স্বজনদের ঝুলানো নিখোঁজদের তালিকা বলছে, আরও ১৫০ জন নিহত হতে পারে।
রফতানি বিশেষ করে ইউরোপের জন্য পোশাক তৈরিতে নিয়োজিত ছিল অধিকাংশ শ্রমিক। ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রাপ্ত পোশাক ও তথ্যাদই বলছে, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ব্র্যান্ড যেমন প্রাইমার্ক, জো ফ্রেশ, কি ও বেনেটন ওইসব কারাখানা থেকে পোশাক কিনত বলে ইকোনোমিস্টের নিবন্ধে বলা হয়েছে।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুব শাখার একটি প্রভাবশালী ব্যক্তি রানা ওই ভবনের মালিক সোহেল রানা। তার নামানুসারে ভবনটির নাম করা হয়েছে রানা প্লাজা। ভবন ধসের ঘটনার চার দিন পর ভারতের সীমান্তবর্তী বেনাপোল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অপরাধজনিত উদাসীনতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
নিয়ম ভঙ্গ করে ভবন নির্মাণের বিষয়টিও উঠে এসেছে নিবন্ধে। বলা হয়েছে, পাঁচ তলার অনুমতি নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে আটতলা ভবন।
নিবন্ধে চালানো উদ্ধার অভিযানকে পুরোপুরি সফল হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। বলা হয়েছে, উদ্ধার অভিযান ছিল ব্যর্থ, এমনকি ঘটনাস্থল ঘিরে রাখা হয়নি। হাজার হাজার প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনাস্থলকে ঘিরে রেখেছিল, অনেকে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে ঢুকেছে। সৈন্য ও দমকল বাহিনীর কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে জীবিত বা নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। এক পর্যায়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা উদ্ধারকাজের ধীর গতি দেখে, উদ্ধারকর্মীদের ওপর পাথর ছুড়ে মারে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে।
বাংলাদেশে পোশাক কারখানার বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নিবন্ধে। আর এর অন্যতম কারণ হিসেবে সস্তায় শ্রমিকের সহজলভ্যতাকে উল্লেখ করেছে ইকোনোমিস্ট। বাংলাদেশে একজন শ্রমিকের বেতন মাত্র তিন হাজার টাকা যা চীনের চেয়ে এক পঞ্চমাংশ।
বাংলাদেশের পোশাকখাতে ঘন ঘন বিপর্যয় রোধেরও পরামর্শও দেওয়া হয়েছে নিবন্ধে। অন্যদের বিশেষ করে বিদেশি ক্রেতাদের চা্প ছাড়া পরিবর্তন খুব কমেই আসবে। ঢাকায় বিজিএমইএ’র ১৫ তলা বিশিষ্ট সদর দফতরকে অবৈধ বলে আদালত রুল জারি করেছে। এ রুলের কারণে চলতি মাসটি একটি পরীক্ষার মাস। আদালতের নির্দেশ, ১৬ জুনের মধ্য ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে। বিজিএমইএ’ নির্দেশ মানবে বলে কেউ আশা করছে না। যদি বিজিএমইএ নিজের ভবন ভাঙতে ব্যর্থ হলে, অন্যদের কেন ভবন ভাঙা উচিত?