বিশ্বনাথবাসি শান্তিতে নেই: এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের দন্ধ এখন চরমে

মোহাম্মদ আলী শিপন, বিশ্বনাথ : বিশ্বনাথে বিগত সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে উত্তপ্ত ছিল। বিগত সাড়ে চার বছরে তার প্রশনিত হয়নি। সমপ্রতি উপজেলা চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিষদের সদস্যরা দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে একে অপরকে ঘায়েল করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। এতে যেমন বিশ্বনাথে কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব নয়, তেমনি এখানে আইন শৃঙখলার পরিস্থিতির অবনতির হওয়ার আশংকা রয়েছে। জনগণ সংঘাতের পরিবর্তে তাদের কাঙ্খিত উন্নয়ন প্রত্যাশা করছেন।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান দুইজনেই দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন। দলীয় তৃণমুল নির্বাচনে মুহিবের রহমান মনোনিত হলেও দলের হাই কমান্ড প্রার্থীতা ঘোষনা করে সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরীকে। এনিয়ে তাদের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে কয়েক বার মারামারি হয়। শেষ পর্যন্ত মুহিবুর রহমান স্বতন্তপ্রার্থী থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হন। তারপর মুহিবুর রহমান উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন। সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির হেভিয়েট প্রার্থী নিখোঁজ ইলিয়াস আলী পরাজিত হওয়ার পর বিএনপি আভ্যন্তরীন কোন্দল চরম আকার ধারণ করে। তখন থেকে বড় দুটি রাজনীতি দলের ভিতরে কোন্দল শুরু হয়।
শফিকুর রহমান চৌধুরী নির্বাচিত হওয়ার পর মুহিবুর রহমানসহ আওয়ামীলীগের উপজেলা কমিটির ১৫জন নেতাকে বহিস্কার করা হয়। এতে আওয়ামীলীগ দু-ভাগে-বিভক্ত হয়ে পড়ে। মুহিবুর রহমান ইতিমধ্যে একটি জনসভায় এমপিকে কটুক্তি করে বক্তব্য দেয়ায় এমপি গ্রুপ মুহিবুর রহমানের সরকারি অফিস ও গাড়ী ভাংচুর করে। এতে এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমানের দন্ধ চরম আকার ধারণ করে। উভয় গ্রুপের মধ্যে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। প্রায় পাঁচ মাস পূর্বে ফের মুহিবুর রহমান কে বাদ দিয়ে আওয়ামীলীগের ১৪ নেতার বহিস্কার প্রত্যাহার করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা চেয়ারম্যান মাঠ ছাড়া রয়েছেন। ফলে শফিক-মুহিবের দ্বন্ধ কিছুটা শিতল রয়েছে। আওয়ামীলীগের দন্ধ কারণে বিগত ইউপি নির্বাচনে উপজেলার একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়লাভ করতে পারেনি তারা। উপজেলার আট ইউনিয়নে চারদলীয় জোট প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। গত বছরের একটি আইন শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে উপজেলা পরিষদের সকল সদস্য এমপি কে বয়কট করেন। সমপ্রতি এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবের দন্ধের ফলে পরিষদে আসা বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্ধকৃত কয়েকশত টন চাল-গম ফেরত চলে যায়। ফলে উপজেলার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ থেকে বঞ্চিত হন উপজেলাবাসি।
গত মঙ্গলবার উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে উপজেলা পরিষদের মাসিক সম্বনয় সভা বর্জন করেন পরিষদের ১০ সদস্য। এতে নতুন করে উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিব ও পরিষদের বাকি ১০ সদস্যের মধ্যে দন্ধ সৃষ্টি হয়। গত বৃহস্পতিবার পরিষদের ১০ সদস্য উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমানের ওপর অনাস্থ প্রস্তাব ইউএনও’র মাধ্যমে মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করেন। অপরদিকে, উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে পরিষদের ১০ সদস্যেকে অপসারণের দাবি জানান। বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান ও পরিষদের ১০ সদস্যের দন্ধ চরমে। জনপ্রতিনিধিদের দন্ধ নিয়ে উপজেলার সবত্রই চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
এলাকাবাসি জানান, সংসদ নির্বাচনের পর থেকে উপজেলাবাসি শান্তিতে বসবাস করতে পারছেন না। একের পর এক সংঘাত ও জনপ্রতিনিধিদের দন্ধ এখন মাথা ছাড়া দিয়ে উঠছে। ফলে আবারও সংঘাতের আশংকায় রয়েছেন উপজেলাবাসি।
তারা মনে করেন,জনপ্রতিনিধিদের দন্ধ নিরসন না হলে কাঙ্খিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হবেন উপজেলাবাসি। সংঘাত নয় শান্তি চান উপজেলাবাসি। গত বছরের ২৩ এপ্রিল নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে ত্রিমূখি সংর্ঘষে তিনজন প্রাণ হারান এবং সর্বশেষ চলিত বছরের ২০ মার্চ জামায়াতের ডাকা হরতালে পুলিশ-জামায়াত সংর্ঘষে এক জামায়াতকর্মী নিহত হন। এরপর থেকে উপজেলাবাসি আতংকের মধ্যে দিয়ে জীবন-যাপন করে আসছেন। এখন উপজেলা চেয়ারম্যান ও পরিষদের ১০ সদস্যের দন্ধের ফলে নতুন করে সংঘাতের আশংকায় রয়েছেন উপজেলাবাসি।
এব্যাপারে লামাকাজি ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া বলেন, পরিষদের নিয়মকানুনের কোন তোয়াক্ক করেননি উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি নিজে সকল কাজ করতে চান। আমরাও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। আমাদের পিঠ এখন দেয়ালে লেগে গেছে। ফলে উপজেলা চেয়ারম্যান ওপর অনাস্থা আনতে আমরা বাধ্য হই।
উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান বলেন, পরিষদের ১০ সদস্যে বিভিন্ন প্রকল্প আসলে তারা ভাগভাগি করে নিজের ইচ্ছামত কাজ করতে চায়। এতে আপত্তি করায় তারা এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে আসছে।