পল্টন রণক্ষেত্র, হেফাজত-আ’লীগ সংঘর্ষ নিহত ১

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হেফাজত কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ, হেফাজত ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট, পল্টনসহ আশপাশের এলাকায়ও। এ সময় বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পল্টন মোড়ে অবস্থান নেয়া পুলিশকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলছে হেফাজত কর্মীরা। তারা পল্টন মোড় থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে ফুটপাতের সব দোকানপাট জ্বালিয়ে দিয়েছে। সিপিবির কার্যালয়ের আশপাশে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। আগুন নেভানোর জন্য দমকল বাহিনীর গাড়ি ঘটনাস্থলে ছুটে আসার সময় তাদের বাধা দেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি ক্রমেই মারাত্মক আকার ধারণ করছে।
হেফাজত-পুলিশ-আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক ওরফে বুলেট (২৮) নামে হানিফ পরিবহনের এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
দুপুর ২টার দিকে পুরানা পল্টন মোড়ে সংঘর্ষের কবলে পড়ে তার মৃত্যু হয়।
তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে হেফাজত কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
যুবলীগ নেতা মাহিউদ্দিন মহি অভিযোগ করেন, হেফাজত কর্মীরা দুপুর একটার দিকে স্টেডিয়ামের সামনের রাস্তা দিয়ে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের মূল গেট অতিক্রম করে কার্যালয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠে পড়ে।
কার্যালয়ে উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মীরা লাঠি হাতে হেফাজত কর্মীদের প্রতিহত করে। এ সময় সেখানে কয়েক রাউন্ড গুলি ও ককটেলের বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়।
মহানগর আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক জানিয়েছেন, হেফাজতের হামলায় আওয়ামী লীগের ৫ কর্মীকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষে হেফাজতের ২ দুজন ও এক পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে।
তবে এ সময় তিন হেফাজত কর্মী নিহত হয়েছে- এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়।
এদিকে পল্টন মোড় ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় হেফাজত, জামায়াত ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হলেও মতিঝিলের শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অবস্থান নিয়েছে হেফাজতের হাজার হাজার কর্মী।
পুলিশ ও র্যাব আওয়ামী লীগ কার্যালয় ঘিরে রাখে। সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দলীয় নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। পরে হেফাজত কর্মীরা মতিঝিলের দিকে চলে গেলে বিকাল তিনটার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সংঘর্ষের পর রাজধানীর পল্টন, বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট, জিরো পয়েন্ট, দিলকুশা, গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার ও ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হেফাজত কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। এ সময় হানিফ পরিবহনের এক শ্রমিক সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক ওরফে বুলেট (২৮) নিহত হন।
বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর পুরানা পল্টনে ও বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলছিল। হেফাজতের কর্মীদের লক্ষ্য করে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়ে। হেফাজতে ইসলামের কর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। সংঘর্ষে অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও এতে আগুন দেয়া হয়।
এর আগে হেফাজত কর্মীরা লঠিসোটা হাতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের দিকে যাওয়া সময় পুলিশ বাধা দিলে তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা ওই এলাকা দিয়ে মিছিল নিয়ে যাওয়া সময় তাদের সঙ্গে এ সংঘর্ষ শুরু হয়।