না’ গঞ্জ রণক্ষেত্র : দুই বিজিবি সদস্যসহ নিহত ৬

ডেস্ক রিপোর্ট : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকায় হেফাজত কর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় দুই বিজিবি সদস্য ও দুই পথচারীসহ ছয়জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন বিজিবি সদস্য লাভলু ও শাহআলম, পথচারী সাইফুল ইসলাম ও মাসুম। খানপুর ২০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিজিবি সদস্যদের নিহতের সত্যতা স্বীকার করেছেন।
সোমাবার ভোরে সানাড়পার এলাকার মাদানীনগর মাদ্রাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি চালানোকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ বাধে। রবিবার গভীর রাতে মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকা থেকে সরিয়ে দেয়ার পর হেফাজত কর্মীরা নারায়ণগঞ্জে আশ্রয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষকালে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি, সাংবাদিক ও পথচারীও আহত এবং হেফাজতে ইসলামের কর্মী ও পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে শহরের খানপুরের নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদের মধ্যে কয়েকজন পুলিশ ও বিজিবি সদস্যের অবস্থা আশংকাজনক। সকালে আহত পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার সময় সাইনবোর্ড এলাকায় একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাংচুর করেছে হেফাজতের কর্মীরা। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলের মাইক্রোবাসও ভাংচুর করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সকালে মাদ্রাসার মাইকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগ যুবলীগ কর্মীদের হামলার খবর প্রচার হওয়ার পর থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষকালে মাদানীনগর মাদ্রাসার বিভিন্ন কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। এ সময় বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়ছে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মৌচাক এলাকায় বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় হেফাজতের কর্মীরা। এছাড়া মহাসড়কের অন্তত ৫০ টি স্পটে হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভোরে ফজর নামাজের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকার মাদানীনগর মাদ্রাসায় তল্লাশির চেষ্টা চালায় র্যাব ও পুলিশ। এসময় মাদ্রাসার ছাত্ররা তল্লাশি অভিযানে বাধা দিলে আইনশৃঙ্খলা সদস্যরা রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। একই সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালালে শুরু হয় ত্রিমুখী সংঘর্ষ। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা মাদ্রাসার বিভিন্ন কক্ষে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এরপর মাদ্রাসার মাইকে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের মাঠে নামার আহবান জানানোর পর থেকেই সর্বত্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত অন্তত ৫০টি স্পটে শুরু হয় দফায় দফায় সংঘর্ষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বৃষ্টির মতো রাবার বুলেট ছুড়ছে বলে জানা গেছে। অদ্যাবধি কয়েক হাজার রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
গুলিবিদ্ধ এক হেফাজত কর্মীকে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ের মা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। অপর দুইজন সিদ্ধিরগঞ্জের ডাচ বাংলা ব্যাংকের সামনে ও হিরাঝিল এলাকায় মারা যায়। এছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে গুলিবিদ্ধ শতাধিক হেফাজত কর্মীকে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহত সাইফুল ইসলাম (২৫) আড়াইহাজার উপজেলার পুরিন্দা গ্রামের মৃত হাশেম কন্ট্রাকটরের পুত্র। সে সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকায় বসবাস করতো এবং ফাহিম গার্মেন্টসের শ্রমিক ছিল। সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের মধ্যকার সংঘর্ষের সময় সে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। এছাড়া শিমরাইল মোড়ের মাসুম নামক অপর এক পরিবহন কর্মীও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে।
সকালে শহরের খানপুর ২০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে বেশ কিছু আহত পুলিশ, বিজিবি, ফটো সাংবাদিক ও পথচারীকে। পুলিশ সদস্যরা হলেন হাসান, আনোয়ার, মমতাজুল, সোলেমান, জাকারিয়া, মাহবুব, ফিরোজ, তানভীর, মনির হোসেন, মোজাম্মেল হোসেন, নাঈম। এদের মধ্যে সোলেমান, জাকারিয়া ও ফিরোজের অবস্থা আশংকাজনক। তাদেরকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। বিজিবি সদস্যরা হলেন লাভলু, শাহ আলম, আবুল খায়ের, গুলজার, আলম এবং বিজিবির গোয়েন্দা শাখার আনোয়ার হোসেন। এদের মধ্যে লাভলু ও শাহ আলমকে ঢাকায় নেয়ার পথে তারা মারা যান। গুলিবিদ্ধ পথচারীরা হলেন ইমরান, সুমন ও মজিবুর রহমান, মাসুম, সালাউদ্দিন, মোজাম্মেল, আমিনুল। এদের মধ্যে মাসুম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
সংঘর্ষের সময় স্থানীয় দৈনিক দেশের আলোর ফটো সংবাদিক মোহাম্মদ কাইউমও গুরুতর আহত হয়েছে। তাকে খানপুর ২০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের মধ্যে কয়েকজনকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া গুলিবিদ্ধ একজন পথচারীকেও ঢামেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। আহত পুলিশ সদস্যদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে সাইনবোর্ড এলাকায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা একটি মাইক্রোবাস ভাংচুর করে।