গভীর রাতে যৌথ অভিযান, হেফাজতমুক্ত মতিঝিল

ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বর হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দখলে নিয়েছে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি। যৌথ বাহিনীর চর্তুমুখী অভিযানে হাজার হাজার হেফাজত নেতাকর্মীরা শেষ পর্যন্ত সরে যেতে বাধ্য হয়।
রবিবার রাত আড়াইটার দিকে শাপলা চত্বরে অবস্থানরত হেফাজতের নেতাকর্মীদের সরাতে যৌথ অভিযান শুরু হয়। রাত সোয়া তিনটার দিকে যৌথ বাহিনী মূল শাপলা চত্বর ও এর আশেপাশের সড়ক গুলো দখলে নিয়ে নেয়। পুরো এলাকা যৌথ বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে বলে উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।
যৌথ বাহিনীর অভিযানের এক ঘন্টা অথাৎ রাত সাড়ে তিনটায় নিরস্ত্র হেফাজতের নেতাকর্মীদের শাপলা চত্বর থেকে হঠিয়ে দিয়েছেন। সেখানে অবস্থানরত হাজার হাজার নেতাকর্মীদের কোনো হদিস না পাওয়ায় যৌথ বাহিনী ও গণমাধ্যম কর্মীরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
যৌথ বাহিনীর সদস্যদের সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট থেকে বাঁচতে শাপলা চত্বরে অবস্থানরত হাজার হাজার হেফাজতের নেতাকর্মীরা অলিগলিতে ঢুকে পড়েন নিরাপদ আশ্রয়ে।
রাত আড়াইটার দিকে যৌথ বাহিনী দৈনিক বাংলা, আরামবাগ, ও দৈনিক ইত্তেফাক মোড় দিয়ে অভিযান শুরু হয়। র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির প্রায় ১০-১২ হাজার সদস্য এ অভিযানে অংশ নেয়।
যৌথ বাহিনীর সদস্যদের অভিযানে পর হেফাজতের নেতাকর্মীরা শাপলা চত্বরের আশে পাশে বিভিন্ন ব্যাংক ও অফিসের ভিতরে লুকিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন।
শাপলা চত্বর যৌথ বাহিনী দখলে নেয়ার পর সেখানে বিজিবির সদস্যরা স্বশস্ত্র পাহারা দিচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশ ও র্যাবের সদস্য বিভিন্ন অলিগলিতে অভিযান শুরু করেছে।
র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির যৌথ বাহিনীর সদস্যদের রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডের আঘাতে অসংখ্য হেফাজতের নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আহতদের রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
মতিঝিলের শাপলা চত্তরের মঞ্চে যেনো আর হেফাজতের নেতাকর্মীরা অবস্থানের জন্য দখলে না নিতে পারে সেজন্য যৌথ বাহিনী মূর্হুমূর্হু ফাঁকা গুলি ছুড়ছে। যৌথ বাহিনী কোনো ভাবেই আর হেফাজতের কর্মীদের রাজপথে দাড়াতে দেবেনা।
শাপলা চত্বর ও এর আশে পাশে এখন টিয়ারশেলের ঝাঁঝে কেউ টিকতে পারছেনা। এছাড়া সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দেও কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আহত ও অসুস্থ হয়ে পড়া হেফাজতের নেতাকর্মীরা লুকিয়ে রয়েছেন।
শাপলা চত্বরের আশে পাশের বিভিন্ন ভবনে যেসব নেতাকর্মী অবস্থান করছেন তাদের অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
রাত সোয়া তিনটা পর্যন্ত এ এলাকার বিভিন্ন গলিতে লুকিয়ে থাকা হেফাজতের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে বা তাড়িয়ে দিতে অভিযান চলছে।
শাপলা চত্বর ও এর আশেপাশের এলাকায় ব্যাপক রক্ত দেখা গেছে। যেখানে সেখানে রক্ত দাগ দেখা যাচ্ছে। থোক থোক রক্তের দাগে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে গেছে পুরো এলাকা।
যৌথ বাহিনীর সদস্যরা রাত সাড়ে তিনটা দিক থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যৌথ বাহিনী হেফাজতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের জন্য চিরুনি অভিযান চালাচ্ছেন।
রাত সাড়ে তিনটার দিকে যৌথ বাহিনী দৈনিক ইত্তেফাক মোড় দিয়ে অভিসার সিনেমা হল-রাজধানী মার্কেটের দিকে ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে যাচ্ছে। যেখানে হেফাজতের নেতাকর্মীদের সন্ধান পাওয়া যাবে সেখানেই অভিযান চালাবে যৌথ বাহিনী।
যৌথ বাহিনীর অভিযানের পুরো এলাকা নিস্তব্দ হয়ে গেছে। এক কথায় পুরো রাজধানীবাসী উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় রয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা রয়েছেন চরম উৎকণ্ঠায়।
সন্ধ্যার পর থেকে মতিঝিলসহ রাজধানীর বেশীর ভাগ এলাকায় রাজপথের আলো গুলো (সোডিয়াম বাল্ব) বন্ধ করে দেয়া হয়। অন্ধকারে হাবুডাবু খাওয়া মতিঝিল এলাকায় ভারি অস্ত্রের-স্বস্ত্রের ভয়াবহ শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠছে প্রতি মূর্হুত।