মাহমুদুর রহমান মুক্তি পাক : ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক

কবি বলেছিলেন, “অসত্যের কাছে নত নাহি হবে শির,
ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর।”
সত্য প্রকাশের দায়ে ক্ষমতাসীনদের জুলুম-নিপীড়নে জীবন সায়াহ্নে বেঁচে থাকা আলোচিত ব্যক্তিটির নাম মাহমুদুর রহমান। সাহসীকতাপূর্ণ সাংবাদিকতার জন্য তাকে বাংলার জুলিয়াস অ্যাসাজও বলেছেন কেউ কেউ। তবে মাহমুদুর রহমানের পরিচয় শুধুই মাহমুদুর রহমান এর বেশি প্রয়োজন নেই। দেশের সাংবাদিকতার অঙ্গণ ছাড়িয়ে পুরো বিশ্বে মাহমুদুর রহমান এখন ইতিহাসের পাতা হয়ে দাড়িয়েছেন। একজন প্রকৌশলী থেকে পত্রিকার সম্পাদক হওয়াটাকে অনেকেই ভিন্নভাবে দেখছেন। তবে আমার মতে বৃক্ষ তুমি কি ফলে পরিচয়। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদনা হাতে নেয়ার পর থেকে নয় এর অনেক আগ থেকেই মাহমুদুর রহমান সাহেবের লেখার আমি একজন ভক্ত। একজন মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার এর লেখনীতে ইতিহাসের এমন তথ্য দেখে আমি বিস্মিত হই। তবে যাই হোক সত্য প্রকাশের দুরন্ত সাহস দেখানোর জন্য মাহমুদুর রহমানকে নোবেল পুরস্কারে মনোনীত করার আওয়াজ উঠছে। অথচ আমাদের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তাদের ভূলগুলো জনসম্মুখে প্রকাশিত হোক তা তারা চায়না। তবে পরবর্তীতে তাদেরকে এর খেসারত দিতে হয় খুব লজ্জাজনক এবং চরমভাবে। ইতিহাস স্বাক্ষী ২০১৩ সাল এবং ১৯৭৪-৭৫ সালের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং আমার দেশ সম্পাদককে কারারুদ্ধ করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া এবং পত্রিকার ছাপাখানা বন্ধ করে দেয়া গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যার শামিল। আর এর মাধ্যমেই দেশে সেনাবিস্ফোরণ কিংবা গণবিস্ফোরণ হয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশও তেমন একটি অনিশ্চিত গন্তব্যে যাত্রা শুরু করেছে। যার জন্য জাতিকে চরম মূল্য দিতে হবে। এবার মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশ সংক্রান্ত সামপ্রতিক প্রসঙ্গে আসা যাক-
গণতান্ত্রিক সব মুল্যবোধকে ধূলোয় মিশিয়ে দিয়ে বর্তমান সরকার ফ্যাসিবাদী কায়দায় গত ১৯ এপ্রিল আমার দেশ সম্পাদক সময়ের সাহসী সন্তান মাহমুদুর রহমানকে কমান্ডো স্টাইলে আমার দেশ অফিস থেকে গ্রেফতার করে। একই দিনে অন্যায়ভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় আমার দেশ-এর ছাপাখানা। সরকারের এই অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী আচরণের বিরুদ্ধে দেশের নানা প্রান্তে সাধারণ জনগণ আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী উঠছে সমালোচনা ও নিন্দার ঝড়।
মাহমুদুর রহমান গ্রেফতারের পর তার মমতাময়ী মা সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, আমার ছেলেটা সংগ্রামী মানুষের অধিকারের জন্য লড়ে যাচ্ছে। এ জন্য তাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। আমার বাচ্চাটাকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিতে রাষ্ট্রশক্তির কাছে অনুরোধ করেন।
এদিকে মানবাধিকার ও আইনের শাসনের লড়াইয়ে সদাজাগ্রত পত্রিকা আমার দেশ-এর সম্পাদককে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফি বলেন, যারা আল্লাহ, রাসুল, কোরআন, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে জঘন্য কুৎসা রটনা করে মুসলমানদের মনে চরম আঘাত ও ক্ষোভ তৈরি করছে। সরকার তাদের গ্রেফতার ও সাজা দিতে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে বরং উল্টো ইসলাম বিদ্বেষীদের অপকর্ম উদঘাটন করার অপরাধে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে নাস্তিক্যবাদের পক্ষালম্বন করেছে। এটা জাতির জন্য অশনি সংকেত ছাড়া আর কিছু নয়।
আমার দেশ এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন দেশের সিনিয়র আইনজীবীরা। বিভিন্ন সংবাদপত্রে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিশিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিষ্টার রফিকুল হক বলেন, সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা আইন সঙ্গত হয়নি। পত্রিকার অফিসে হামলা চালিয়ে একজন সম্পাদককে গ্রেফতার করা গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার ওপর চরম আঘাত। এটা সভ্য সমাজে মেনে নেয়া যায় না। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকদের ওপর এ ধরনের হামলা সংবিধান ও আইনবিরোধী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারের আক্রোশ দীর্ঘদিনের। তিনি সরকারের সব দুর্নীতি, অনাচার ও দেশ বিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে দেশের সবচেয়ে সোচ্চার ও বলিষ্ঠ কণ্ঠ। তাকে গ্রেফতার ও নির্যাতন তাই সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক ও গণবিরোধী নীতিরই বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে বাকস্বাধীনতা সহ গণতান্ত্রিক সব অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে দমন নিপীড়ননীতি দ্বারা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার অশুভ পায়তারা করছে। তারই নিকৃষ্টতম প্রতিফলন মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা। ২৪ এপ্রিল মাহমুদুর রহমান মুক্তি মঞ্চ সিলেটের উদ্যোগে কোর্ট পয়েন্টে বিশাল মানববন্ধনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম বলেন, আমার দেশ এর সম্পাদককে গ্রেফতার আবারও সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্র প্রমাণ করল। একজন সম্পাদককে ১৩ দিনের রিমান্ড দেয়া নজিরবিহীন। তিনি আরো বলেন, মাহমুদুর রহমান চোর কিংবা ডাকাত নন, তিনি সমাজের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। তাকে রিমান্ডে নেয়া সম্পূর্ণ আইন বিরোধী।
বর্তমান মহাজোট সরকার স্বাধীনভাবে গণমাধ্যমকে চলার সুযোগ দেয়ার অঙ্গিকার করে ক্ষমতায় এসে তাদের সেই ওয়াদা ভুলে গেছে। তারা এখন ভিন্নমতের সংবাদ মাধ্যম দমনে উঠে পড়ে লেগেছে। এর পরিণতি কখনই ভাল হবে না। যে সরকার সংসদ সদস্যের নিজের পিস্তলের গুলিতে সংঘটিত হত্যাকান্ডের জন্য তাকে গ্রেফতার করে না, শর্টগান উচিয়ে গুলি করা বা দুর্নীতির প্রমাণ্য অভিযোগে অভিযুক্ত দলের নেতাদের আটক করে না। তার মুখে একজন সম্পাদককে এভাবে গ্রেফতার করা আইনের শাসন এটি শুনলে হাস্যকরই শোনায়।
সংবাদপত্রের কন্ঠরোধ করা কোন গণতান্ত্রিক সরকারের কাজ হতে পারে না। পত্রিকার সম্পাদককে গ্রেফতার ক্ষমতাসীন সরকার গণতন্ত্রের গলা চেপে ধরেছে। সত্য বলার দায়ে আমার দেশ সম্পাদককে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে রিমান্ডের নামে নির্যাতন এবং পত্রিকার ছাপাখানা বন্ধ করে সরকার তাদের বাকশালীর নগ্ন রূপ প্রকাশ করেছে। অতীতে আমার দেশ বন্ধ করা হয়েছিল এবং সাহসী সম্পাদককে দীর্ঘ ৯ মাস কারাগারে আটকে রেখে অকথ্য নির্যাতন করেছিল এই ফ্যাসিবাদী সরকার। এতো জুলুম নিপীড়ন করেও মাহমুদুর রহমানের সত্যের কলমকে স্তব্ধ করা যায়নি। কোনদিন স্তব্ধ করা যাবেও না। দেশের সর্বত্র মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবীতে জাতি আজ বিক্ষুব্ধ। দেশপ্রেমিক ছাত্র জনতার একটিই দাবী মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দিন, পত্রিকার ছাপাখানা খুলে দিন, আমার দেশ পড়তে চাই, মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চাই, ও মাহমুদুর রহমান মুক্তি পাক, ফ্যাসিবাদ নিপাত যাব।
(লেখক : সহ-সাধারণ সম্পাদক, আমার দেশ পাঠকমেলা, সিলেট)