‘দি ইকোনোমিস্ট’-এর রিপোর্ট: ঢাকায় নৃশংস হত্যাকান্ড

ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশে নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে ইসলামী বিক্ষোভকারীরা । রাজধানী ঢাকায় ৬ মে সকালে এ হত্যাকান্ডের দৃশ্য দেখা যায়। ঘটনাটি তখনি ঘটল যখন দেশটির সবচাইতে বড় ধরনের শিল্প বিপর্যয়ের ঘটনায় সেনাসদস্যরা মৃতের সংখ্যা গুনে যাচ্ছে। বৃটিশ প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ‘দি ইকোনোমিস্ট’ এর ‘ভায়োল্যান্স অন দ্যা স্ট্রীট’ শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্টে এ কথা বলা হয়।
রিপোর্টে এ হত্যাকান্ড ছাড়াও বাংলাদেশের চলমান অস্থিরতা, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়েও আলোচনা উঠে এসেছে।
রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকায় এ নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও হেফাজতে ইসলামীর কর্মীদের মধ্যকার সংঘর্ষে অন্ততপক্ষে ৩৭ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়।
হত্যাকান্ডে চূড়ান্ত মৃতের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে উল্লেখ করে রিপোর্টটিতে বলা হয়, দেশটির একটি বাংলা দৈনিক প্রথম আলোর হিসেবে মৃতের সংখ্যা ৪৯। আর এদের অধিকাংশই রাজধানীর বাইরের লোক। তবে হত্যাকান্ডে চূড়ান্ত মৃতের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।
রিপোর্টে বলা হয়, হত্যাকান্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকও নিহত হয়েছে তবে নিহতের বেশিরভাগই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী লোক। ঢাকার এ বিক্ষোভে দশহাজার লোক অংশ নেয় যাদেরকে ঐদিন মধ্যরাতে শহর ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের দেয়া রায় পরবর্তী সহিংসতার কথা উল্লেখ করে এতে বলা হয়, একাত্তরে হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্যাতন ও নিপীড়নের অভিযোগে দেশটির প্রধান ইসলামী দলের এক নেতার বিরুদ্ধে রায় দিলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আর এ সংঘর্ষে ৬৭ জন লোক নিহত হয়। নৃশংস এ হত্যাকান্ডের ঘটনার ঠিক দু’মাস না পেরুতেই আরেকটি হত্যাকান্ড ঘটে গেল। পুলিশ ও ইসলামপন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে বছরটিতে এ পর্যন্ত ১৫০ জন লোকের মৃত্যু হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ হয়তো ভাবছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা এ ধরনের অভিযান ও হত্যাকান্ড পরবর্তীতে ইসলামপন্থীদের আরো ক্ষুব্দ করে তোলতে পারে। সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু দাবী করেন, সরকারকে অপসারণ করতেই হেফাজত ঢাকায় এসেছিলো।
৬ মে’র ঘটনাকে ‘অস্পষ্ট” উল্লেখ করে বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে ঐ দিন কি ঘটেছিলো তা এখনো পর্যন্ত পরিষ্কার নয়। তবে সহিংসতার স্থির চিত্র ও ভিডিও ফুটেজগুলোতে ঢাকার মতিঝিলের সড়কগুলোতে রক্তাক্ত দেহ ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আর এ সহিংসতার দৃশ্য যে দুটি ইসলামপন্থী চ্যানেল সম্প্রচার করে যাচ্ছিলো তা বন্ধ করে দিয়েছে সে দেশের সরকার। এ দুটি চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়ায় দেশটিতে এখন সরকার বিরোধী মতের কেবল একটি চ্যানেল (বাংলা ভিশন) বাকি রইলো।
রিপোর্টে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসংগে বলা হয়, সামনের মাসটি হতে পারে সরকারের জন্য আরো অশান্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার ঘনিষ্টরা জানিয়েছেন, অধিকতর সহিংসতাকে এড়াতে প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধের ১ টি বা ২ টির বিচারকাজ শেষ করবেন।
বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসংগে রিপোর্টে বলা হয়, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ মুহূর্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। তারা ইতিমধ্যে আসন্ন ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের নির্বাচন বর্জনেরও হুমকি দিয়েছে।
দেশের সামনের সময়টিকে খুবই কঠিন উল্লেখ করে এতে বলা হয়, দেশবাসী যখন সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সে মুহূর্তে খালেদা জিয়ার বিপক্ষে শেখ হাসিনার অবস্থান কালো হতাশারই সংকেত দিচ্ছে। দুশ্চিন্তা, রাজপথে সহিংসতা আর চরম অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে সব দিকে। বছরের সামনের সময়টি খুবি কঠিন।