১০ বৃটেন প্রবাসী হিটলিস্টে : সতর্কতায় লন্ডন পুলিশ
নাজমুল হোসেন : ব্রিটেনে বসবাসরত দশ বাংলাদেশীকে হত্যার হুমকিতে সর্বোচ্চ পুলিশ সংস্থা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। তদন্ত কাজে হুমকি প্রাপ্ত বাংলাদেশী অ্যাক্টিভিস্ট অজান্তা দেব রায়কে তার বাসবভন থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে পুলিশ। ব্রিটেনে একটি ইসলামী চরমপন্থী সংগঠেনর হিট লিস্টে এই দশ বাংলাদেশীর নাম রয়েছে বলে জানা যায়।
জানা গেছে, ব্রিটেনে বসবাসরত এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত দশ জন বাংলাদেশীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ব্রিটেনের পুলিশ কমিশনার মি. হ্যাগোন হো ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করেছেন। এ ধরনের ধারাবাহিক হুমকি মোকাবেলা করতে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।জানা যায়, সোসাল মিডিয়া ফেসবুক এর বিভিন্ন বেনামী অ্যাকাউন্ট থেকে হুমক দেওয়া হচ্ছে। রাজধানীর অদূরে সাভারে মর্মান্তিক ভবনধসের ঘটনার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তহবিল গঠনকারীদের কয়েকজনের নাম এই লিস্টে আছে বলে আরও জানা গেছে।ইসলাম পাওয়ার রিডস’ নামের এক ফেসবুক ইউজার ম্যাসেজ পাঠিয়ে হুমকি দিয়ে বলে, আপনার মত সকল নাস্তিকদেরকে আমরা খুঁজে বের করব এবং ধ্বংস করে দিব।দশ জন ব্লগার, গায়ক এবং লেখককে নাস্তিক দাবি করেছে এই জিহাদী সংগঠন। বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহে বেশ কয়েকজন অ্যাক্টিভিস্ট খুন হওয়ার পর বিষয়টি আরও গুরুত্ব পেয়েছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ধারনা করছেন এই ইস্যু নিয়ে ব্রিটেনের যে কোন যায়গায় যে কোন ধরনের রক্তাক্ত ঘটনা ঘটতে পারে। হিট লিস্টে থাকা দশজনই শাহাবাগ গণজাগরণ আন্দোলনের পক্ষে ব্রিটেন এ কাজ করেছেন বলে জানা যায়। এ জন্য তাদের টার্গেট করা হয়েছে বলে ধারনা করছেন অনেকে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যারা নির্মম ভাবে বাংলার মানুষকে হত্যা করেছিল, ধর্ষণ করেছিল মা-বোনদেরকে, তাদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে শাহাবাগ গণজাগরন।রাজধানী ঢাকায়, শাহাবাগী এবং জামাত ইসলামের মধ্যকার দ্বন্দ্বে ফেব্রুয়ারী থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন জনপ্রিয় ব্লগার ছিলেন যে ইসলাম অবমাননার দায়ে খুন হয়েছেন।
গত রবিবার থেকে বিপুল সংখ্যাক পুলিশ লন্ডনের বাঙালী অধ্যুষিত হোয়াইটচ্যাপল এবং ইস্ট লন্ডনে যে কোন ধরণের ধংসাত্বক তৎপরতা এড়াতে কড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। এই ১০ জনের অধিকাংশই হোয়াইটচ্যাপেল এ বসবাস কিংবা কর্মস্থল থাকায় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এই স্থানটির নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে।
ইসলামিক গোষ্ঠী থেকে হুমকি প্রাপ্ত অজান্তা দেব রায়(২৭) পেশায় একজন মার্কেটিং ম্যানেজার ও কমিউনিটি রেডিও বেতার বাংলার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তাকে ইস্ট লন্ডনের তার নিজ বাড়ি থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নিয়েছে ব্রিটিশ পুলিশ। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বার্নারড হোগান।অজান্তা দেব বলেন, এটা খুবই অসহ্য। কিছু রক্ষনশীল বাঙালী আমাকে হুমকি দিচ্ছে। তারা আমাকে নাস্তিক বলেছে। কিন্তু আমি নাস্তিক নই। আমি একজন অ্যাক্টিভিস্ট।আরেকজন ইউকে অ্যাক্টিভিস্টকে ফেসবুকে হুমকি দিয়েছে একই চক্র। ‘আমাদের সাথে কোনদিন দেখা হয়নি তবে খুব দ্রুত হবে। তোমার মত কিছু অ্যাক্টিভিস্ট, ব্লগার এবং নাস্তিকদের আমরা হত্যা করেছি। তোমার সময় এসেছে, প্রস্তুত হও। আমাদের তালিকায় তোমার নাম আছে। আমরা জানি তুমি কে? আমরা চাই তোমাকে এখনই থামিয়ে দিতে নইলে খুন করতে। আমাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ইউকে অন্যন্য সংগঠন থেকে বেশী শক্তিশালী। আমরা জানি তুমি কোথায় বাস কর এবং কি করো? সুতরাং থেমে যাও নইলে খুন হতে হবে তোমাকে। – এইভাবেই হুমকী দেওয়া হচ্ছে ফেসবুকে।লন্ডন অ্যাসেম্বলি সদস্য বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত মুরাদ কোরাইশী বলেন, জিহাদীরা চিন্তা করছে নাস্তিক দেখলেই তাকে হত্যা করতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতির কালো ছায়া ব্রিটেনেও পড়েছে। এ ঘটনাকে ব্রিটেন এর জন্য বড় ধরনের হুমকি বলে মনে করেন তিনি।
পুলিশ কমিশনার মি. হ্যাগোন যে কোন ধরনে অপ্রিতিকর ঘটনা এড়াতে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং যারা এই কর্মকান্ড করছে তাদের থুঁজে বের করার নির্দেশ দেন তিনি।