কমলগঞ্জে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ১০০ হেক্টর জমির উঠতি বোরো নিমজ্জিত বাড়ছে নদী ও ছড়ার পানি : ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ১৬টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার : গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিতে উপজেলার ১০০ হেক্টর জমির উঠতি বোরো ফসল নিমজ্জিত হয়ে গেছে। দ্রুত বাড়ছে ধলাই ও লাঘাটা নদীসহ সবগুলো পাহাড়ি ছড়ার পানি। ধলাই নদীর প্রতিরড়্গা বাঁধের ১৬টি স্থান ঝুকিপূর্ণ বলে এসব স্থান দ্রত সংস্কারে অর্থ বরাদ্ধ চেয়েছে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বিশেষ করে রাতে টানা ভারী বর্ষণের ফলে কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর, আলীনগর, কমলগঞ্জ সদর, শমশেরনগর, পতনউষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি প্লাবিত হয়।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পানিতে ইসলামপুর ইউনিয়নের ১৫ হেক্টর জমির উঠতি বোরো ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। পতনউষার ইউনিয়নের ৪০ হেক্টর, শমশেরনগর ইউনিয়নের ১০ হেক্টর, আলীনগর ইউনিয়নের ১০ হেক্টর, মুন্সীবাজার ইউনিয়নের ১৫ হেক্টর, কমলগঞ্জ সদরের ১০ হেক্টর জমির উঠতি বোরো ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। তবে কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র প্লাবনের পানিতে বোরো ফসল নিমজ্জিত হওয়ার কথা স্বীকার করলেও সব মিলিয়ে ৪০ হেক্টর ফসল নিমজ্জিত হয়েছে বলে দাবি করে।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, এ বছর কমলগঞ্জে ৪১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়। তন্মধ্যে ইতোমধ্যে ১২৭০ হেক্টর জমি থেকে বোরো ফসল কাটা হয়েছে। ২৮৩০ হেক্টর জমিতে কাটার অপেক্ষায় রয়েছে উঠতি বোরো ফসল। তবে কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: শামছুদ্দীন প্লাবনে নিম্নাঞ্চলের বোরো ফসল নিমজ্জিত স্বীকার করে বলেন, সহসাই ফসলি জমি থেকে প্লাবনের পানি নেমে যাবে।
অন্যদিকে টানা বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলের পানিতে ধলাই ও লাঘাটা নদীসহ সবগুলো পাহাড়ি ছড়ার পানি দ্রুত বাড়ছে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আজিজ আহমদ চৌধুরী জানান, ধলাই নদীতে এখনও পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করেনি। তবে যে হারে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আশংকা করা যায় যে কোন মুহূর্তে পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করতে পারে। তিনি আরও জানান, গত কয়েক দিনে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ১৬টি স্থানই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব স্থান দ্রুত সংস্কার করার জন্য সংশিস্নষ্ট বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে আর্থিক সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
অপরদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাড়িঘর, রাসত্মাঘাট ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শ্রীমঙ্গলের বিলাস নদী, গোপলা নদী, বুড়বুড়িয়া ছড়া, লংলা ছড়া, কাকিয়া ছড়া ও জাগছড়াসহ বেশ কয়েকটি পাহাড়ি ছড়ার পাড় পানিতে নিমজ্জিত হয়ে তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ ও রাসত্মাঘাট। অর্ধশত বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পড়েছে সহস্রাধিক মানুষ। বেশি ক্ষতিগ্রসত্ম এলাকার মধ্যে শ্রীমঙ্গল সদর, আশিদ্রোন, মির্জাপুর, কালাপুর ও ভূনবীর ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম। বৃহস্পতিবার সরজমিনে শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের সবুজবাগ, রূপসপুর, লালবাগ, শাহীবাগ, ভাড়াউড়া, সুরভীপাড়া, সন্ধানী, নোয়াগাঁও, ইউসুফপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও পাহাড়ি ছড়ার পাড় ভেঙ্গে আবার কোথাও ছড়ার পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তলিয়ে গেছে বিসত্মীর্ণ এলাকা।
শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের সদস্য অমলেন্দু চন্দ ও মনির মিয়া জানান, অন্যান্য বছর ছড়ার পাড় ভেঙ্গে বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করতো। এবার ছড়ার পাড় ডুবে গিয়ে বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। মূলত ছড়াগুলো ভরাট হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে।
শ্রীমঙ্গল সদর ইউপি চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়, কারাপুর ইউপি চেয়ারম্যান এমএ মতলিব, আশিদ্রোন ইউপি চেয়ারম্যান রনেন্দ্র বর্ধন জহর ও ভূনবীর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ জানান, তাদের ইউনিয়নে হাইল হাওরের বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর কয়েক দিন সময় পেলেই পাকা ধান ঘরে তুলতে পারতেন কৃষকরা। বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি এলাকা ঘুরে সহায়তার আশ্বাস দিলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যনত্ম কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি।