এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ অর্জন পিতার কষ্টের টাকার ফল

মোহাম্মদ আলী শিপন, বিশ্বনাথ : অভাব অটনের পরিবার। নুন আনতে পান্তা পুরায়। কোন মতে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলে সাত সদস্যের এই পরিবারটি। কিন্তু একার পক্ষে কষ্টসাধ্য ব্যাপার হলেও শিক্ষা-কে গুরুত্ব দিয়ে চার ছেলে ও এক মেয়ে-কে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন অটোরিকসা চালক। তিনি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার সদর ইউনিয়নের কারিকোনা গ্রামের বাসিন্ধা তজম্মুল আলী। এবারের এস এস সি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তার ছেলে আফছর আহমদ জিপিএ ৫ লাভ করেছে। সে হযরত ওমর ফারুক (রহ.) মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এ পরীক্ষায় অংশ করে কর্তৃত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করে। তাঁর চার ভাই এক বোনের মধ্যে সে তৃতীয়।
জানাযায়, আফছর আহমদ মেধাবী ও প্রতিভাবান ছাত্র। সে ভাল ফলাফলে অর্জন করায় তার বাবা-মা, শিক্ষক, ভাই-বোন ও আত্বীয়জন আনন্দিত। ভাল ফলাফল অর্জনে তারা আনন্দে আত্বহারা।
আফছর আহমদের সাথে আলাপকালে সে জানায়, প্রতিদিন গড়ে দশ ঘন্টা নিয়মিত লেখাপড়া করেছে। তার সাফল্যের পিছনে বাবা-মা, শিক্ষক শিক্ষিকার অবদান সবচেয়ে বেশি। সে পড়ালেখা করে প্রকৌশলী হতে চায়। টাকা-পয়সার অভাবে অনেক সময় শিক্ষা সামগ্রী ক্রয় করতে পারেনি। যার ফলে অনেক কষ্ট করে সে লেখাপড়া করতে হয়েছে। বাবা অটোরিক্সা চালিয়ে যে টাকা উপার্জন করেন তা দিয়ে কোন মতে তাদের পরিবার চলে। সে মনে করে এই অর্জন তার পিতার কষ্টের টাকার ফল।
প্রসঙ্গত, গত ২০১১ সালে অটোরিক্সা চালকের বড় ছেলে কাওছার আহমদ এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে গোল্ডেন এ+ পেয়েছিল। ২০১২ সালে তাঁর ছোট ভাই মামুন আহমদ এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে জিপিএ ৫ অর্জন করে। বর্তমানে তারা দুইজন সিলেট শহরের ইনর্ভাশেল কলেজে লেখা পড়া করে আসছে।
এব্যাপারে অটোরিকসা চালক তজম্মুল আলী কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, প্রাইম ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে একটি সিএনজি গাড়ি ক্রয় করি। এর পূর্বে ভাড়ায় চালিত সিএনজি দিয়ে টাকা উপার্জন করে জীবন জিবিকা নির্বাহ করতাম।
তিনি বলেন, বর্তমানে লোনেন টাকা দিয়ে ক্রয় করা গাড়ি দিয়ে উপার্জন করে সাত সদস্যের পরিবার কোন মতে চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি ছেলে এবং মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক সময় তাদের চাহিদা মত লেখা-পড়ার সামগ্রী দিতে পারিনি। বড় কষ্টের মত রয়েছি। মাঝে মাঝে আত্বীয় স্বজনের কাছ থেকে টাকা এনে তাদের লেখা-পড়া খরচ আনতে হয়েছে। তিনি ছেলের সাফল্য কামনায় আল্লাহ পাকের দরবারে শোকরিয়া আদায় করেন।
ওমর ফারুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মর্তুজ আলী বলেন, আফছর আহমদ একজন মেধাবী ছাত্র। লেখাপড়া ভাল করায় তার এ সাফল্য এসেছে। আমরা তার উজ্জল ভবিষৎ কামনা করি। ইতি মধ্যে তার আর দুই ভাই বিদ্যালয় থেকে ভাল ফলাফল অর্জন করে।