টিউশনি করে কমলগঞ্জের পিতৃহীন দরিদ্র চা শ্রমিক সন্তান পিংকির সাফল্য

কুলাউড়া প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর চা বাগানের পিতৃহীন দরিদ্র চা শ্রমিক পরিবারের সন্তান পিংকী রবিদাস। বাবার মৃত্যূর পর বড় ভাই কাঠ মিস্ত্রী ও বউদী চা শ্রমিকের দৈনিক ৫৫ টাকার মজুরীর মাঝে অদম্য মেধাবী পিংকী রবিদাস লেখা পড়া থামায়নি। নিজের পড়াশুনা চালিয়ে যেতে ছাত্রদের বাড়িতে টিউশনী করে নিজের লক্ষ্যে পৌছে যেতে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় কামুদপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ লাভ করে। আলীনগর চা বাগানের মৃত হরিচরণ রবিদাস ও মা জানকি রবিদাসের চার মেয়ের মাঝে ছোট পিংকী রবিদাস। চা শ্রমিকদের সনাতনি হিন্দু সম্প্রদায়ের নিম্নবর্ণের অধিকারী রবিদাস সম্প্রদায় এমনিতেই অনগ্রসর। বাবা মারা যাবার পর একমাত্র ভাই নন্দলাল রবিদাস কাঠমিস্ত্রীর আয়ে চার বোনসহ পুরো পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করেন। স্বল্প আয়ে পরিবার চলে না এ অবস্থায় বউদী চা শ্রমিকরে দৈনিক ৫৫ টাকার মজুরীতে সংসারে কিছুটা সহায় হলেও ছোট বোন পিংকীর পড়াশুনার ব্যয় নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়ে। অদম্য এ ছাত্রী বাধ্য হয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে চা বাগানের কয়েকটি বাসায় শিশু শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণীর টিউশনী করে পড়া লেখার খরচ জোগায়। শিক্ষা উপকরণের দূর্মূল্যের বাজারে পিংকীর পড়াশুনায় উৎসাহ দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়ান বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক রাম ভজন কৈরী ও নিজ বিদ্যালয় কামুদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক চন্দন কৈরীসহ পরিচিত কয়েক ব্যক্তি। এসব ব্যক্তিরা তাকে (পিংকীকে) শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ে কিছুটা সহায়তা প্রদান করেন। অসহায় হলেও নিজের ইচ্ছে, আকাঙ্কা ও আগ্রহে অটল থেকে মেধাকে কাজে লাগিয়ে দারিদ্রতাকে পিছনে ফেলে বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকদের উৎসাহে নিয়মিত পড়াশুনা চালিয়ে যায়। তার এ চেষ্টায় সফল হয়ে পিংকী রবিদাস সম্প্রতি প্রকাশিত ২০১৩ সনের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ লাভ করে। এ প্রতিনিধির সাথে একান্তভাবে আলাপকালে পিংকী রবিদাস জানায় তার চেষ্টা, এলাকাবাসীর সহযোগিতা ও দোয়া-আশির্বাদে সে সফল হয়েছে। সে ভবিষ্যতে একজন চিকিৎসক হতে চায়। তবে তার একটাই ভয় দারিদ্রতা। তবে সবার সহযোগিতা থাকলে তার ইচ্ছে পূরণ হতে পারে।