কমলগঞ্জে মা-হারা বাসকি’কে শিক্ষার আলো দেখাচ্ছে শিখন স্কুল

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে পদ্মছড়া চা বাগান। এখানকার অধিকাংশ লোকই চা শ্রমিক। সেখানকার মানুষের অভাব যেন নিত্যসঙ্গী। তাদের নিত্য কাজের মজুরি মাত্র ৫৫ টাকা। এই অল্প টাকায় চালাতে হয় সংসার। এ বিষয়ে চা শ্রমিক অনিল যাদব জানান, যখন যা জুটে তখন তাই খাই। এমনি এক হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য বাসনত্মী সাওতাল। তার পিতা রাম সাওতাল এবং মা সিতা সাওতাল। বাসকির বয়স যখন ৬ বছর। তখন তার বই, খাতা ওব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাবার কথা। সেই সময়ে মা সিতা সাওতাল কঠিন রোগে আক্রানত্ম হয়ে চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। রেখে যান ৩ ছেলে-মেয়ে। সংসারের সকল দায়িত্ব পড়ে বাসকি সাওতালের কাঁধে। বই-খাতা নিয়ে আনন্দ-উলস্নাসের সময় সে বেছে নেয় থালা-বাসন মাজার কাজ। একদিকে মায়ের মৃত্যু অন্যদিকে বাবার সামান্য রোজগার। এমন অবস্থায় বাসকিসহ ৩ ভাই-বোনের অন্ন যোগাতে বাবাকে হিমশিম খেতে হয়। তিন বছরের ছোট বোন বাসনত্মী ও বড় ভাই খোকন সাওতাল। তাই অভারের তাড়নায় ৬ বছরের বাসকিকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয়। এভাবেই চলে যায় দুই বছর। বাসকি সাওতাল পা দেয় ৮ বছরে। স্কুল যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দরিদ্রতা প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।
এমন এক সময় আরডিআরএস বাংলাদেশ’র উদ্যোগে কমিউনিটির সহযোগিতায় পদ্মছড়া চা বাগানে শুরম্ন হয় শিখন স্কুল। বাড়ির পাশে শিখন স্কুল হওয়ায় সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় বাসকি। বাড়িতে রান্না-বান্নার কাজ সেরে বড় ভাই খোকনকে স্কুলে পাাঠিয়ে বাবাকে খাইয়ে ছোট বোন বাসনত্মীকে সাথে নিয়ে বাসকি শিখন স্কুলে যায়। স্কুলের বই-খাতা-কলম পেয়ে বাসকি এখন অনেক খুশি। তার মুখে শোনা যায় ছড়া, কবিতা ও বর্ণমালার নাম।
বাসকি ইচ্ছা প্রকাশ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ প্রতিনিধিকে জানায়, সে বড় নার্স হবে। তাদের টাকা ছিল না তাই তার মা বিনা চিকিৎসায় মারা যান। সে তো ডাক্তার হইতে পারবে না। বড় নার্স হবে। মানুষের সেবা করবে।