জুড়ীতে ভেসে গেছে মৎস্য অভয়াশ্রম : স্থাপনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন

জালাল আহমদ : মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার কণ্ঠিনালা নদীতে প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মাসখানেক আগে মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়। এরই মধ্যে পাহাড়ি ঢলে অভয়াশ্রমটির বাঁশের বেড়া ও ডালপালা ভেসে গেছে। এদিকে অনুকূল পরিবেশ না থাকায় কণ্ঠিনালায় অভয়াশ্রম স্থাপনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অধিদপ্তরের উদ্যোগে গত এপ্রিল মাসে উপজেলা সদরের কামিনীগঞ্জ বাজারের লামাবাজার এলাকায় কণ্ঠিনালা নদীর ১.৫ হেক্টর জায়গাজুড়ে মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়। বিলুপ্তপ্রায় মাছের বংশ রক্ষা ও জলজ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে হাওর অঞ্চলে মৎস্য চাষ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় ওই কাজে ব্যয় হয় প্রায় ৫ লাখ টাকা। অভয়াশ্রমের জন্য নদীর এক পাশে নির্ধারিত এলাকায় বাঁশ ও ডালপালা পুঁতে বেড়া স্থাপন করা হয়। কণ্ঠিনালা জুড়ী নদীর একটি শাখা। এটি হাকালুকি হাওরে গিয়ে মিশেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কণ্ঠিনালা নদী দিয়ে প্রবল বেগে স্রোত বইছে। অভয়াশ্রমের বেড়াসহ বেশিরভাগ বাঁশ ও ডালপালা ভেসে গেছে। এর কাছেই জাল টেনে মাছ ধরছেন কিছু লোক। এলাকাবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শুষ্ক মৌসুমে পানি কমতে শুরম্ন করলে দুর্বৃত্তরা মাছ নিধনের জন্য কণ্ঠিনালা নদীর উজানে বিষ ঢেলে দেয়। এতে বিভিন্ন জাতের মৃত ও অর্ধমৃত মাছ নদীতে ভেসে ওঠে। প্রতি বছর কয়েক দফা এ ধরণের ঘটনা ঘটে। এছাড়া কণ্ঠিনালার উজানের তীরবর্তী কয়েকটি চা বাগানে বিভিন্ন ধরণের কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। বৃষ্টির পানির সঙ্গে তা গড়িয়ে নদীতে পড়ে।
ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যা- জেনেটিকস বিভাগের অধ্যাপক মোসত্মফা আলী রেজা হোসেন মুঠোফোনে বলেন, নদীর যেখানে স্রোত বেশি, সেখানে অভয়াশ্রম টিকবে না। এছাড়া পলিতে জায়গাটা ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাবে। বিষ প্রয়োগে স্বাভাবিকভাবেই নদীর পরিবেশ দূষিত হবে। মাছের প্রজনন বাধাগ্রসত্ম হবে। তাই এ রকম নদীতে অভয়াশ্রম স্থাপনের কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি আরও জানান, অভয়াম্রমের জন্য হাওরের বিল অথবা নদীর বাঁক ভালো জায়গা। সেখানকার ২০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে মাছ ধরা বন্ধ করতে হবে।
এ ব্যাপারে জুড়ী উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আবু ইউসুফ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কণ্ঠিনালায় অভয়াশ্রমটি স্থাপন করা হয়েছে। স্রোত বা দূষণের বিষয়টি আগে ভাবা হয়নি। অভয়াশ্রমটির কাছে মাছ না ধরতে লোকজনকে সতর্ক করতে সাইনবোর্ড টানানো আছে। এরপরও কেউ এ কাজ করলে খোঁজ নিয়ে দেখব।
জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শহিদুল ইসলাম বলেন, হাওরের বিলগুলো ইজারা হয়ে যাওয়ায় সেখানে অভয়াশ্রম করা সম্ভব হয়নি। তবে ভবিষ্যতে অভয়াশ্রম স্থাপনে কোনো বরাদ্দ পেলে চিনত্মা-ভাবনা করে সিদ্ধানত্ম নেওয়া হবে।