শীর্ষ বিনিয়োগকারী দেশ হওয়ার পথে চীন-ভারত

ডেস্ক রিপোর্ট : আগামী দুই দশকের মধ্যে বিশ্ব বিনিয়োগে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশীদারিত্ব তিনগুণ হবে বলে বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রতিযোগিতায় তুলনামূলক বেশি ধনী দেশগুলোর কাছাকাছি চলে আসায় এবং লগ্নী বাজারে আরো সংহত হওয়ায় তারা এই অবস্থান অর্জন করবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এই সমস্ত দেশ ও তাদের তুলণামূলক তরুণ ও বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিশ্বপুঁজির সবচেয়ে বড় উৎস হতে যাচ্ছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে চীন ও ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি বিনোয়াগকারী দেশে পরিণত হবে।
‘গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট হরাইজনস’ (বৈশ্বিক উন্নয়ন সম্ভাবনা) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫৮ ট্রিলিয়ন ডলারের বর্তমান বিশ্বপুঁজিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর এক-তৃতীয়াংশ অংশীদারিত্ব বেড়ে আগামী ১৭ বছরের মধ্যে দ্বিগুণ হবে, যার সবচে’ বড় অংশই থাকবে পশ্চিম এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে।
জিডিএইচ প্রতিবেদনে পরবর্তী দুই দশকে বিশ্বে বিনিয়োগ, সঞ্চয় ও পুঁজির প্রবাহের ধরন সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়া হয়।
‘ভবিষ্যতের পুঁজি : আন্তঃনির্ভরশীল বিশ্বে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ’ শীর্ষক সর্বসাম্প্রতিক এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিশ্ব জনসংখ্যা ২০১০ সালের ৭০০ কোটি থেকে বেড়ে ২০৩০ সালে ৮৫০ কোটি হওয়ার সম্ভাবনা এবং উন্নত দেশগুলিতে দ্রুত বয়োঃবৃদ্ধি ও জনমিতিক পরিবর্তন এই কাঠামোগত পরিবর্তনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে।
সঞ্চয় ও বিনিয়োগের এই পরিবর্তিত মানচিত্র আগামী দিনে কোন মুদ্রা বিশ্ববাজারে আধিপত্য করবে তা থেকে শুরু করে নতুন লগ্নীকেন্দ্রের উদ্ভব, পুঁজির প্রবাহের ধরন ও বিনিয়োগ প্রাধান্য পর্যন্ত সব বিষেয়ের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে।
তবে নীতিনির্ধারকরা এসমস্ত পরিবর্তন মোকাবেলায় খুবই অপ্রস্তুত থেকে শুধু আগামী তিন বা ছয়মাসে কী ঘটবে তা নির্ধারণে ব্যস্ত আছেন বলে মনে করেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মতো প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের বড় চালিকা শক্তিগুলোর কী অবস্থা দাঁড়াবে, তা আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হওয়া উচিত।”
তিনি বলেন, “কিছু বিবেচনায়, বর্তমানে চলমান বিশ্ব অর্থনীতির কিছু বিপর্যয় রয়েছে, যা আসলে আগামী দিনগুলোতে বিশ্ব কী ধরনের অস্থির পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাবে তার পূর্বাভাস।”
এ সপ্তাহের শুরুতে স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর’সের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী দুই বছরের মধ্যে চীনের অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের চাহিদার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে।
২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে বিনিয়োগকৃত প্রতি ডলারের মধ্যে ৬০ সেন্টই হবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, ২০০০ সালে যা ছিল মাত্র ২০ সেন্ট। এর মধ্যে সমস্ত বিনিয়োগ কর্মকাণ্ডের ৩০ শতাংশ করবে চীন, যুক্তরাষ্ট্র করবে ১১ শতাংশ ও ভারত করবে সাত শতাংশ।
পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, আগামী দুই দশকে বিশ্বের প্রবৃদ্ধি প্রতিবছর গড়ে ২ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ হারে বাড়বে, যেখানে উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলো বছরে বাড়বে ৪ দশমিক ৮ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হারে।
দক্ষিণ-দক্ষিণ প্রবাহ হিসেবে পরিচিত উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি থেকে অন্যটিতে যত বেশি পুঁজির প্রবাহ বাড়বে ততই চীনের মুদ্রা ইউয়ান ও তার মুদ্রানীতি বাকি বিশ্বের ওপর বৃহত্তর প্রভাব ফেলবে, যা একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরো অঞ্চলের মুদ্রানীতির প্রভাব কমিয়ে দেবে।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, ২০৩০ সালের সমৃদ্ধতর বিশ্ব নির্মাণ খাতের চেয়ে সেবা খাতের চাহিদা তৈরি করবে। এর ফলে সেবা খাতে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রক্ষণশীল প্রতিবন্ধকতাগুলো কমানোর জন্য দেশগুলোর ওপর বৃহত্তর চাপ তৈরি হবে।
তবে বিশ্ব সঞ্চয়ের এই অবস্থার পরিবর্তন প্রত্যেকটি দেশে সমানভাবে বণ্টন নাও হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন এই প্রতিবেদনের প্রধান লেখক মরিজিও বুসোলো, যিনি বিশ্ব ব্যাংকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
তিনি বলেন, দেশগুলোকে অবশ্যই শিক্ষার ক্ষেত্রে সমান পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করতে হবে। কারণ বেশি আয়, সঞ্চয় ও ভবিষ্যত সম্পদের সঙ্গে শিক্ষার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
বুসোলো বলেন, “তাই, হিসাব অনুসারে উন্নয়নশীল দেশগুলোর গুরুত্ব বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও অত্যন্ত কম সময়ে অনেক কাজ করতে হবে।”