কাউয়াদীঘি হাওরের নিম্নাঞ্চলের বোরো ধান পানির নিচে

নুরুল ইসলাম শেফুল, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরের নিম্নাঞ্চলের বোরো ধান পানির নিচে। কৃষকদের কেউ আশা ছেড়ে দিয়েছেন আবার কেউ বুক পানিতে দাঁড়িয়ে ধান কেটে তোলার চেষ্টা করছেন। কৃষকদের অভিযোগ, কাশেমপুর পাম্প হাউজের নিষ্কাশন পাম্পগুলো সচল থাকলে ধান হারাতে হতো না। কর্মকর্তাদের অভিযোগ বিদ্যুৎ থাকে না। পাম্প চালু করা যায় না। ফলে হাওরের পানি বাড়ছে।
মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলা ও রাজনগর উপজেলার বোরো ধানের বড় অংশ উৎপাদিত হয় এই কাউয়াদীঘি হাওরে। গত দুই তিন দিনের টানা বর্ষণে এই হাওরের নিম্নাঞ্চলের পঁচিশ ভাগ পাকা বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কৃষকরা বুক পানিতে দাঁড়িয়ে এই ডুবে যাওয়া ধান তোলার চেষ্টা করছেন। কৃষকদের অভিযোগ, মনু নদী প্রকল্পের কাশিমপুর পাম্প হাউজের পাম্প দিয়ে হাওরের ফসল রক্ষার জন্য ভেতরের পানি বের করে দেয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতার কারণে সেই পাম্পগুলো যথা সময়ে কাজ করে না ফলে অল্প বৃষ্টি হলেই হাওরের ভেতরে পানি জমে অকাল বন্যার সৃষ্টি করে এবং অনিবার্যভাবেই ফসলহানি ঘটে।
সরজমিনে হাওর এলাকায় গেলে পাড়া শিমুল এলাকায় দেখা যায় কয়েকজন কৃষক বসত্মার মধ্যে ভিজা ধান ভরছেন। এই সময় দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক আলখাছ মিয়া (৫৫) জানান কয় দিনের বৃষ্টিতে তাদের পাকা বোর ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মাত্র অর্ধেক জমির ধান তোলা হয়েছে। এখন বাকি জমি কোমর পানির নিচে। কাটা যাচ্ছে না। এই সময় একই গ্রামের আরেক কৃষক নিকসন আহমদ (৩৫) একই কথা বলে জানান, এমনিতেই ধানের দাম কম, এছাড়া প্রথমে নষ্ট করেছে খরায় আর এখন পানি উন্নয়ন বোডের্র গাফিলতির কারণে হাওরের পানি বের করে না দেয়ায় কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তার কথা, যে পরিমাণ বৃষ্টির পানি জমে ধান তলিয়ে দিয়েছে পাম্প হাউজের কাজ ঠিক থাকলে কৃষক ধান উঠাতে পারতো। একই অভিযোগ করলেন অনেত্মহরি গ্রামের নকুল দেবনাথ। তার অভিযোগ হাওরে পানি বেড়ে তাদেরও ১৫ কিয়ার জমির পাকা ধান তলিয়ে দিয়েছে। একই অভিযোগ ইসলামপুর গ্রামের রাজু মিয়া (২৬) ও আশ্রাব মিয়া (২৮)’র। পানিতে তলিয়ে যাওয়া বুক সমান পানিতে দাঁড়িয়ে ধান কাটতে কাটতে এই দুজন জানালেন এমনিতেই কৃষকরা ধারদেনা করে ক্ষেত করে। ঠিকমতো খরচের টাকাও উঠে না। তারপর যদি সামান্য বৃষ্টির পানিই পাম্প দিয়ে বের করে না দেয় পাম্প হাউজের লোকজন তাহলে আমরা যাবো কোথায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডে মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. হোসাইন জানান- বিদ্যুৎ সব সময় না থাকায় হাওরের পানি বের করা যাচ্ছে না। তাছাড়া ব্যবহার উপযোগী ভোল্টেজ না পাওয়ায় অনেক সময় ৭টি পাম্প চালু করা যায় না। তাই পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।