ঢাকায় র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ২

ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীর উত্তরায় র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। র্যাব-১ চেকপোষ্ট পরিচালনাকালে দুটি বিদেশী পিস্তল, ৬ রাউন্ড তাজা গুলি, ৬টি গুলির খোসা, দুটি চাপাতি, একটি ছুরি, একটি হাতুড়ি ও হত্যাকা- বে্যবহৃত স্টিলের জিআই তার ও একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার গভীর রাতে এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
র্যাব-১ সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে উত্তরাস্থ ‘মাস্কট প্লাজা’ সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে র্যাবের টহলদল নিয়মিত চেকপোস্ট পরিচালনাকালে একটি দ্রুতগামী প্রাইভেটকারকে চ্যালেঞ্জ করে। প্রাইভেটকারটি দ্রুত উত্তরার ১১নং সেক্টরের দিকে পালানোর সময় টহল দলটি ধাওয়া করে। একপর্যায়ে প্রাইভেটকারটি থেকে র্যাবের টহল দলকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। টহল দলের র্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছুড়ে।
উভয়পক্ষের গুলিবর্ষণের একপর্যায়ে প্রাইভেটকারটি উত্তরা পশ্চিম থানার ১১নং সেক্টরে সোনারগাঁও রোডে থেমে যায় এবং তাৎক্ষণিক প্রাইভেটকারটির দরজা খুলে গাড়ি থেকে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী দলের দুজন সদস্য পালিয়ে যায়। টহল দলে উপস্থিত র্যাব সদস্যরা প্রাইভেটকারটি (ঢাকা মেট্রো-গ-১১-৪৮৬৮) আটক করে তল্লাল্লি চালিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসা ১ জন এবং গাড়ির পাশে রাস্তার উপর অপর ১ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পায়।
গাড়িটি তল্লাশির সময় বিদেশী পিস্তল দুটি, তাজা গুলি ৬ রাউন্ড, গুলির খোসা ৬টি, চাপাতি ২টি, ছুরি ১টি, হাতুড়ি ১টি ও হত্যাকা- বে্যবহৃত স্টিলের জিআই তার পাওয়া যায়।
এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের দেহ তল্লাশি চালিয়ে একজনের কাছ থেকে ট্রাস্ট ব্যাংকের একটি ক্রেডিট কার্ড ও একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং অপরজনের কাছ থেকে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়।
গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে বুধবার সকালে কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।
সূত্র জানায়, নিহতদের দেহ তল্লাশির সময় পাওয়া ক্রেডিট কার্ডটি ১৩ মে খুন হওয়া আলেয়া ফেরদৌসির নামে ইস্যুকৃত ক্রেডিট কার্ড। সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রটি মৃত আলেয়া ফেরদৌসির ট্রাস্ট ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে গত ১৩ মে টঙ্গী থানার ট্রাস্ট ব্যাংকের সেনাকল্যাণ সংস্থা শাখার এটিএম বুথ এবং গত ১৪ মে বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ট্রাস্ট ব্যাংক এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করে। ড্রাইভিং সিটে বসা নিহতের দেহ তল্লাশি করে পাওয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবিটি তার চেহারার সঙ্গে মিলে যায়। ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী তার নাম মোঃ জহিরুল ইসলাম। তার পিতার নাম আব্দুস ছালাম। গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার পূর্ব বলিয়াদহে।
পরে র্যাব আরো জানতে পারে, সে এই অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা এবং ঢাকা মহানগরীর কুখ্যাত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। তার চেহারার সঙ্গে মৃত আলেয়া ফেরদৌসির ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলনকালে সিসিটিভিতে ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ থেকে পাওয়া ছবির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়।
নিহত অপর ব্যক্তির আরেকটি ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী তার নাম মোঃ সাজু আকন্দ। পিতার নাম সামসুল আকন্দ। গ্রামের বাড়ি ঢাকার পূর্ব বাড্ডা, ৫৫১ সিকান্দারবাগ এলাকায়।
র্যাব-১ কর্মকর্তা মেজর শাফি জাস্ট নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মহাখালী, খিলক্ষেত, কাওলা, বিমানবন্দর উত্তরা, আজমপুর ও আব্দুল্লাহপুর এলাকা সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে যাত্রী পরিবহনের আবরণে ছদ্মবেশ ধারণকারী একটি সংঘবদ্ধদল বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা- পরিচালনা করে আসছে।
ওই সংঘবদ্ধ দলটি ওঁৎপেতে থেকে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নগদ টাকা, মালামাল ও ক্রেডিটকার্ড ছিনতাই করে। সংঘবদ্ধ দলটি হতভাগ্য যাত্রীদের লাঞ্ছিত, গুরুতর আহত ও হত্যা করে বিভিন্ন স্থানে মৃতদেহ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিগত ৬ মাস ধরে বর্ণিত সংঘবদ্ধ চক্রের অপরাধ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়।
উল্লেখ্য, গত ১৩ মে রেডিসন হোটেলের স্টাফ আলেয়া ফেরদৌসি তার কাওলাস্থ বাসা থেকে রেডিসন হোটেলের উদ্দেশে গমনকালে একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের হাতে অপহৃত হন। পরে ১৩ মে রাতে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার পূবাইল ইউনিয়নের মেঘডুবি গ্রামস্থ ‘কলের বাজারের’ দক্ষিণ পাশে বাইপাস সড়কে আলেয়া ফেরদৌসির ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়। আলেয়া ফেরদৌসি খুনের ঘটনায় জয়দেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয় এবং তার অভিভাবক র্যাব-১ এর কাছে খুনের ঘটনার অনুসন্ধানের জন্য আবেদন করেন।