দি ইকোনমিস্ট’র রিপোর্ট : সরকার মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে

ডেস্ক রিপোর্ট : নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে বাংলাদেশ সরকার মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে। আর এ ধরনের চাপ প্রথমেই দেশটির যে প্রতিষ্ঠানটিকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে পারে সেটি হল মিডিয়া। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দি ইকোনমিস্ট গত ২৫ মে ‘প্রেস ফ্রিডম ইন বাংলাদেশ : ইন দ্যা বেস্ট ইন্টারেস্ট অব দ্যা মিডিয়া’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করা হয়।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বর্তমান স্বাধীনতা, সরকারের অবস্থান, গণমাধ্যমের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাসহ বিভিন্ন আলোচনা উঠে আসে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে বন্ধ হওয়া মিডিয়া চালু করতে সম্পাদকদের বিবৃতির বিষয় উল্লেখ করে তাতে বলা হয়, চলতি সপ্তাহে সংবাদপত্র সম্পাদকরা এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত বিরোধীদলীয় পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করেছেন সরকারের কাছে।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সম্পাদকদের ওই বিবৃতি ‘সংবাদপত্রের স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়’ বলে তা সরাসরি প্রত্যাখান করেছেন। সম্পাদকরা মাহমুদুর রহমানের ‘আমার দেশ’ ছাপানোর পাশাপাশি বন্ধ দু’টি টিভি স্টেশনকে ফের সম্প্রচারের অনুমতির আহ্বান জানান। সম্পাদকদের ওই দাবি সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে।
সংবাদ মাধ্যমের পরিবেশ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সংবাদ মাধ্যমের পরিবেশ ক্রমেই খারাপ হয়ে ওঠায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষার সংগঠন দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস। মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোর মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় একটিমাত্র দেশ আছে যেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে সবচেয়ে কম মর্যাদা দেয়া হয়। আর সে দেশটি হল শ্রীলঙ্কা।
সম্ভাবনার পথ এখনো কিছুটা খোলা আছে উল্লেখ করে বলা হয়, নিশ্চিতভাবে বলা যায়, মিডিয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে পিছলে পড়ার আগে সম্ভাবনার কিছু পথ এখনো খোলা রয়েছে। মিডিয়াতে গভীর রাতে রাজনৈতিক টক শো হয়, যা ব্যাপক জনপ্রিয়। কিছু মিডিয়া বিকশিত হয়ে উঠছে নানাভাবে। কিন্তু গত কয়েক মাসে বিভিন্ন ঘটনায় সরকারের যে আচরণ দেখা যাচ্ছে তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর কর্তৃত্ব বৃদ্ধির মতো।
মিডিয়ার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়ে এতে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতোই বাংলাদেশের মিডিয়া এদেশের পরস্পর বিদ্বেষী দুই রাজনৈতিক দলের কোন না কোন পক্ষের সমর্থক। এ বছর শেষে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। আর একে কেন্দ্র করে সামনের পরিস্থিতি আরো কঠোরতর হয়ে উঠছে।
প্রতিবেদনে আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমান সর্ম্পকে বলা হয়, মাহমুদুর রহমান একজন ব্যবসায়ী এবং বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। সরকার পত্রিকা বন্ধ করে দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত তার সম্পাদিত পত্রিকাটি হট কেকের মতোই বিক্রি হচ্ছিল। কয়েক মাসে এর প্রচার সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল ৬ গুণ। প্রতিদিন প্রত্রিকাটি বিক্রি হয়েছে ২ লাখ কপি।
এতে বলা হয়, মাহমুদুর রহমানকে আটক করা হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে। গত ডিসেম্বরে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের এক চেয়ারম্যান ও ব্রাসেলসের এক আইনজীবীর স্কাইপ সংলাপ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেছিলেন পত্রিকায়। সেখান থেকেই তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের সূত্রপাত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ রাজনীতিবিদরা মাহমুদুর রহমানের তীব্র সমালোচনা করে থাকে। কাউকে প্রভাবিত করতে তার অনেকটা অলৌকিক ক্ষমতা আছে বলে কেউ কেউ ধারনা করে থাকে। তারা মনে করে, তিনি যে কোন বিষয়ে জনগণকে উসকে দেয়ার বিশাল ক্ষমতা রাখেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মাহমুদুর রহমানকে আটক করার আগের দিন ‘আমার দেশ’ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের আমলের ঘটনাবলী সম্পর্কে মার্কিন দূতাবাসের কূটনৈতিক তারবার্তা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে। বলা হয়, উইকিলিকস-এ প্রকাশিত গোপন বার্তা সিরিজ আকারে তারা বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করবে। এর শিরোনাম হবে ‘মুজিব: দ্য নিউ মুঘল’।
উইকিলিকসের আরেকটি বার্তায় বলা হয়েছে, শেখ মুজিবের মাথায় একনায়ক হয়ে ওঠার ভূত চেপে বসেছিল। বাঙালিদের আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হয়ে তিনি ব্যক্তিগত ও বংশগত শাসন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ব্যাপকভাবে ক্ষমতা নিতে চেয়েছিলেন নিজের হাতে।
ওই তারবার্তার ভাষ্য ও মাহমুদুর রহমানের গ্রেপ্তার দেখে মনে হয় সরকার মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে দেশের ইতিহাস সম্পর্কে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি টিকিয়ে রাখতে। আর এ ধরনের চাপ প্রথমেই দেশটির যে প্রতিষ্ঠানটিকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে পারে সেটি হল মিডিয়া।