পৃথিবীর সর্বনিম্ন মজুরিতে কাজ করে বাংলাদেশের শ্রমিকরা!

ডেস্ক রিপোর্ট : পৃথিবীর সবচাইতে কম মজুরিতে কাজ করে বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকরা। শ্রমিকরা ঘন্টা প্রতি পরিশ্রমে আয়ের শতকরা ২৪ অংশ তাদের ভাগে পায়। মাসিক বেতন হিসেবে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৮ ডলার অর্থাৎ প্রায় তিন হাজার টাকার সমপরিমাণ। আর বেতনের এ পরিমাণটি পৃথিবীর অন্যান্য বড় বড় পোশাক প্রস্তুতকারী বাজারের তুলনায় একেবারেই নিম্নমানের।
শনিবার আর্ন্তজাতিক সংবাদসংস্থা ‘আল-জাজিরা’য় ‘বাংলাদেশ : দ্য কস্ট অব ফ্যাশন’ শিরোনামে বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিক ও কারখানা নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্টে এ কথা বলা হয়।
রিপোর্টে বলা হয়, সাভারে ভবন ধস প্রমাণ করে দেশটিতে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ খুবই আতংকজনক এবং সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। অথচ দেশটির লাখ লাখ লোক পোশাক কারখানার এ পরিবেশের মধ্যেই কাজ করে।
ভবন ধসের বিষয়টি পুরো পৃথিবীতে সতর্কবার্তা দিয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশ ও আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় বিষয়টিতে সচেতন অবস্থানে চলে এসেছে। আর বাংলাদেশ এ মুহূর্তে বিষয়টিতে বিভিন্ন দিক থেকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। একদিকে নগণ্য মজুরি প্রদানের জন্য শ্রমিকদের ক্ষোভ আর অপরদিকে পোশাক কারখানায় নিরাপত্তার ইস্যুতে পোশাক কেনা বন্ধ করে দিতে পারি আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
কারখানার মান উন্নয়নে শ্রীলংকার উদাহরণ টেনে রিপোর্টে বলা হয়, শ্রীলংকায় ‘ঝুঁকি মুক্ত কারখানা’ শ্লোগানে দেশটির মানুষদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। আর এটি দেশটির কারখানার উৎপাদনের মান ব্যবস্থা ও তার অবস্থানগত সুনামেরই পরিচয় বহন করে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চাইলে শ্রীলংকার এ বিষয়টি অনুসরণ করতে পারে।
রিপোর্টে বলা হয়, পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে শ্রীলংকা পৃথিবীর সবচাইতে সহজলভ্য জায়গা নাও হতে পারে। কিন্তু এর শিল্প নেতারা জানিয়েছেন, মজুরি নির্ধারনের ক্ষেত্রে তারা বিনিয়োগের মতই সমান গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
এতে বলা হয়, পোশাক বাণিজ্য বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নতুনভাবে দাঁড় করিয়েছে। পোশাক খাতে দেশটির ৪ মিলিয়ন লোক কাজ করে যার অধিকাংশই মহিলা। আর এ পোশাক খাত থেকে প্রতি বছর ১৯ বিলিয়ন ডলার আয় হয়ে থাকে।
নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের উদ্ধৃতি দিয়ে এতে বলা হয়, বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের দাসের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা এমন একটা দেশ চাই যেখানে নারীরা তাদের সৃজনশীল দক্ষতা দিয়ে দেশের সুনাম বাড়িয়ে দিবে। আমাদের তৈরী পোশাক সবাইকে খুশি করে তোলবে। আর একি সাথে তাদের যথাযথ মজুরির ব্যবস্থাও আমরা চাই।
রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশ কি পারবে পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে সঠিক একটি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আসতে? আর তাদের এ ব্যবস্থাপনা বর্তমান শিল্পের অবস্থা থেকে কতটা পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারবে। দরকষাকষির এ বিষয়টিতেই তাকিয়ে আছে সবাই।