মিয়ানমারে মুসলমান উচ্ছেদ বৌদ্ধদের পুনর্বাসন

ডেস্ক রিপোর্ট :মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে দাঙ্গার পর মুসলমান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বৌদ্ধদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সেখানে নিয়ে পুনর্বাসন করছে সেনারা। শুক্রবার এ খবর দিয়েছে অনলাইন ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর। কলকাতা থেকে এ বিষয়ে ওই পত্রিকার অনলাইনে একটি রিপোর্ট লিখেছেন শেখ আজিজুর রহমান। এর শিরোনাম ‘বুড্ডিস্টস ফ্রম বাংলাদেশ রিসেটেল ইন মিয়ানমার, রোহিঙ্গা মুসলিমস ক্রাই ফাউল’। এতে বলা হয়, ওই এলাকা ছাড়া মুসলমানরা অভিযোগ করেছে তাদেরকে মিয়ানমার থেকে তাড়াতে তাদের বসতিতে পুনর্বাসন করা হচ্ছে বৌদ্ধদের। তাদেরকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ট্রাকে করে সেখানে নিয়ে বসবাস করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে। তারা বলেছেন, সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে বৌদ্ধ পরিবারগুলো মিয়ানমারে যাচ্ছে। সেখানে রাখাইনের বৌদ্ধ গ্রুপ ও সরকারি বিভিন্ন এজেন্সি তাদেরকে পুনর্বাসনে সহায়তা করছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের স্বীকৃতি দেয় না মিয়ানমার। তাদের অভিযোগ, মিয়ানমার সরকার তাদেরকে গ্রাম থেকে বের করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের জমিজমা কেড়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশভিত্তিক রোহিঙ্গা মানবাধিকার কর্মী খিন মাউং লে বলেছেন, স্থানীয় সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের ওপর অধিক চাপ সৃষ্টির জন্য রাখাইনের রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে বাংলাদেশী বৌদ্ধদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেখানে অধিক সংখ্যায় বৌদ্ধদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে সেখানে সামপ্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, বৌদ্ধরা এখন প্রকাশ্যে বলছে তারা তাদের সেখানে আর কোন মুসলমান দেখতে চায় না। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, সামাজিক ওয়েবসাইট ফেসবুকে ইসলাম অবমাননাকর একটি ছবি পোস্ট করা নিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে হামলা শুরু হয়। এর পরপরই সংখ্যালঘু বৌদ্ধরা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে যাওয়া শুরু করে। রাখাইন রাজ্যের সরকারি মুখপাত্র উইন মুয়াং বলেছেন, সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে হামলার পর বেশ কিছু বৌদ্ধ বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের সহায়তা চায়। তিনি বলেন, তারা সবাই বলেন- বাংলাদেশে তাদের জীবন হুমকির মুখে। তারা নিরাপদে সরে যেতে চান। আমরা তাদেরকে একটি ফিরতি বার্তা পাঠাই। তাতে বলি, যতটা সম্ভব আমরা তাদের থাকার ব্যবস্থা করবো। উইন মুয়াং আরও বলেন, গত ৬ মাসে কয়েক শ’ বৌদ্ধ পরিবার সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমারে চলে গিয়েছে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছেন, আমরা মনে করছি সামনের মাসগুলোতে আরও বেশি বৌদ্ধ বাংলাদেশ থেকে চলে আসবে। তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করবো। তাদেরকে সহায়তা করবো। বৌদ্ধ নেতারা ও অন্য বিশ্লেষকরা বৌদ্ধ পরিবারগুলো মিয়ানমার চলে যাওয়ার বিষয়ে তথ্য দিলেও তারা তাদের দেশ ছাড়া নিয়ে এখনও প্রশ্ন তোলেন। বাংলাদেশ সরকার গত বছর বৌদ্ধদের ওপর সহিংসতা শুরুর পর কয়েক দিনের মধ্যে তা থামাতে সক্ষম হয়। তাদেরকে পর্যাপ্ত সাহায্য করে। বৌদ্ধ নির্যাতিতদের নিরাপত্তা দেয়। কক্সবাজারে বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের নেতা নীলোৎপল বড়ুয়া বলেছেন, গত বছর সেপ্টেম্বরের ওই হামলার পর বাংলাদেশ থেকে কোন বৌদ্ধ পরিবার দেশ ছেড়ে মিয়ানমারে যায় নি। আমাদের গ্রামে, বাড়িঘরে আক্রমণ হওয়ার পর আমরা সরকারের চমৎকার সমর্থন পেয়েছি। এখন আমরা অনিরাপদ মনে করি না। তিনি একটি সরকারি কলেজের শিক্ষক। ওই রিপোর্টে বলা হয়, ১৯৮৮ সালে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সেনাবাহিনী যখন দমন-পীড়ন শুরু করে তখন অং সান সু চি’র ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি ও অন্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতাকর্মীরা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। তবে স্থানীয় একজন সাংবাদিক বলেছেন, ২০১০ সালে মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচনের পর যেসব বৌদ্ধ বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে ছিলেন তারা মিয়ানমারে গিয়ে থাকতে পারেন। তারা এখন রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে গিয়ে উন্নত জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখছেন। এতে তাদেরকে সহায়তা করছে স্থানীয় সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা। এ জন্যই স্থানীয় বৌদ্ধরা মিয়ানমারে ফিরে যাচ্ছে। মিয়ানমারের শিতওয়ের রাজধানী রাখাইনের এক রোহিঙ্গা নেতা কাউ থিয়েন বলেছেন, রাখাইন থেকে বৌদ্ধ নেতারা ও রাজনৈতিক নেতারা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বৌদ্ধদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য বার্তা পাঠায়। তাতে তাদেরকে পুনর্বাসনের কথা বলা হয়। তাদেরকে বাড়ি ও আবাদি জমি দেয়ার লোভনীয় প্রস্তাব দেয়া হয়। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, ২০১০ সালে মিয়ানমার সরকার ৪০টি আদর্শ গ্রাম নির্মাণ করে। এর প্রতিটিতে রয়েছে ১০০ বাড়ি। মিয়ানমারের সূত্র বলেছে, বাংলাদেশ থেকে যেসব বৌদ্ধ সেখানে যাচ্ছে তাদেরকে ওই আদর্শ গ্রামে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। সরকারপন্থি স্থানীয় পত্রিকাগুলো নিয়মিত এ বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে যাচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছেন এমন একজন সরকারি কর্মকর্তা মিডিয়াকে বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব বৌদ্ধ পরিবার সেখানে যাচ্ছে তাদের প্রতি পরিবারকে মুয়াংড অথবা শিতওয়েতে একটি বাড়ি ও ২ একর করে কৃষি জমি দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেছেন, আমরা এসব লোককে সাহায্য করছি। তারা এখানে পৌঁছানোর পর তাদেরকে কয়েকদিন রাখা হচ্ছে মুয়াংড’র বাহো বৌদ্ধ মঠে। এরপর তাদেরকে বাড়ি ও কৃষি জমির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গত কয়েক মাসে আমরা ৩ থেকে ৪ হাজার বৌদ্ধকে পুনর্বাসন করেছি। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, গত বছর মে মাসে রাখাইনে দাঙ্গার পর প্রায় ২০ হাজার মুসলমান মিয়ানমার থেকে পালিয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৫০০ গিয়েছেন ভারতে। মুয়াংডুর বাড়ি থেকে এ বছরে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন মোহাম্মদ জুবায়ের। তার সঙ্গে ছিলেন ১৮ রোহিঙ্গা। তিনিও বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বৌদ্ধদের তাদের বসতিতে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। ফলে সেখানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে কোন মুসলমানের টিকে থাকা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, গত বছর দাঙ্গা শুরুর পর স্থানীয় বৌদ্ধরা তার জমি দখল করেছে। তাতে তাকে চাষ করতে দেয়া হয় না। এ কারণে অনেক রোহিঙ্গা পরিবার প্রায় অনাহারে রয়েছে। ফলে এই অবস্থা থেকে বাঁচতে আমরা পরিবার নিয়ে পালিয়েছি।