জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পথ চলা শুরু জুড়ীর প্রতিবন্ধি হাফিজ আলিমের

এম. মছব্বির আলী : ৩৪ বছরের প্রতিবন্ধি এক যুবক হাফিজ আব্দুল আলিম। তার চোখে মূখে এখন শুধু পরিবারের বৃদ্ধ পিতা-মাতা ও ভাই বোনদের নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন। আর এ স্বপ কে কাজে লাগাতে প্রতিবন্ধী হয়েও হাল ছাড়েননি কোনদিন। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি গ্রামের মাওঃ আব্দুর রাজ্জাকের ৪ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে বড় সন্তান আব্দুল আলিম। তিনি জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। তার দুটো পা ও দুটো হাত বাঁকা, হাটা চলা করতে অনেক কষ্ট হয়। কোথাও যেতে হলে হামাগুঁড়ি দিয়ে চলতে হয়। এরপরও থেমে নেই আব্দুল আলিম। তার পিতা মাওঃ আব্দুর রাজ্জাক এক সময় ইমামতি এবং সামান্য জায়গা জমি চাষ করতেন। এগুলোর আয় দিয়ে চলতো সারা পরিবার। বিগত কয়েক বছর পূর্বে বয়সের ভারে ইমামতি থেকে অবসর নেন তিনি। যার ফলে, পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচা কষ্ট হয় আলিমের পিতার। বড় সন্তান হয়ে পরিবারের এই করুন অবস্থা প্রায় সময় প্রতিবন্ধী আলিমকে ব্যথীত করতো। তিনি জানেন প্রতিবন্ধীরাও এ সমাজেরই একটি অংশ। সমাজে বাঁচতে হলে কিছু একটা করতে হবে। পরিবারের দুঃখ দূর্দশাকে কিভাবে দূর করা যায় এ প্রতিজ্ঞা নিয়ে বিগত ২০০০সালে উপজেলার গোয়ালবাড়ি হাফিজিয়া ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় ভর্তি হন তিনি। চার বছরে পুরো কোরআন শরীফ মুখস্ত করে ফেলেন আব্দুল আলিম। ২০০৪ সালে বিয়ানীবাজারের তিলপাড়া হযরত শাহ্জালাল (রহঃ) হাফিজিয়া মাদ্রাসা থেকে হিফজুল বিভাগে দাওরা পরিক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন তিনি। এরপর মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ৮ম শ্রেনী পাশ করেন। ২০১১সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে উপজেলার জুড়ী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন ৯ম শ্রেনীতে। এবছর তিনি এস এস সি পরিক্ষা দিবেন। আলাপকালে আব্দুল আলিম জানান, আমার পিতার অভাবী সংসার, তাই তার পক্ষে পরিবারের ভরন পোষন দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। অন্য দিকে আমার এবং অন্য ভাই-বোনদের লেখা পড়ার খরচ চালানো তার জন্য দূষ্কর হয়ে পড়েছে। আলিম ক্ষোভের সাথে জানান, কোন একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে লেখা পড়াসহ সংসারের হাল ধরতে পারতাম। এতদূর এগুনোর পেছনে প্রতিবন্ধী ভাতা ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতাই একমাত্র কারন বলে তিনি জানান। আলিমের পিতার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আব্দুল আলীম আমার বড় ছেলে জন্ম থেকে তার দুই হাত দুই পা অকেজো। তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের বড় ভাবনা। সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা সংস্থা ও দেশের হৃদয়বানরা যদি আমার এ প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্য হাত প্রসারিত করেন তবে আমরা চির কৃতজ্ঞ থাকবো। আলিমের ছোট বোন কুলসুমা বেগম এস এস সি পাশ করে লেখা পড়া বন্ধ। ছোট ভাই আবুল কাসেম ৭ম শ্রেনী পর্যন্ত লেখা পড়া করেছে। অপর ছোট ২ভাই রাসেল এসএসসি পাশ করেছে এবং আব্দুল মুমিন মুন্না ৬ষ্ট শ্রেনীতে অধ্যয়নরত।