মিষ্টি খাওয়াই ছেড়ে দিল তেলাপোকা !

তেলাপোকারা কয়েক কোটি বছর ধরে বিচরন করছে পৃথিবীতে। শত প্রতিকূলতায়ও তাদের বিবর্তনের এখনও অন্ত ঘটেনি৷ প্রকৃতির বৈরীতায় হোক অন্য কোন কারণে হোক ধ্বংস হয়েছে মানব সভ্যতা কিন্তু টিকে আছে তেলাপোকা। তেলাপোকার বংশ বিস্তার কোনভাবেই রুখতে পারেনি মানুষ। পৃথিবীতে বীরদর্পেই বংশ বিস্তার করে চলছে তেলাপোকা।
সম্প্রতি দেখা গেল এক বিস্ময়কর ব্যাপার। মিষ্টিতে বিষ মিশিয়ে তেলাপোকা মারার চেষ্টা করার পর মিষ্টি খাওয়াই ছেড়ে দেয় তেলাপোকা।
মিষ্টি-ময়দার সাথে নাশক মিশিয়ে ছোট ছোট বল তৈরি করে সেগুলো চৌকাঠের আশেপাশে রেখে দিলে পরদিন সকালে মৃত এবং মৃতপ্রায় তেলাপোকাদের যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের মতো পড়ে থাকতে দেখা যায়।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় একটি অ্যাপার্টমেন্টের টেস্ট কিচেনে সেই ধরনের কোনো বিষের পরীক্ষা চালানো হচ্ছিল৷ হঠাৎ দেখা যায়, বিষে আর কাজ হচ্ছে না। তেলাপোকারা বহাল-তবিয়তে বংশবৃদ্ধি করে চলেছে৷ তেলাপোকারা মেপল সিরাপ যতোই মিষ্টি হোক না কেন, তা খেলে প্রাণপাখি খাঁচাছাড়া হবার সম্ভাবনা৷
পরীক্ষাগারে দেখা গেল প্রাণহানির ভয়ে মিষ্টি খাওয়াই ছেড়ে দিল তেলাপোকা। ডায়াবেটিসের রোগীদের এতোটা আত্মসংযম থাকলে দুনিয়া থেকে ডায়াবেটিস রোগটাই উঠে যেতো!
তেলাপোকার এমন আচরণের পর প্রাণী বিজ্ঞনীরা বলেন, সাধারণ তেলাপোকাদের মধ্যে মেপল সিরাপের গ্লুকোজ এক ধরনের নিউরনকে সক্রিয় করে, যা মগজকে বলে, ‘‘কী মজা! মিষ্টি!” বিবর্তনবাদী তেলাপোকাগুলোর ক্ষেত্রে যে নিউরনগুলি সক্রিয় হয়, তারা কিন্তু মগজকে বলে: ‘‘আরে থুঃ! ও একেবারে অখাদ্য!” এই বিশেষ স্নায়ুটি শুধু ফ্লোরিডার তেলাপোকাদের মধ্যেই নয়, সুদূর পুয়ের্তো রিকো’র তেলাপোকাদের মধ্যেও পাওয়া গিয়েছে৷
তেলাপোকাদের ১৯টি দল অনুসন্ধান করে মাত্র একটি দলের মধ্যে এই মিষ্টিতে অরুচি দেখা গিয়েছে৷ সেটা বংশগত বৈশিষ্ট্যে পরিণত হতে তেলাপোকাদের ক’ প্রজন্ম সময় লাগে, তাও জানা নেই৷ গ্লুকোজ-ত্যাগী তেলাপোকারা স্বচ্ছন্দে অন্য বিষ খেয়ে ফেলে৷ তেলাপোকাদের মধ্যে সাধারণভাবে কীটনাশক প্রতিরোধের শক্তি গড়ে উঠছে, ইত্যাদি, ইত্যাদি৷
নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটির এনটোমোলজিস্ট বা কীট বিশেষজ্ঞ জুলস সিলভারম্যান তেলাপোকাদের এই সর্বাধুনিক বিবর্তনের রহস্য ভেদ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘তেলাপোকারা নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার ওস্তাদ৷ আমাদের সাথে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় তারা ভালোই লড়ছে৷” অস্ত্র প্রতিযোগিতার কথাই যখন উঠল, কতোবারই তো শোনা যায়, তেলাপোকারা নাকি পারমাণবিক যুদ্ধেও লুপ্ত হবে না, তাদের বাঁচার ক্ষমতা এমন৷