স্ত্রীকে দেখে চিনতেই পারলেন না অনুপ চেটিয়া

নিউজ ডেস্ক :: উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া নিজের স্ত্রীকে দেখে প্রথমে চিনতেই পারেনি। আর এর কারণ হচ্ছে স্ত্রীর চুল ছেলেদের মতো ছোট ছোট। আদালতের ভিতরে তিল পরিমান জায়গা নেই। তারপরও অনুপ চেটিয়াকে তার স্ত্রীর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক সিবিআই অফিসার। প্রায় দেড় দশক পরে প্রথম দেখা। আর প্রথম দর্শনেই যে নিজ স্বামীর কাছে নিজের পরিচয় দিতে হবে তা ভাবতেই পারেনি অনুপ চেটিয়ার স্ত্রী মণিকা বরা চেটিয়া। কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে।
১৯৯৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার একটি বাসা থেকে অনুপ চেটিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান এবং অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রা ও একটি স্যাটেলাইট ফোন রাখার অভিযোগে তিনটি মামলায় তাকে যথাক্রমে তিন, চার ও সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন বাংলাদেশের আদালত। ২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তার সাজার মেয়াদ শেষ হয়। প্রায় দেড় দশক পর ১১ নভেম্বর ভারত সরকারের কাছে তকে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। তার বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ এবং চাঁদাবাজির মামলা আছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জ্ঞান হওয়ার পর এই প্রথম বাবাকে দেখল ২২ বছরের জুমন। এত দিন নিজেকে কারাবন্দী ব্যক্তির সন্তান হিসেবেই দেখে এসেছে সে। বিমানবন্দর থেকে আদালত অবধি বাবাকে ঘিরে সংবাদমাধ্যম ও আমজনতার উচ্ছ্বাস দেখে তিনি অবাক।
এদিকে লফার সহ-সভাপতি প্রদীপ গগৈ নিজেও ১৮ বছর জেলে ছিলেন। এত দিন পরে পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে ভুলেননি তিনি সরাসরি হাজির হয়ে যান গুয়াহাটির সিজেএম আদালতে। কুশল বিনিময়ের পরে অনুপের সামনের ফোকলা দাঁত আর বেড়ে যাওয়া বয়স নিয়ে কিঞ্চিত হাসি-ঠাট্টা হলো।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, দীর্ঘ ২৪ বছর পরে আজ অসমে পা রাখলেন আলফার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া। ১১ নভেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ চেটিয়ার দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়। ১২ নভেম্বর দিল্লির বিশেষ সিবিআই আদালত তাকে ৬ দিনের ট্রানজিট রিমান্ড দেয়। চেটিয়া আসবেন জেনে গত কাল সকাল থেকেই তার স্ত্রী-পুত্র, এমন কী পুলিশ কর্তারাও গুয়াহাটি বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু বিকেল অবধি তিনি আসেননি। পরে আলফার তরফে জানানো হয় ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে যাত্রীবিমানে আনতে সমস্যা হয়েছিল।
গতকাল বিএসএফের বিশেষ বিমানে চেটিয়াকে গুয়াহাটি আনা হয়। বিমানবন্দরের পিছনের ভিআইপি দরজা দিয়ে ৫টি গাড়ির কনভয় তাকে নিয়ে সিজেএম আদালতে রওনা হয়। অনেক চেষ্টার পরও বিমানবন্দরে তার দেখা পাননি মণিকা দেবী ও আলফা নেতারা।
বেলা ১০টা ৪০ মিনিটে নীল জামা, কালো প্যান্ট আর লালচে চুলের চেটিয়াকে নিয়ে কনভয় সোজা ঢুকে যায় আদালত চত্বরে। সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে বিচারক সঙ্গীতা হালৈয়ের এজলাসে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানেই প্রদীব, আলফার বিদেশ সচিব শশধর চৌধুরি, অর্থ সচিব চিত্রবন হাজরিকা, সহ সেনাধ্যক্ষ রাজু বরুয়া, নেতা প্রাণজিৎ শইকিয়া এবং মণিকাদেবী চেটিয়ার সঙ্গে কথা বলেন।
বাইরে এসে প্রদীপ সংবাদমাধ্যমকে জানান, শরীরের বয়স বাড়লেও অনুপ মনের দিক থেকে একইরকম শক্ত আছেন। তার কথায়, ‘২৪ নভেম্বর আলফার সঙ্গে কেন্দ্রের শান্তি আলোচনা রয়েছে। আশা করি অনুপও বৈঠকে থাকবে। অনুপকে দেখার জন্য এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে দিল আলফা আজও সমান প্রাসঙ্গিক।’ কিন্তু আত্মসমর্পণকারী আলফার একাংশ দাবি করেছে, পরেশ বরুয়াকে না ফেরাতে পারলে আলোচনা অর্থহীন।
এদিকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, চেটিয়ার সঙ্গে কারাগার থেকেই পরেশ বরুয়া ও দৃষ্টি রাজখোয়ার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তবে কী পরেশকে ফেরাতে অনুপকে কাজে লাগাবে আলফা? প্রদীপ বলেন, ‘এত কথা হয়নি। অনুপ অবিভক্ত আলফার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং আছেন। তিনি জনতার সামনে আসতে চান। অংশ নিতে চান শান্তি আলোচনায়।’
পৌনে দু’টো নাগাদ বেরিয়ে আসেন অনুপ চেটিয়া। অপেক্ষমান জনতার দিকে হাত নেড়ে হাসতেই সিবিআই অফিসারেরা দ্রুত, মাথা চেপে তাকে গাড়িতে ঢুকিয়ে দেন। এনএসজি অফিসাররা কাউকে কাছে ঘেঁষতে দেননি। চেটিয়াকে বিমানে পুনরায় দিল্লি নিয়ে যায় সিবিআই।
১৯৮৬ সালের হত্যার ঘটনা নিয়ে ১৯৮৮ সালে একটি মামলা দায়ের করেছিল সিবিআই। ওই মামলায় সিবিআইয়ের আইনজীবী ১৪ দিনের জন্য চেটিয়াকে হেফাজতে চান। এদিকে চেটিয়ার আইনজীবি বিজন মহাজন দাবি করেন, ২০০৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মামলাটির চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছিল সিবিআই। এত বছর পরে ওই মামলায় তাকে আটকে রাখা অযৌক্তিক। দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারক চেটিয়াকে পাঁচ দিনের জন্য সিবিআইয়ের হেফাজতে দেন। আরও বলেন, অনুপ চেটিয়া অসুস্থ। তাই প্রতিদিন তার ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। ভাল খাদ্য দিতে হবে।
অনুপ চেটিয়ার মুক্তির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অন্যান্য আলোচনাপন্থী নেতার মতো আলোচনার স্বার্থে তাকেও ছাড় দেওয়া যেতে পারে। তবে এটি আদালতের বিচারাধীন বিষয়।’