‘বাংলাদেশকে অস্থির করার চেষ্টা চলছে, কিন্তু পারবেনা’
নিউজ ডেস্ক: বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, আর্ন্তজাতিক বিশ্বে আজ নানা ঘটনা ঘটছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিবার পরিকল্পনা অফিসে ঢুকে তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশকেও অস্থির করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু কোন কিছুতেই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে কেউ থামিয়ে দিতে পারবেনা।
শনিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় তোফায়েল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সোনার বাংলার স্বপ্ন, তিনি তার স্বপ্ন পূরণ করে যেতে পারেননি। আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা সোনার বাংলা গড়ার কাজ করছি।
‘বেগম খালেদা জিয়া ২০১৩ সালে অনেক আন্দোলন করেছেন আমাদের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কিন্তু পারেননি। তিনি ৯২ দিন হরতাল, হত্যা নির্যাতন, পুলিশ হত্যা সবকিছু করেছেন। কিন্তু অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারেননি। তিনি দম্ভ করে বলেছিলেন শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘরে ফিরবনা। কিন্তু খালেদা জিয়াই আদালতে আত্মসমর্পণ করে ঘরে ফিরে গিয়েছিলেন। ’ বলেন তোফায়েল।
সত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক তোফায়েল স্মৃতিচারণ করে বলেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর চরম দুর্দিনে বাবু ভাই আওয়ামী লীগের হাল নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন। ১৯৮১ সালে আমাদের নেত্রী যখন স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে দেশে ফিরলেন তখন বাবু ভাই আমাদের পাশে ছিলেন। তখন আমাদের অর্থের প্রয়োজন ছিল পাঁচ লক্ষ টাকা। রাজ্জাক ভাই এবং আমি অর্থ সংগ্রহের কাজে নেমে পিড়েছিলাম। বাবু ভাই আমাদের অর্থ দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে তিনি অকাতরে অর্থ, শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী যখন এলেন তখন আমাদের কোন গাড়ি ছিলনা। বাবু ভাই গাড়ি সংগ্রহ করে দিলেন। তখন আমরা চট্টগ্রামে এলে বাবু ভাই, কায়সার ভাই, মোশাররফ ভাইয়ের বাসায় থাকতাম। এখন যেমন এলে হোটেলে-সার্কিট হাউজে থাকি তখন সেই সুযোগ ছিলনা। আমরা নেতাদের বাসাতেই থাকতাম। আমরা যারা ঢাকায় থাকতাম, চট্টগ্রামের নেতাদের কাছে আমাদের অনেক ঋণ।
‘সত্তরের নির্বাচনে আমি মিরসরাইয়ে মোশাররফ (ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন) ভাইয়ের নির্বাচনী প্রচারণায় ছিলাম। নির্বাচনী সমাবেশ চলছিল। আমি বক্তব্য দেয়ার আগে খবর এল বঙ্গবন্ধু ফোন করেছেন। আমাকে তাড়াতাড়ি আমার বাড়িতে যেতে বলেছেন। আমার বাবা অসুস্থ। আসলে আমার বাবা মারা গিয়েছিলেন। তখন বাবু ভাইয়ের ছোট ভাই বশরুজ্জামান যিনি একাত্তরে শহীদ হয়েছেন তিনি একটি লাল গাড়িতে করে আমাকে চাঁদপুর পৌঁছে দিয়েছিলেন। এরপর থেকে বাবু ভাইয়ের পরিবারের জন্য আমার মধ্যে আলাদা একটি জায়গা তৈরি হয়। ’ আবেগাক্রান্ত হয়ে স্মৃতিময় অতীতের কথা বললেন তোফায়েল।
স্মৃতিচারণ করে তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামে এসেছিলেন। প্রথম জনসভা হয়েছিল চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে।
পাকিস্তান থেকে ফিরেও বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ফেরার পর পলোগ্রাউণ্ড ময়দানে বাংলাদেশের প্রথম জনসভা হয়েছিল। বিরাট জনসভা।ছিল।
সভাপতিত্ব করেছিলেন এম আর সিদ্দিকি সাহেব। জহুর আহমদ চৌধুরী মানপত্র পাঠ করেছিলেন। জাতীয় চার নেতা মঞ্চে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার আগে আমাকে ১০ মিনিটের জন্য বক্তৃতা করার সুযোগ দিয়েছিলেন। বাবু ভাইরা ছিলেন সেই জনসভার সংগঠক।
তিনি বলেন, বাবু ভাইয়ের জীবনের উপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। মিথ্যা মামলায় আসামি হয়ে তাকে দেশান্তরী হতে হয়েছিল। কিন্তু বাবু ভাই ছিলেন সকল দল ও মতের কাছে গ্রহণযোগ্য। ভিন্ন মতাবলম্বী, আমাদের যারা বিরোধী তারাও বাবু ভাইকে সম্মান করতেন। এজন্য যখন এরশাদ সাহেব প্রেসিডেন্ট, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিলনা তখন বাবু ভাই এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।
তোফায়েল বলেন, বাবু ভাই বেঁচে থাকলে কেবিনেট মন্ত্রী হতেন। এই একটা জিনিস তার অপূর্ণ থেকে গেছে। নেত্রী তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করেছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মধ্যে যেমন কৃতজ্ঞতাবোধ ছিল, আমাদের নেত্রীর মধ্যেও কৃতজ্ঞতাবোধ আছে। তিনি সবকিছু মনে রাখেন। আর মনে রাখেন বলেই আজ যাদের বয়স হয়ে গেছে, শেষ জীবনে তাদের অনেককেই মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন।
জননেতা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু নাগরিক স্মরণসভা কমিটি এর আয়োজন করে। কমিটির আহ্বায়ক সমাজবিজ্ঞানী ড.অনুপম সেন এতে সভাপতিত্ব করেন।
সদস্য সচিব রূপালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আবু সুফিয়ানের পরিচালনায় এতে প্রয়াতের সন্তান ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ডা.আফসারুল আমিন, সাংসদ মঈনউদ্দিন খান বাদল, ড.আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভি ও সাবিহা নাহার মুসা, সিপিবি’র জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহআলম, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এজাজ ইউসুফী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার, ইউএসটিসি’র উপাচার্য ডা.প্রভাত রঞ্জন বড়ুয়া, চট্টগ্রামের পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ডা.এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, জাসদের মহানগর শাখার সভাপতি জসিম উদ্দিন বাবুল বক্তব্য রাখেন।