গৃহবধূর রহস্যঘেরা মৃত্যু : শশুড়বাড়ির লোকজন আত্মগোপনে
নিউজ ডেস্ক : দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুরে গৃহবধূ মুন্নি দেবনাথ শিল্পীর (২৬) মৃত্যু নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। আত্মহত্যা বলে প্রচার চালালেও এটাকে পরিকল্পিত হত্যা বলেই মনে করছেন অনেকে। ঘটনার পর থেকে স্বামীসহ শশুড়বাড়ির লোকজন রয়েছেন আত্মগোপনে। এই কারণে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
সূত্র জানা যায়, নিহত মুন্নি দেব নাথ শিল্পী (২৬) উপজেলার আসামপুর গুলারকান্দি গ্রামের খেরদ দেবনাথের ছেলে লিটন দেব নাথের স্ত্রী। ৬ ডিসেম্বর তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। মুন্নীকে স্বামী ও শশুড়বাড়ির লোকজন নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
মুন্নির বোন জৈয়ন্ত বালা দেব নাথ জানান, মুন্নি প্রায়ই স্বামীর বাড়িতে নির্যাতনের শিকার হত। চলতি বছরের ২৬ জুন মুন্নী তাদে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পিতার বাড়িতে চলে আসে। পরে তাকে বুঝিয়ে আবারও স্বামীর বাড়িতে পাঠাই। মুন্নী একজন পেশাদার বিউটিশিয়ান হওয়ায় স্বামী সহ তার পরিবারের লোকজন তার কাছে প্রায়ই টাকা পয়সা চেয়ে নিত। তাদের কথামত টাকা না দিলে তার উপর নির্যাতন চালাতো। লিটন একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। তাকে মাদক থেকে বিরত রাখতে মুন্নী চেষ্টা চালাতো। কিন্তু লিটন তার কথায় কর্নপাত করতো না। মুন্নীর স্বর্ণের গহনা বিক্রি করে লিটন নেশা করায় এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে প্রায় বাক-বিতন্ডা চলতো। মুন্নী গত ২ মাস পূর্বে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করায় তার উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। গত ৬ ডিসেম্বর শনিবার স্বামী লিটন মুন্নীকে হত্যা করে ধরাধরপুর এক বিয়ের অনুষ্ঠানে চলে যায়। সেখান থেকে রাত ২টায় লিটন তার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে জানান মুন্নি তার গৃহে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
খবর শুনার পর মুন্নির পরিবারের সদস্যরা লিটনের বাড়িতে গিয়ে মুন্নির লাশ মেঝেতে দেখতে পেয়ে তাদের সন্দেহ জাগে এবং মুন্নিকে স্বামীর পরিবার হত্যা করেছে বলে তারা অভিযোগ করে। লিটনের পরিবারের লোকজন মুন্নি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল বলে নিজে আত্মহত্যা করেছে বলে জানায়। জয়ন্ত বালা আরো জানান তার বোন হত্যার লিখিত অভিযোগটি মোগলা বাজারর থানায় নিয়ে গেলে এস আই কামরুজ্জামান অভিযোগটি রহস্যজনক ভাবে গায়েব করে।
গত সোমবার সরজমিনে মুন্নীর স্বামীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়িতে শাশুড়ী শেফালী রানী দেব নাথ ছাড়া আর কেউ নেই। ঘটনার পর থেকে স্বামী লিটন, শ্বশুর খেরদ চন্দ্র দেব নাথ, ননদ জ্যোতি রানী দেব নাথ, মিথিলা রানী দেব নাথ মিথি, তৃপ্তি রানী দেব নাথ সহ পরিবারের ৫ জন পলাতক রয়েছে। মুন্নীর শাশুড়ী জানান, ঘরের বাম দিকের জানালার সানসেটের জন্য রাখা খোলা তিন সুতি রডের সাথে মুন্নী আত্মহত্যা করে। এই রডে মুন্নী কিভাবে আত্মহত্যা করলো তা মুন্নীর পরিবারের লোকজন মেনে নিতে পারছে না। গত ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারী লিটনের সাথে মুন্নীর বিয়ে হয়।
গত রোববার সকালে মোগলা বাজার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। বেলা ২টায় লাশ ময়না তদন্ত শেষে মুন্নির পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতে মুন্নির অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ সময় লিটনের পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন না।