বিএনপির সঙ্গে রহস্যময় আচরণ জামায়াতের!
নিউজ ডেস্ক: জামায়াতকে কিছুতেই বাগে আনতে পারছে না বিএনপি। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ‘রহস্যময়’ আচরণ করছে দলটি। প্রায় ৩৫টি পৌরসভায় জামায়াতের প্রার্থী টিকে গেছেন। এ নিয়ে দলটি বিএনপিকে কিছুই জানায়নি। এমনকি মনোনয়ন সমর্থনের জন্যেও তারা দিচ্ছে না কোনো তালিকা। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে জেলা বা তৃণমূল নেতারা দেখিয়ে দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের। বলছেন, কেন্দ্র থেকে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে নিলেই হবে। আবার কেন্দ্রীয় নেতারা বিএনপিকে বলছেন, বিষয়টি যেন জেলা বা তৃণমূলেই নিষ্পত্তি করে নেওয়া হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে জামায়াতের জেলা বা তৃণমূল নেতাদের সাড়া মিলছে না। ফলে বিষয়টি ঝুলে আছে দুই সপ্তাহ যাবৎ। ১৩ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। জামায়াত এখনো পরিষ্কার কোনো সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় বিএনপি নেতারা বিষয়টিকে ‘রহস্যময়’ বলেই মনে করছেন। তাঁদের সন্দেহ, সরকারের সঙ্গে তাদের হয়তো বা কোনো গোপন সমঝোতা হয়েছে। আগামীকালের মধ্যে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না জানালে জামায়াতকে কোনো ছাড় দেবে না বিএনপি। ফলে ভবিষ্যতে ২০ দলীয় জোটে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন সংশ্লিষ্ট নেতারা যে প্রতিবেদন দলীয় প্রধানের কাছে দিয়েছেন, তাতে জামায়াতের বিষয়টি ছিল। ফলে এ নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, প্রায় ৩৫ থেকে ৪০টি আসনে দলটির প্রার্থী রয়ে গেছে। তারা এ নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা করেনি। এতে স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীরা চাপে থাকবেন। আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, ২০ দলীয় জোটকে নিজেদের সঙ্গে লড়াইয়ে ব্যস্ত রাখতে সরকার এ কৌশল নিতে পারে। এতে করে তো জোটের মধ্যে কিছু সমস্যা হতেই পারে।’
স্থায়ী কমিটির বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে আরেক নেতা জানান, সেখানে জামায়াতের সঙ্গে প্রার্থিতা ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে বেশির ভাগ নেতাই ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত না নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। এ ব্যাপারে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মাদ শাহজাহান বলেন, সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কী হয়।
বিএনপির নির্বাচনী কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক নেতা জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে জামায়াতের প্রায় ৪৩ জন প্রার্থী নির্বাচনের যোগ্য হয়েছিলেন। কিন্তু পরে তা ৩৫টিতে নেমে আসে। এর অনেকগুলোতেই জামায়াতের চেয়ে বিএনপির প্রার্থী শক্তিশালী। এসব স্থানে কোনোভাবেই ছাড় দিতে রাজি নন তাঁরা। শুরুতে জামায়াতের পক্ষ থেকে ৪০-৪৫ জনের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১২টিতে ছাড় দেওয়ার কথা বলেছিল। সে সময় এও বলা হয়েছিল, যেহেতু জামায়াতের প্রার্থিতা টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম, তাই সব কিছু দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখন প্রার্থিতা টিকে যাওয়ার পর থেকে এ নিয়ে জামায়াত বিএনপির সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগই করেনি। তাঁদের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও তৃণমূল কেন্দ্রকে আর কেন্দ্র তৃণমূলকে দেখিয়ে দিয়ে দায় এড়াতে চাচ্ছেন জামায়াত নেতারা।
ওই নেতা আরো জানান, সাতক্ষীরা, বগুড়াসহ কয়েকটি পৌরসভার বিএনপি প্রার্থীরা জানিয়েছেন, তাঁরা এলাকায় যেতে না পারলেও জামায়াত প্রার্থী বা তাঁর সহযোগীরা দিব্বি নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। দলের নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ওই নেতা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, জামায়াত মাঠে থাকলে তাদের বাক্সে কিছু ভোট পড়বেই। তাতে ক্ষতি বিএনপিরই হবে। এ চিন্তাতেই হয়তো সরকার জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা করে থাকতে পারে। এমনটি হলে ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া নিয়েও শঙ্কা থাকবে।
নির্বাচনী প্রচারণার সঙ্গে জড়িত ও বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘আসন ছাড়ের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁদের যুক্তি, হামলা-মামলার কারণে তাঁরা কেন্দ্রীয়ভাবে বসে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। এ ছাড়া তাঁরা চাইলেও তো সব স্থানে ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ ওই স্থানে তাঁদের চেয়ে আমাদের যোগ্য প্রার্থী থাকতে পারে।’
জামায়াতকে বাগে আনতে না পারলেও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেকটা নমনীয় করতে পেরেছেন বিএনপি নেতারা। তিন ধাপে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তাঁরা। সর্বশেষ গতকাল যুক্ত হয়েছে মনোনয়ন ক্ষমতাপ্রাপ্ত শাহজাহান। আজ (শনিবার) তাঁর সিদ্ধান্তের পর বিদ্রোহীরা কথা না শুনলে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও।
দলের একজন সহ-দপ্তর সম্পাদক জানান, আজ (গতকাল) পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫ জনের মতো বিদ্রোহী কেন্দ্রকে কথা দিয়েছেন, ১৩ ডিসেম্বর তাঁরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন। বাকি ১৫-২০ জনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তাঁদের বেশির ভাগকে ‘ম্যানেজ’ করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। তবে তিন থেকে পাঁচজন শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন, যাঁরা কোনোভাবেই নির্বাচন থেকে সরতে রাজি হচ্ছেন না। আজ ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব তাঁদের ডেকে পাঠিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রিন্স জানান, চেয়ারপারসন আজ শনিবার কার্যালয়ে আসবেন। সেখানে কেন্দ্রীয় মনিটরিংসহ সাতটি বিভাগের জন্য টিম গঠন করা হতে পারে। আর তা সম্ভব না হলে রবিবারের মধ্যে এ কাজ শেষ করা হবে।
খবর : কালের কণ্ঠ