ফোর্বস ম্যাগাজিনে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ ব্লগার ও বিদেশি হত্যাকাণ্ড
নিউজ ডেস্ক :: ফোর্বস ম্যাগাজিনে এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ ১০ আলোচিত ঘটনায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশে ব্লগার ও বিদেশি হত্যাকাণ্ড। গত দু’বছরের মতো এবারো দক্ষিণ এশিয়ার আলোচিত ঘটনার তালিকাটি করেছেন অ্যালিসা আইরেস। এতে বাংলাদেশে ব্লগার ও বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি রয়েছে ৬ নম্বরে।
বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যার অবনতি হয়েছে। বছরের প্রথমার্ধে ব্লগারদের ওপর চাঞ্চল্যকর সিরিজ হামলা আন্তর্জাতিক শিরোনামে স্থান করে নিয়েছে। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাসে গিয়ে টার্গেটে পরিণত হন বিদেশি নাগরিকরা।
২০১৫’তে দক্ষিণ এশিয়ার আলোচিত ঘটনার শীর্ষে রয়েছে, আফগানিস্তানে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি। এরপর রয়েছে, ভারতে নরেন্দ্র মোদির চ্যালেঞ্জ, বিশ্বের সবথেকে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি ভারত, চীন ও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক কোরিডোর প্রকল্পের ঘোষণা, নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্প। এরপর ছয়ে বাংলাদেশে ব্লগার ও বিদেশি হত্যা প্রসঙ্গের পর রয়েছে, শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকসের ক্ষমতা হারানো, প্যারিসে জলবায়ু চুক্তিতে নেতৃত্বের স্থানে ভারতের আবির্ভাব, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে ছাপিয়ে সেনাপ্রধান রাহিল শরীফের উত্থান ও সবশেষে মালদ্বিপের সাবেক প্রেসিডেন্টের কারাদণ্ডের ঘটনা।
আফগানিস্তানে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি: ২০১৪ সালে ডিসেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের লড়াই মিশনের ইতি টানেন। একই কাজ করে ন্যাটো। মার্কিন সেনাদের অবস্থান প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেয়ার ভূমিকায় রূপান্তরিত হয়। ২০১৬ সালের শেষের মধ্যে সেনাদের সম্পূর্ণরূপে ফিরিয়ে নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু নতুন করে তালেবানদের উত্থান এবং ইসলামিক স্টেটের ছোট ছোট আস্তানা গড়ে ওঠার খবরে অক্টোবর মাসে পরিকল্পনা সংশোধন করেন ওবামা। আফগানিস্তানের একতার সরকার অকার্যকর হয়েই রয়েছে। এখনো তাদের পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিপরিষদ নেই। তালেবান তাদের হামলা বাড়িয়েছে। আর নিকটভবিষ্যতে নিরাপদ ও স্থিতিশীল আফগানিস্তানের আশা ক্ষীণ হয়ে গেছে। দেশটির পরিস্থিতির আরেকটি করুণ লক্ষণ হলো, বছর শেষ হতে হতে আফগানরা ২য় সর্বোচ্চ অভিবাসী জনসংখ্যায় পরিণত হয়েছে।
মোদির অগ্রযাত্রা ঢিমিয়ে গেছে: ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সফলতার সঙ্গে তার দেশকে বহির্বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করা অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু দেশে পরিবর্তিত পরিবেশের সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। মোদি বড় আকারের অর্থনৈতিক সংস্কারের সূত্রপাত করতে পারবেন বলে যে প্রত্যাশা ছিল তা অবাস্তব বলে প্রমাণিত হয়েছে। আর তার সরকার সংসদের উচ্চকক্ষে বিশৃঙ্খলায় নিজেদের অবরুদ্ধ হিসেবে আবিষ্কার করেছে।
রাজনৈতিকভাবে রাজ্যপর্যায়ে ভারতীয় জনতা পার্টির অব্যাহত অগ্রগতির আশা থমকে গেছে যখন জনপ্রিয় আম আদমি পার্টি ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি নির্বাচনে জয়ী হয়। নভেম্বরে আঞ্চলিক দলগুলোর বিরাট জোট জয়ী হয় বিহারে। বছরের দ্বিতীয়ার্ধ্বে গরুর মাংস খাওয়া সন্দেহে এক মুসলিম ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। একই ধরনের আরো ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা নিয়ে মোদির অনেক বিলম্বে দেয়া বক্তব্যে ভারত ও ভারতের বাইরে রাজনৈতিক দ্বিধাবিভক্ত বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে যে দেশটি অনেক বেশি অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছে কি না।
ভারতের অর্থনীতি বিশ্বের সবথেকে দ্রুত বর্ধনশীল, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের শীর্ষ গন্তব্য: ভারতে প্রত্যাশার পরিবর্তন হলেও আর মোদি সরকারের জন্য রাজনৈতিক সমস্যা আরো বড় আকার ধারণ করলেও, দেশটির অর্থনীতি বিশ্বের সবথেকে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। ২০১৫ সালের তৃতীয় চতুর্থাংশের চীনকে অতিক্রম করে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৪ শতাংশ। এছাড়াও, ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ভারত বিশ্বের শীর্ষ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। ২০১৫ সালের প্রথমার্ধে ভারতে এফডিআই পৌঁছায় ৩১০০ কোটি ডলারে। যা কিনা ২০১৪ সালের প্রথমার্ধের তুলনায় ছিল দ্বিগুণেরও বেশি।
‘অর্থনৈতিক কোরিডোর’ প্রকল্পের ঘোষণা চীন ও পাকিস্তানের: এপ্রিলে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পাকিস্তান সফর করেন এবং ৪৬০০ কোটি ডলারের নানা বিনিয়োগ প্রকল্পের ঘোষণা করেন। চীন পাকিস্তানের সব সময়ের বন্ধু। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়নে এপ্রিল মাসের ঘোষণা ছিল সম্পূর্ণই অন্য পর্যায়ের। বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক কোরিডোর প্রকল্পের ঘোষণা।
নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্প: ২৫শে এপ্রিল রিখটার স্কেলে ৭.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে নেপালে। ধংসস্তূপে পরিণত হয় বাসাবাড়ি আর পুরোনো ভবনগুলো। প্রায় ৯ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বাস্ত্যুচুত হয় ২৮ লাখ মানুষ। ধ্বংস হয় প্রায় ৬ লাখ বসতবাড়ি।
৬. বাংলাদেশে ব্লগার ও বিদেশি হত্যা: ২০১৫ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যার অবনতি হয়েছে। বছরের প্রথমার্ধে চাঞ্চল্যকর সিরিজ হামলা আন্তর্জাতিক শিরোনামে স্থান করে নিয়েছে। এসব হামলায় চাপাতি হাতে সন্ত্রাসীদের ছোট গ্রুপগুলো ধর্মনিরপেক্ষ, নাস্তিক ব্লগারদের হত্যা করতে টার্গেট করে। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাসে গিয়ে টার্গেটে পরিণত হন বিদেশি নাগরিকরা। অক্টোবরে শিয়া সম্প্রদায়ের একটি মিছিলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের হামলাগুলোর পর ইসলামিক স্টেট দায় স্বীকার করে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার বলেছে, এসব সহিংসতা অবশ্যই স্থানীয় দলগুলোর কাজ। বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ এখন শিরোনাম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ক্ষমতাধর রাজাপাকসেকে ক্ষমতা থেকে সরালো লঙ্কানরা: ৯ই জানুয়ারি শ্রীলঙ্কার মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসেকে পরাজিত করেন। সিরিসেনা এর আগে রাজাপাকসের মন্ত্রিপরিষদে ছিলেন। কিন্তু জানুয়ারির নির্বাচনের মাত্র দু মাস আগে সংসদের আরো ২০ জন সদস্যকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান সিরিসেনা। গঠন করেন বিরোধী জোট। পরে নির্বাচনে রাজাপাকসেকে হারিয়ে সিরিসেনার জয়কে দেখা হয়েছে শ্রীলঙ্কার গণতন্ত্রের জয় হিসেবে। সিরিসেনার অধীনে শ্রীলঙ্কা তাদের পররাষ্ট্র সম্পর্কের উন্নয়ন করেছে।
প্যারিস জলবায়ু সমঝোতায় নেতৃত্বের স্থানে আবির্ভাব ভারতের, চুক্তিতে উপনীত: এর আগের সমঝোতাগুলোতে জলবায়ু চুক্তি প্রসঙ্গে বৈশ্বিক মত যাই হোক না কেন ভারত ‘না’ বলতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু এবারের প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলনে যেই ভারত যোগ দিয়েছিল, তাদের ছিল ভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা। এর মধ্যে ছিল নতুন একটি আন্তর্জাতিক সৌর জোট গঠনের প্রস্তাব। এই প্রস্তাব ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের সঙ্গে উদ্বোধন করেন মোদি। দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সমঝোতা প্রক্রিয়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য কণ্ঠ ছিল ভারত। তাদের অগ্রাধিকারের ওপর জোর দিয়ে দেশটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার বিষয়ে মনোযোগ দেয়।
রাহিল শরীফের উত্থান, নওয়াজ শরীফের জনপ্রিয়তায় ভাটা পাকিস্তানি গণতন্ত্র অবনতির লক্ষণ: ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ভাষায়, ‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে ছাপিয়ে উঠছেন ক্ষমতাধর জেনারেল রাহিল শরীফ’। রাহিল শরীফ ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্বে থাকলেও এ বছরই তাকে দেখা গেছে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নওয়াজ শরীফের তুলনায় বেশি উজ্জ্বল ভূমিকায়।
সাবেক প্রেসিডেন্টকে কারাগারো পাঠালেন মালদ্বিপের আদালত: মালদ্বিপের নয়া গণতন্ত্রের জন্য এটা ছিল আরেকটি ধাক্কা। ২০১৫ সালে শেষ পর্যন্ত কারান্তরীণ ছিলেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ। মার্চ মাসে মালদ্বিপের একটি আদালত নাশিদকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন। তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে থাকাকালীন এক বিচারককে গ্রেফতারের আদেশ দেয়ার ঘটনায় তার পদক্ষেপ নিয়ে সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত অভিযোগ আনা হয়। নানা অনিয়মে ওই বিচারপ্রক্রিয়া ছিল ত্রুটিপূর্ণ। স্বেচ্ছাচারী আটক বিষয়ক জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ওয়ার্কিং গ্রুপ সেপ্টেম্বর মাসে নাশিদের পক্ষে মতামত দেয়।