ভোট সিলেটে, প্রচার-প্রচারণা লন্ডনে!
নিউজ ডেস্ক: প্রবাসী অধ্যুষিত টেমস নদীতীরবর্তী শহর লন্ডনের সর্বত্রই পৌর নির্বাচনের উত্তাপ। প্রবাসীরাও ঘন ঘন দেশে যোগাযোগ করছেন। সিলেট বিভাগের ১৬টি পৌরসভায় মেয়র-কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীরাও লন্ডনে বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভোট প্রার্থনা করছেন। সম্পর্কের খাতিরে অনুরোধ করছেন পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে। সাধ্যমতো টাকা-পয়সাও দিচ্ছেন নিজ নিজ প্রার্থীকে।
সিলেটকে অনেকেই ‘বাংলাদেশের লন্ডন’ বলে থাকেন। কয়েক লাখ সিলেটি বাস করেন লন্ডনে। এ কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ব্রিটেনের সঙ্গে সিলেটের সম্পর্ক ‘আত্মিক’ বলা চলে। ব্রিটেনের বিগত নির্বাচনে যেভাবে সিলেটে নির্বাচনী প্রচারণা চলেছিল, ঠিক তেমনি এবার বাংলাদেশের পৌর নির্বাচন নিয়েও ব্রিটেনে প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রবাসীরা।
লন্ডন প্রবাসী জাহেদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘প্রবাসীরা বাংলাদেশের পৌর নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে সিলেটের ১৬টি পৌরসভার বিভিন্ন প্রার্থীকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সিলেটে। বাংলাদেশের মতো লন্ডনেও পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থীর স্বজন ও সমর্থক।’
বিভাগে সিলেটে ৩টি, মৌলভীবাজারে ৪টি, হবিগঞ্জে ৫টি ও সুনামগঞ্জে ৪টি পৌরসভা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পৌরসভায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের প্রচারণায় অংশ নিতে যুক্তরাজ্য থেকে অনেক প্রবাসী দেশে ফিরেছেন।
সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী যুক্তরাজ্য যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রাবেল বলেন, ‘সিলেটের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সেতুবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। তাই সিলেটে বড় কিছু হলে এর প্রভাব সেখানেও পড়ে। যুক্তরাজ্যে বড় কিছু হলে সেটার প্রভাবও সিলেটে পড়ে। অনেক প্রবাসী আমাকে ফোন দিয়ে নির্বাচনী কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন।’ জগন্নাথপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী খলিলুর রহমান বলেন, ‘পৌর নির্বাচনের জন্য অনেক প্রবাসী দেশে এসেছেন। যারা আসতে পারেননি তারা ফোনে খবর নিচ্ছেন। প্রবাসীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।’
জগন্নাথপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও এমসি কলেজের অর্থনীতি ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ইয়াসিন আহমদ সুমন জানান, তাদের এলাকায় বেশিরভাগ মানুষ লন্ডনে বাস করেন। ওই পৌরসভায় মেয়র ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রবাসী। এ কারণে প্রবাসীরা দেশে এসেছেন। তারা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এবার প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সে দেশে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে সভা-সমাবেশও করছেন। গত মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের ছাতক পৌরসভায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান শমসুর পক্ষে লন্ডনে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছাতকবাসীর ব্যানারে ওই সভা পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস বিএনপির নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আশিকুর রহমান আশিক, প্রধান বক্তা ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সভাপতি আকতার হোসেন। লন্ডনে অবস্থানরত শতাধিক সিলেটি ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন।
গত শনিবার মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র প্রার্থী ফজলুর রহমান ফজলুর সমর্থনে যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যুক্তরাজ্যের নিউপোর্ট আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ তাহির উল্লাহ, নিউপোর্ট যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহ শাফী কাদির, সহ-সভাপতি এমএ রউফ, মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগের সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক আবদুল ওয়াহিদ বক্তব্য দেন।
শুধু মেয়র পদেই নয়, সাধারণ কাউন্সিলর পদেও অনেক যুক্তরাজ্য প্রবাসী পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীদের যুক্তরাজ্য প্রবাসী স্বজনরা নিজ এলাকায় প্রবাসীদের মধ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন।