‘ত্রিশ লাখ শহীদ হয়েছে কিনা, এই বক্তব্য রাবিশ’
নিউজ ডেস্ক : মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে ‘রাবিশ’ বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড.মিজানুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আপনার কথা বলার স্বাধীনতা আছে বলে আপনি বাংলাদেশে ৩০ লাখ শহীদ হয়েছে কিনা জানা নেই বলে বক্তব্য দেবেন ? এ ধরনের বক্তব্য রাবিশ। এগুলো প্রতিহত করতে হবে। প্রতিরোধ করতে হবে। জাতির সত্য ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক করার অধিকার কারও নেই। এই দু:সাহস হয় কিভাবে ? এটা কোন গণতন্ত্র নয়। ’
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বেগম জিয়ার নাম উল্লেখ না করে মিজানুর রহমান বলেন, কতগুলো বিষয় আছে ঐতিহাসিক সত্য। সেই স্বীকৃত মিমাসিংত বিষয়কে বিতর্কিত করা দূরভিসন্ধিমূলক। জাতীয় স্বার্থে, রাষ্ট্রীয় স্বার্থে, জনগণের ঐক্যের স্বার্থে এগুলোকে বিতর্কিত করা উচিৎ নয়। যে সংবিধানে ৩০ লাখ শহীদের কথা লেখা আছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা সংবিধানকে অবজ্ঞা করার শামিল। যিনি সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছিলেন তিনি সংবিধানের বিরুদ্ধে কিভাবে কথা বলেন ?’ বলেন মিজানুর।
গত ২১ ডিসেম্বর রাজধানীতে একটি আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, আজকে বলা হয় এত লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে, আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানারকম তথ্য আছে। তার ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আদালতে ইতোমধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে।
এর আগে বেসরকারি চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। এরপর তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
বক্তব্যে মিজানুর রহমান প্রচলিত আইনি ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেন, আইন ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে তফাৎ সৃষ্টি করছে। আইন হচ্ছে ধনীবান্ধব আর দরিদ্রবিরোধী। আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদের সঙ্গে প্রতারণা করছি।
‘একজন গরিব মানুষ আদালতে গেলে, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখেন আর সন্ধ্যা হয়ে গেলে বলেন আজ আর শুনানি হবেনা। তারপর গরিব মানুষটিকে আবারও পরদিন আসতে হয়। অথচ যদি সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ সাহেব যান ? আসুন আসুন স্যার বলে চেয়ার এগিয়ে দেন। দরিদ্র মানুষের জন্য আপনাদের কি ব্যবস্থা ? তাদের বয়স হয়না। এ ধরনের আচরণ ননসেন্স আচরণ। ’ বলেন মিজানুর।
‘গরিব মানুষ দুধের মত পবিত্র। সেই গরিব মানুষকে যদি আইন রক্ষা করতে না পারে তাহলে কিসের আইন, কিসের আইনজীবী, কিসের আইন শিক্ষা ?’
আইন অনুষদের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মক্কেলের মাথায় বারি দিয়ে কিভাবে টাকা আদায় করব, সেই শিক্ষা গ্রহণ করোনা। সেই শিক্ষাকে ঘৃণা করি। মামলাবাজ হবার জন্য আইনজীবী হওয়ার দরকার নেই। গরি মানুষকে সেবা আর সংগঠিত করতে পারবেন যিনি তার জন্যই এই পেশা।
তিনি বলেন, চরম জাতীয়তাবাদ হচ্ছে ফ্যাসিবাদ। এটাকে প্রত্যাখান করতে হবে। অনুসরণ করতে হবে আন্তর্জাতিকতাবাদ। আন্তর্জাতিকতাবাদের মধ্যেই রয়েছে জাতীয়তাবাদ।
নগরীর জামালখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ক্যাম্পাসে উপ-উপাচার্য ড.ইরশাদ কামাল খানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন নেপালের সাবেক এটর্নি জেনারেল ড.যুবরাজ সাংগ্রুলা, আইন অনুষদের সমন্বয়ক অধ্যাপক মো.জাকির হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.এম নূরুজ্জামান, ব্যবসায় অনুষদের প্রধান অধ্যাপক ড.এম আইয়ূব ইসলাম, লিবারেল আর্টস অনুষদের ডিন অধ্যাপক কাজী মোস্তাইন বিল্লাহ।