মৌলভীবাজারসহ ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
নিউজ ডেস্ক : শিল্প উদ্যোক্তাদের পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিল্প কারখানা গড়ার ক্ষেত্রে পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। শিল্পায়নের নামে যেন পরিবেশ নষ্ট না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একযোগে সরকারি-বেসরকারি ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। দেশে আরও ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। তবে, এসব অঞ্চলে শিল্প কারখানা গড়ার ক্ষেত্রে পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে, যেন পরিবেশ নষ্ট না হয়, যেন ফসলী জমি নষ্ট না হয়। দেশ উন্নতও করতে হবে। আবার পরিবেশ সুন্দরভাবে রক্ষা করাও আমাদের দরকার। সেজন্য উদ্যোক্তাদের পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার যে লক্ষ্য নিয়েছি, তা বাস্তবায়নে এসব শিল্পাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। আমাদের বাংলাদেশব্যাপী এমন অঞ্চল গড়ে তুলতে হবে। দেশে আমরা ১০০টি শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলবো।
এক্ষেত্রে সরকারি, বেসরকারি, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ, জিটুজি, পিপিপি উদ্যোগ বা প্রয়োজনীয় যেকোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার সুফল তুলে ধরে তিনি বলেন, এতে আমাদের যুব সমাজের কর্মসংস্থান হবে। কর্মক্ষম যুব সমাজ নিয়ে আমরা কাজ করবো। বিশ্ববাজারে পণ্য রফতানির জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো গড়ে তুলতে সবার সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব অঞ্চল গড়ে তুলতে যারা বেসরকরিভাবে এগিয়ে এসেছেন তাদের ধন্যবাদ। যারা জায়গা-জমি দিয়েছেন তাদেরও ধন্যবাদ। যত ধরনের সুযোগ আছে আমরা সব ধরনের সুযোগ কাজে লাগাতে চাই দেশের উন্নয়নের জন্য।
তিনি বলেন, আধুনিক শিল্পের বিকাশ ঘটানোর জন্য দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে। যত বেশি ক্রয় ক্ষমতা বাড়তে তত বেশি শিল্পের বিকাশ ঘটবে।
প্রস্তাবিত পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ অন্যান্য উন্নয়ন পরিকল্পনার কথাও এসময় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের সফলতার কথা উল্লেখ করেন।
সরকার ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বিনিয়োগবান্ধব নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। নীতিমালা করেছি। অর্থনৈতিক অঞ্চলে যেন নারী উদ্যোক্তাদের ভালো ব্যবস্থা থাকে সেই ব্যবস্থাও করবো।
বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে না এলে দেশের অর্থনীতি গতিশীল হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিভিন্ন এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। তবে তা হবে পরিকল্পিত। যেন আমাদের নদী-পরিবেশ দূষণ না হয়। যেন ঘনবসতি বারবার উঠিয়ে দিতে না হয়। যত্রতত্র যেন শিল্প কারখানা গড়ে তোলা না হয়।
শেখ হাসিনা স্মরণ করেন, একটাসময় সরকারি বিটিভি ছাড়া বেসরকারি খাতে কোনো টেলিভিশন ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বেসরকারি খাতে টেলিভিশন চালানোর সুযোগ দেয়। একটামাত্র ফোন ছিল, ফোন ধরলেও দশ, করলেও দশ টাকা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বেসরকারি খাতে মোবাইল সেবার দরজা খুলে দেয়।
দেশের অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যে সরকারি, বেসরকারি ও কোঅপারেটিভ উদ্যোগের কথা বলেছিলেন সরকার সে পথ অনুসরণ করেই এগোচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
বক্তৃতার পর আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) বাস্তবায়নে গড়ে ওঠা এ ১০টি অঞ্চলের মধ্যে চারটি সরকারি ও ছয়টি বেসরকারি। সরকারিগুলো হলো চট্টগ্রামের মিরসরাই, মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট ও বাগেরহাটের মংলা এবং কক্সবাজারের সাবরাং পর্যটন অঞ্চল। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা ছয়টি হলো নরসিংদীর পলাশে ‘এ কে খান অর্থনৈতিক অঞ্চল’, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ‘আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল’, নারায়ণগঞ্জের ‘মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক অঞ্চল’ ও ‘মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল’, গাজীপুরে ‘বে অর্থনৈতিক অঞ্চল’ এবং নারায়ণগঞ্জে ‘আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল’।