খালু ও স্ত্রীর পরকীয়া মানতে পারেনি হবিগঞ্জের হৃদয়
নিউজ ডেস্ক :: স্ত্রীকে হত্যা করে কম্বলমুড়ি দিয়ে খাটের ওপর ফেলে রেখেছিল ঘাতক স্বামী হৃদয়। এরপর রান্নাঘরের ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যা করে নিজের খালুকেও। দুই বছর মালয়েশিয়ায় থাকার কারণে স্ত্রী আসমা বেগমের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে তোলে খালু মাকসুদুর রহমান।
স্বামীর অনুপস্থিতে আসমা বেগম প্রায়ই বাইরে রাত কাটাতো মাকসুদুর রহমানের সঙ্গে। বিষয়টি জানতো মাকসুদের স্ত্রী ও তার বড় বোন হরিনাও। কিন্তু কেউই বিষয়টি জানায়নি হৃদয়কে। ক্ষোভে ও অপমানে তাই সহ্য করতে না পেরে হৃদয় হত্যা করেছে দুজনকে।
সরজমিন গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় নগরীর কোতোয়ালি থানার ফিরিঙ্গি বাজার এয়াকুবনগর এলাকায় গিয়ে প্রতিবেশী, পারিবারিক লোকজন ও পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া গেছে এমনি তথ্য। হত্যার পর পলাতক রয়েছে হৃদয়। এ ঘটনায় হৃদয়কে আসামি করে সন্ধ্যায় মামলার কথা জানান নিহত মাকসুদের স্ত্রীর বড় বোন হরিনা বেগম।
পারিবারিক সূত্র জানায়, পলাতক স্বামী হৃদয়ের গ্রামের বাড়ি সিলেটের হবিগঞ্জের বানিয়াচং এলাকায়। অন্যদিকে নিহত মাকসুদ ফিরিঙ্গি বাজার এলাকায় একটি মোবাইলের দোকানে কাজ করত। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে।
দুই বছর আগে মালয়েশিয়ায় জীবিকার তাগিদে পাড়ি দেয়ার আগে স্ত্রী আসমাকে খালু মাকসুদের বাসায় রেখে যায় সে। স্বামী না থাকার কারণে তার সঙ্গে কৌশলে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে মাকসুদ। একসময় নিজের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের কাছে ধরা পড়ে যায় বিষয়টি। মাকসুদুর রহমানের ৪ সন্তান। এদের মধ্যে বড় মেয়ে সানজিদার বয়স ১১ বছর। ঘটনার দিন বিকালে হৃদয়কে ডেকে নিয়ে সে জানায় তার বাবার সঙ্গে হৃদয়ের স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্ক আছে।
সে নিজের চোখে একদিন দেখেছে ঘরের ভেতর দরজা বন্ধ করে তারা দুজন কী যেন করেছে। এই নিয়ে তার মায়ের সঙ্গে বাবা মাকসুদুর রহমানের অনেক ঝগড়াঝাটি হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য হরিনা বেগমকেও আনা হয়। যিনি মাকসুদুর রহমানের স্ত্রীর বড় বোন।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মাকসুদ প্রায় সময় আসমা বেগমকে নিয়ে বাইরে চলে যেত। রাত কাটাতো। সংসারে অশান্তি বাড়ার একপর্যায়ে কিছুদিন আগে হৃদয় মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসে। এসময় গত মঙ্গলবার বিকালে তাকে সব জানিয়ে দেয় খালাতো বোন সানজিদা।
বিষয়টি জানতে আসমাকে প্রশ্ন করলে শুরু হয় কথাকাটাকাটি। হৃদয় আসমাকে হত্যার আগে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর ঘরের লাইট অফ করে তাকে গলাটিপে হত্যা করে। পরে স্ত্রীর লাশ কম্বল মুড়িয়ে বিছানায় ফেলে রেখে হরিনা বেগমকে জানায়, ‘ওকে খাটের ওপর ফেলে রেখেছি। উচিত শিক্ষা দিয়েছি। লাশ দেখে যাও।’
এরপর রান্নাঘরের ধারালো ছোরা নিয়ে দৌড়ে যায় মাকসুদকে হত্যার জন্য। এ সময় রাস্তার ধারে একটি গলিতে বসে চায়ের দোকানে কথা বলছিল মাকসুদ। পেছন থেকে গিয়ে হৃদয় তাকে পিঠে ছুরিকাঘাত করে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
দুটো লাশই ময়নাতদন্তের জন্য আনা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। চমেকের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই পংকজ বড়ুয়া বলেন, একটি লাশের গলায় ছাপ দেখা গেছে। আরেকজনের শরীর ক্ষতবিক্ষত। পরিবারের লোকজন জানিয়েছে দুটোই হত্যা।
এ বিষয়ে জানতে গতকাল দুপুরে কোতোয়ালি থানায় গেলে তদন্ত পরিদর্শক নূর আহমদ বলেন, নিজের স্ত্রীর সঙ্গে খালুর রাত কাটানোর বিষয়টি সহ্য করতে পারেনি হৃদয়। তাই ছুরি দিয়ে হত্যা করেছে খালুকে। আর স্ত্রীকে মেরেছে গলা টিপে।
তিনি আরও বলেন, হৃদয় পলাতক আছে। তাকে ধরার চেষ্টা চলছে। সে হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে গেছে। এই ঘটনায় পরিবারের সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
নিহত মাকসুদুর রহমানের স্ত্রীর বড় বোন হরিনা বেগম বলেন, রায়হান, সানজিদা, সাহেদ ও সাবিহা নামের তার ৪ সন্তান রয়েছে। এরপরও সে পরনারীতে আসক্ত ছিল। বিষয়টি আমরা জানতাম। ভেবেছিলাম, হৃদয় দেশে ফেরার পর এই নিয়ে একটা মীমাংসা হবে।
তিনি আরও বলেন, পরকীয়ার ঘটনা নিয়ে সংসারে অশান্তি লেগেই ছিল। কিছুদিন আগে হৃদয়কে ফোনে জানিয়েছিলাম, তোমার বউ তুমি দেশে এসে বুঝে নাও। এই নিয়ে কোনো ধরনের অশান্তি আমরা পরিবারে চাই না।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মিজানুর রহমান খান বলেন, পুলিশ বাসায় গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বেশির ভাগ লোকই বলেছে হৃদয় দুজনকে হত্যা করেছে। আমরা সবার বক্তব্য রেকর্ড করেছি। পালিয়ে যাওয়া হৃদয়ের অবস্থান জানার চেষ্টা করছি।