কবি নির্মলেন্দু গুণ ও কবি অসীম সাহার স্মৃতিতে রফিক আজাদ
সাহিত্য ডেস্ক: বহুস্বর ও সুরের কবি রফিক আজাদ গত দুই মাস যাবৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ১২ মার্চ (অনুমানিক ২:১৫-তে) মারা যান। আইসিইউ’র ডাক্তারের বরাত দিয়ে কবির ভাতিজি নীরু শামসুন্নাহার কবির বাংলামেইলকে মৃত্যুর বিষয়টি জানান।
কবির সাথে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ জানান, ‘রফিক আজাদ আমাদের নেত্রকোনায় পড়ত। ১৯৬৬ সালের কথা, জানতে পারলাম, রফিক ঢাকা হলে থাকে। কোনো এক বিকেলে তার হলে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করলাম। ওই দিন সে আর মাহবুবুল আলম ঝিনু মিলে লরেন্স ফার্লিংগেত্তি ‘আন্ডারওয়্যার’ কবিতাটি অনুবাদ করছিল। রফিক সেদিন নেত্রকোনার লোক বলে আলাদাভাবে আমাকে সমাদর করেছিল। নেত্রকোনার খোঁজখবরই আমাদের সেই দিনের গল্পের বিষয় ছিল। আমি অনেক খুশি ছিলাম, কারণ আমার মতো গোত্রহীন, কবি-যশপ্রার্থী তরুণের পক্ষে ওই সুযোগ পাওয়াটা কম সৌভাগ্যের ব্যাপার ছিল না।’
কবির সাথে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কবি অসীম সাহা জানান,‘রফিক আজাদ বাংলা কবিতার রাজপুত্র, সবচেয়ে আধুনিকতা-মনস্ক, রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, ভাষাবিষয়ে তুখোড় অনুরাগী, স্যাড জেনারেশন আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব! সকলকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশের অচেনা জগতে! তাঁর জীবনদীপ নিভে গিয়েছিলো আগেই। আজ শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে জানান দেয়া হলো। রফিক ভাইয়ের সঙ্গে আমার এতো স্মৃতির স্তূপ জড়ো হয়ে আছে যে, তা বলতে গেলে কথা শেষ হবে না। তাঁর সবচেয়ে বিপদের দিনে আমার ‘ইত্যাদি প্রিন্টার্স’ ছিলো তার সকাল-সন্ধ্যার আড্ডার স্থল। সে-সময় তাকে কেউ আশ্রয় দেয়নি। তিনি আমার এখানেই আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিলেন। এই শোকস্তব্ধ দিনে সে-ইতিহাস বর্ণনা করার মতো মনের অবস্থা নেই। আজ এই মহূর্তে (কে আর হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে)
ঈশ্বরে আমার বিশ্বাস নেই। তাই তার আত্মার শান্তি কামনা করার কোনো সুযোগ আমার নেই। শুধু বলি, রফিক ভাই, হে প্রিয় অগ্রজ, অন্যদের কথা জানি না, আমি অন্তত আপনাকে কোনোদিন ভুলবো না!’
কবি রফিক আজাদের প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে, ‘অসম্ভবের পায়ে’, ‘সীমাবদ্ধ জলে সীমিত সবুজে’, ‘চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
এ কাব্যের জন্য ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১৩ সালে একুশে পদক পান তিনি। সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন হুমায়ুন কবির স্মৃতি (লেখক শিবির) পুরস্কারসহ আরও বেশ কয়েকটি পুরস্কার।