যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই সৌদিআরবের পতন!

ফিচার ডেস্ক :: যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির কোনো এক গোপন কক্ষে তালাবদ্ধ হয়ে আছে ২৮ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট। সৌদিআরব এবং যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক যুগের সুসম্পর্ক যেকোনো মুহূর্তে নষ্ট হয়ে যেতে পারে এই গোপন রিপোর্টটি প্রকাশ পেলে। অবশ্য রিপোর্টটি না প্রকাশের ব্যাপারে এবং নাইন ইলেভেনের দুর্ঘটনা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেস যদি সৌদিআরব বিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহন করে তবে সৌদি রাজপ্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তাদের সকল সম্পত্তি বিক্রি করে দেবে বলেও হুমকি দেয়া হয়েছে। এই হুমকি দেয়ার কয়েকদিন পরেই যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সৌদিআরব সফরে যান।
মার্কিন কংগ্রেস সম্প্রতি একটি আইন পাশ করতে যাচ্ছে তার দেশের নাগরিকদের কথা চিন্তা করে। ওই প্রস্তাবিত আইনটি পাশ হলে নাইন ইলেভেনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জরিমানা আদায় করার জন্য মামলা করতে পারবে। ঠিক এক্ষেত্রেই যদি গোপন নথি প্রকাশে নাইন ইলেভেনের হামলায় সৌদিআরবের অংশগ্রহন প্রমাণ হয় তাহলে মার্কিন জনগণের মামলার শিকার হতে হবে সৌদি প্রশাসনকে। অথচ বাস্তবতা হলো, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মিত্র হলো সৌদিআরব এবং এই দেশটির সঙ্গেই নিষিদ্ধ ঘোষিত আলকায়েদা সংগঠনের যোগাযোগ রয়েছে ও ওয়াশিংটন-নিউইয়র্কে হামলার জন্য এই সংগঠনটিই দায়ি।
সাম্প্রতিক সময়ে ওবামার সৌদিআরব সফর ছিল রাজনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরের কয়েকদিন আগেই সৌদিরা যুক্তরাষ্ট্রের সাড়ে সাতশ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ বিক্রি করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল। ‘ফাইন্ডিং ডিসকাশন অ্যান্ড ন্যারেটিভ রিগার্ডিং সার্টেন সেনসিটিভ ন্যারেটিভ ম্যাটারস’ শিরোনামে তদন্ত প্রতিবেদনটি আজও প্রকাশিত হয়নি। নাইন ইলেভেনের ওই হামলায় তিন সহস্রাধিক মানুষ নিহত এবং ছয় সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়েছিল। হামলা পরবর্তীতে মার্কিন কংগ্রেসের তত্ত্বাবধানে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিশনই ওই ২৮ পৃষ্ঠার রিপোর্টটি তৈরি করেছিল। কিন্তু কোনো এক কারণে সেই রিপোর্টটি আর আলোর মুখ দেখেনি।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ তৎকালীন সময়ে বলেছিলেন যে, রিপোর্টের কিছু অংশ প্রকাশ পেলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। পাশাপাশি তিনি আরও বলেছিলেন, ‘রিপোর্টের তথ্য এবং পদ্ধতি আমাদের কাজকে আরও কঠিন করে দিয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের জয় পাওয়া কোনো সহজ ব্যাপার নয়।’ কিন্তু মার্কিন নাগরিক সমাজ থেকে ক্রমাগত ওই রিপোর্ট প্রকাশের চাপ আসছে। বিভিন্ন সূত্র মারফত নাইন ইলেভেনে হামলার সঙ্গে সৌদিআরবের জড়িত থাকার ইঙ্গিত পাওয়ায়, রিপোর্টটি প্রকাশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদিআরবে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। অতিসম্প্রতি নিউইয়র্কের মেয়র রুডি গুলিয়ানি ওই রিপোর্ট প্রকাশের জোর দাবি জানিয়েছেন।
রুডি গুলিয়ানির দাবি অনুযায়ী, একজন সৌদি যুবরাজ তাকে ১০ মিলিয়ন ডলারের চেক দিয়েছিল যাতে তিনি সৌদিআরব থেকে সবার দৃষ্টি সরিয়ে নিতে সাহায্য করেন। কিন্তু সাবেক এই মেয়র যুবরাজের দেয়া চেকটি ছিড়ে ছিন্ন করে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। মেয়র সেই যুবরাজকে আরও বলেছিলেন, ‘তার অর্থ তিনিই রেখে দিক এবং দোজখের আগুনে পুড়ুক। আমেরিকার জনগণের জানা প্রয়োজন যে নাইন ইলেভেনের হামলায় সৌদিআরবের ভূমিকা কি ছিল। আমাদের জানতে হবে, কারা আমাদের আদরের মানুষদের হত্যা করে আমাদেরকেও মৃত্যুর কাছাকাছি পাঠিয়ে দিয়েছেন।’
এদিকে গত রোববার হোয়াইট হাউসের মুখপাত্ররা অন্তত এটা জানিয়েছেন যে, ২৮ পৃষ্ঠা রিপোর্টের সবটুকু অংশ প্রকাশ না করা হলেও কিছু পৃষ্ঠা জনগণের সামনে উন্মোচিত হবে। মার্কিন সিনেট ইন্টিলিজেন্স কমিটির সাবেক প্রধান ও সাবেক ডেমোক্রেটিক সিনেটর বব গ্রাহামও নাইন ইলেভেনের হামলার সঙ্গে সৌদিআরবের যোগসাজস থাকার কথা বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন, ‘নাইন ইলেভেন সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, ওই ১৯জন মানুষই কি শুধু এতবড় স্পর্শকাতর হামলার পরিকল্পনা করেছিল? নাকি তাদের কেউ সমর্থন করছিল। আর তাই যদি হয় তাহলে তাদের সাহায্যকারী হিসেবে কাদের আমরা দেখতে পাই। আমার মনে হয় সবগুলো তথ্য প্রমাণ সৌদিআরবের দিকেই নির্দেশ করে। দেশটির রাজতন্ত্রের একেবারে শীর্ষস্থানীয় সদস্য থেকে শুরু করে নিতান্ত ব্যক্তিগত পর্যায়েও অনেকে এই হামলার সঙ্গে জড়িত।’
দুই কংগ্রেস সদস্য যারা ওই গোপন রিপোর্টটি দেখেছেন। তবে এই দুই সিনেটর দ্বিদলীয় হওয়ায় এনিয়ে তেমন কোনো আলোচনা গড়ায়নি। যদিও সিনেটর স্টিফেন লিঞ্চের বক্তব্য অনুসারে, নাইন ইলেভেনের হামলার সঙ্গে জড়িত সৌদিআরবের বিশেষ কয়েকজনের নাম ওই রিপোর্টে আছে এবং তারাই ২০০১ সালে ওই হামলার পরিকল্পনা করেছিল। অন্যদিক রিপাবলিকান সিনেটর ওয়াল্টার জনস বলেন, প্রেসিডেন্ট বুশ ওই রিপোর্ট প্রকাশের পক্ষে ছিলেন না, কারণ সৌদিআরবের সঙ্গে তার প্রশাসনের সম্পর্ক ছিল বেশ ভালো।
দীর্ঘদিন ধরেই সৌদিআরবের উপর অভিযোগ উত্থাপিত হয়ে আসছে যে, সৌদিআরব বিভিন্ন ইসলামিক সশস্ত্র দলকে অস্ত্র এবং অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে জঙ্গীবাদের সমর্থনে। এমনকি পশ্চিমা দেশগুলোতে হামলা চালানোর জন্যও অনেক দলকে অর্থ সহায়তা দেয়া হয়। সর্বশেষ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরোধী শিবিরকেও বিভিন্ন সহায়তা করতে দেখা যায় সৌদিআরবকে। এছাড়াও এমনও অভিযোগ আছে যে, বর্তমান বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেট গঠনের পেছনেও হাত ছিল সৌদিআরবের। নাইন ইলেভেনে হামলায় অংশগ্রহন করেছিল ঘাসান আল শারবি নামের একজন বোমা বিশেষজ্ঞ। ওয়াশিংটনে অবস্থিত সৌদিআরবের দূতাবাসের ময়লার ঝুড়ি থেকে শারবির নাম লেখা খাম উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এমনি আরও অনেক প্রমাণ রয়েছে নিউইয়র্ক পুলিশের হাতে। তবুও সেই গোপন রিপোর্টটির জন্য অপেক্ষা। ওই রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ হলে সৌদিআরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ বেধে যাওয়াও অস্বাভাবিক হবে না।