খালেদা জিয়ার আত্মসমর্পণ ৫ মে

নিউজ ডেস্ক :: জিয়া চেরিট্যাবল ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থণের জন্য আগামী ৫ মে দিন রেখেছেন বিচারক। সোমবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য এ দিন ধার্য করেন। মামলার অপর আসামিরা ইতিমধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থণ করেছেন।
আইন মোতাবেক খালেদা নিজের দোষ স্বীকার করলে বিচারক ওই বৈঠকে-ই তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করবেন। আর নির্দোষ দাবী করলে যুক্তি-তর্কের জন্য দিন ঠিক করা হবে।
মামলায় এ যাবৎ ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সমাপ্ত হয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির দুই মামলায় বকশিবাজারে অস্থায়ী একটি আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ধার্য তারিখে খালেদা জিয়ার আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে।
গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালতের বিচারক খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারে পরোয়ানা জারি করেছিলেন। এরপর গত ৫ এপ্রিল খালেদা জিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। জামিনপ্রাপ্ত বাকি দুই আসামি হলেন, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যাবসায়ী শরীফ উদ্দিন আহমেদ। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হত্যার দায়ে মাস দুয়েক আগে ৩ টি চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ মামলাগুলোতেও শীঘ্র বিচার শুরু হবে।
বেশ কয়েকটি ধার্য তারিখে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলার বাদি দুদকের সাক্ষী হারুন অর রশীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মামলার বাদি দুদকের উপ পরিচালক মো. হারুন অর রশিদ আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেন,গত ১২ জুন ২০০৬ তারিখে আসামি কাজী সলিমুল হকের নামে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা এফ ডি আর করা হয় এবং তার নামে নতুন হিসান নম্বর খুলে সেখানে জমা করা হয়।আর এই টাকাগুলো জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা’।
এর আগে মোট ১৭ বার এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের সময় পেছানো হয়। প্রতিবারই উচ্চ আদালতের অজুহাতে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ পিছিয়ে দেওয়া হয়। সবগুলো তারিখই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী দুদকের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশীদ আদালতে সাক্ষ্য না দিয়ে ফিরে যান। সাক্ষ্যের জবানবন্দিতে আরও বলা হয় ‘‘সোনালী ব্যাংক রমনা শাখা থেকে চলতি হিসাব নং-৫৪১৬ থেকে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা উত্তোলন করেন খালেদা জিয়া। যা সৌদি আরবের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের একটি ডিডির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকে আসে।’’
২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ মোট ১০ আসামির বিরুদ্ধে দুদকের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চেরিট্যাবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হল তারা হলেন,জিয়া চেরিট্যাবল ট্রাস্ট মামলার আসামি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরী,নৌ -নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না, ঢাকা সিটি কর্পেরেমনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি খালেদা জিয়া এবং খালেদা জিয়ার বড় পুত্র ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরীফ উদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মামুনুর রহমান। অভিযোগ গঠনের সময় আসামি শরফুদ্দিন আহমেদ অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। বাকি আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তবে আসামি তারেক রহমান সরকারের অনুমতি নিয়ে দেশের বাইরে থেকে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয় নি বলে সাংবাদিকদের জানান দুদকের আইনজীবী মোশাররাফ হোসেন কাজল। চার্জ গঠনের পরপরই আসামিপক্ষ চার্জ গঠনকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে একটি রিভিশন মামলা দায়ের করে। উচ্চ আদালত শুনানি শেষে রিভিশন খারিজ করে দেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাওঁ থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১২ সালে ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মামলাটির অভিযোগপত্র ওই বছরের ১৫ জানুয়ারি আমলে নিয়েছেন ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত। এ মামলার অপর আসামিরা হলেন,খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরী, নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না, ঢাকা সিটি কর্পেরেমনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এ মামলায় হারিস চৌধুরী বারবর পলাতক রয়েছেন এবং বাকি আসামিরা জামিনে আছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আ্ত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ মামলায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনকে আসামি করে ২০১০ সালের ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এ মামলার অপর আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার বড় পুত্র ও বিনেপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরীফ উদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মামুনুর রহমান। উল্লেখ্য শেষের দুইজন বরাবর পলাতক আছেন।