উপচে পড়া ভিড়ে শেষ দিনের মত চলছে সিম নিবন্ধন

তথ্য প্রযুক্তি ডেস্ক :: শেষ সময়ের বিপুল চাপের মধ্যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়া পৌঁছেছে বেঁধে দেওয়া সময়ের শেষ দিনে; সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী আজ রাত ১০টায় শেষ হয়ে যাবে আঙুলের ছাপ পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন। অবশ্য সিম পুনঃনিবন্ধনের সময় আরও কিছু বাড়তে পারে বলে ইতোমধ্যে ইঙ্গিত এসেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের কথায়। সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে আসছেন তিনি।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের মাধ্যমে জানা গেছে, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে যেসব সিমের নিবন্ধন হয়নি, সেগুলো সহজেই চিহ্নিত করা যাবে। তবে সমস্যা হবে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেসব সিম নির্দিষ্ট সময় বন্ধ রাখা নিয়ে।
তাদের ভাষ্য, অনিবন্ধিত সিমগুলো বন্ধ করতেই তিন ঘণ্টা লেগে যাবে। তারপর শুরু হবে সেগুলো সচলের পালা। এই জটিলতা শেষ হতে লম্বা সময় লেগে যেতে পারে।
দেশের মানুষের হাতে থাকা ১৩ কোটি মোবাইল সিমের মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৮ কোটি ৩৮ লাখ সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুনঃনিবন্ধিত হয়েছে। এর বাইরে আঙুলের ছাপ না মেলাসহ বিভিন্ন কারণে সোয়া এক কোটি গ্রাহক সিম নিবন্ধনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
গতকাল দিনভর বিভিন্ন স্থানে নিবন্ধন কার্যক্রম ঘুরে দেখে সব পক্ষের অভিযোগ শুনে শুক্রবার বিকালে আগারগাঁওয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যালয়ে অপারেটর প্রতিনিধি ও এনআইডি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, সিম পুনঃনিবন্ধনে সৃষ্ট জটিলতার জন্য অপারেটর ও এনআইডি কর্তৃপক্ষ সেখানে একে অপরকে দোষারোপ করেন।
অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এনআইডি সার্ভারে যাচাইয়ের জন্য পাঠানো প্রায় তিন লাখ গ্রাহকের তথ্য প্রক্রিয়াধীন বলে সিগন্যাল পাঠানো হচ্ছে। তারা সঠিকভাবে এনআইডির সহায়তা পাচ্ছেন না।
অন্যদিকে এনআইডি উইংয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা সহায়তার অনুরোধ পাননি। পর্যাপ্ত তথ্যও অপারেটররা সরবরাহ করেননি।
বৈঠক শেষে এনআইডি উইংয়ের পরিচালক (অপারেশন্স) সৈয়দ মুহাম্মদ মূসা বলেন, তাদের সার্ভার সচল রয়েছে; সেখানে কোনো সমস্যা নেই।
“অপারেটররা বলেছে, আঙুলের ছাপ যাছাইয়ে তারা যে পরিমাণ রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছে সে পরিমাণ সাড়া পাচ্ছে না। আমরা বলেছি, তা হওয়ার সুযোগ নেই। বরং আমরাই অপারেটরদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ রিকোয়েস্ট পাইনি।”
প্রতি সেকেন্ডে ছয় হাজার সংখ্যক আঙুলের ছাপসহ তথ্য যাছাইয়ের সুযোগ এনআইডির তথ্যভাণ্ডারে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যে কোনো ধরনের কাজ মোকাবেলায় প্রস্তুতি রয়েছি।”
প্রতিমন্ত্রী তারানা বৈঠকে বলেন, তিনি কোনো অজুহাত শুনতে চান না, রাতের মধ্যে অপারেটরদের সার্ভার ঠিক করতে হবে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসে অপারেটরদের কোনো সেবা কেন্দ্র না থাকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আঙুলের ছাপ নিয়ে অনেককে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। গ্রাহকরা উপজলা নির্বাচন অফিসে ছুটছেন। তা হালনাগাদ করার পরই সেখানে সেবা দিতে পারলে ভালো হতো। এখন পর্যন্ত নির্বাচন অফিসে কোনো অপারেটর বসেনি।”
এদিকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হওয়ার একদিন আগে শুক্রবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সিম নিবন্ধন কেন্দ্রগুলোতে ছিল গ্রাহকদের উপচেপড়া ভিড়। পুনঃনিবন্ধন শেষ করতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা আর ভোগান্তির কথা বলেছেন অনেকে।
নিবন্ধনকারীদের পক্ষ থেকে বার বার এনআইডি সার্ভারে ঢুকতে সমস্যা হওয়ার কথা বলা হলেও জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ বলেছে, সমস্যা তাদের নয়, অপারেটরদের সার্ভারে সমস্যা। এর সমাধান না হওয়ায় নিবন্ধন না করেই ফিরে যেতে হয়েছে অনেক গ্রাহককে।
গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে অপারেটরদের ডিভাইস বসানোর ‘অনুরোধ’ করা হলেও সবক্ষেত্রে তারা সেটি না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
আগারগাঁওয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যালয়ে অপারেটর প্রতিনিধি ও এনআইডি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি নিবন্ধনের সমস্যা দ্রুত সারানোর নির্দেশ দেন অপারেটরদের।
উল্লেখ্য, গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম পুনঃনিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সার্ভারে থাকা আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে চলছে সিমের এই নিবন্ধন; নতুন সিম কিনতেও যেতে হচ্ছে একই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে।