এখনও পোড়া গন্ধে বিমূঢ় হাসিনা
নিউজ ডেস্ক : টাকার অংকে কতোটুকু ক্ষয়ক্ষতি, সেটা এখনও স্পষ্ট নয় আর মনের ক্ষতি মাপার যন্ত্রতো আবিষ্কারই হয়নি।
প্রসঙ্গ, ‘মে দিবসে’র সন্ধ্যায় পুড়ে যাওয়া কারওয়ান বাজারের ২শ’টির বেশি দোকান ও ব্যবসায়ীরা।
হাসিনা মার্কেট বলে পরিচিত স্থানটি মাঝরাতের আঁধারে যেনো পরিত্যক্ত কোনো এলাকা। পুরোটা জুড়ে পোড়া ও ধোঁয়ার গন্ধ।
মঙ্গলবার (০৩ মে) দিনগত মধ্যরাতে গিয়ে কারওয়ান বাজারের চিরচেনা সেই রূপ পাওয়া যায় না। মাত্র দুইদিন আগে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার নিস্তব্ধতা, বিমূঢ়তা টের পাওয়া যায়।
অন্ধকার, ভেজা ছাইয়ের স্তূপ, কালো গলিগুলোতে ঢুকে কয়েকজনকে ঘুমন্ত দেখা যায়। টি-শার্ট ও প্যান্ট পরে চেয়ারে ঘুমাচ্ছিলেন মো. রুবেল। হালকা শব্দ কানে যেতেই ঘুম ভাঙে, উঠে বসে আলাপে জানান, দোতলার একটি ছোট্ট ঘরে তারা দুই যুবক থাকতেন। সন্ধ্যায় গোসল করতে নামলেন, আর সেই মুহূর্তেই আগুন।
ঘরের কোনো জিনিসপত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরনের প্যান্টটি সঙ্গে ছিলো বলে রক্ষা, আর টি-শার্টটি আগুনের ঘটনার পরের দিন কিনেছেন। শুটকির দোকানে কাজ করেন তিনি। তার বাবা এ বাজারেই পানি সরবরাহের কাজ করেন।
পানি সরবরাহের কাজ করেন আবুল কাশেম ও সবুজ মিয়াও। অভ্যাসবশেই পোড়া দোকান পাহারা দিচ্ছেন ঝিমুতে ঝিমুতে।
আলাপে হাত উচিয়ে একটি দোকান দেখিয়ে বলেন, তালা বন (বন্ধ) আছিলো (ছিলো) এই মুদি দোকানের। কারেন্টও আছিলো না সেই সুময়। ক্যামনে আগুনটা লাগলো আল্লাহ মাবুদ জানে। এই দোকান থেইকাই আগুন শুরু।
পাশের জন বলেন, যে দোকানে আগুন লাগসে তার মালিক আগের দিনই হিসাব পাত্তি কইরা চইলা গেসে। সেই দোকান ইন্সুরেন্স করা আছে। তার ক্ষতিতো পোষায়া যাইবো। কিন্তু এক ঘটনায় এতো কোটি ট্যাকার ক্ষতি ক্যামনে পোষাইবো? পথেতো বসলাম আমরা। ব্যবসার আগের অবস্থা ফিরা আইতে বহুত বচ্ছর লাগবো।
তাদের আলাপ থেকে জানা যায়, এক মশলা ব্যবসায়ী সম্প্রতি এক কোটি টাকার মশলা এনে রেখেছেন দোকানে। কারণ, সামনেই রোজা ও ঈদ। চাহিদা বাড়বে এগুলোর। আর এই এক কোটি টাকার মধ্যে ৫০ লাখ তার মেয়ে জামাইয়ের (জামাতা) কাছ থেকে ধার নিয়েছেন, ৩০ লাখ অন্য বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার, বাকিটা নিজের সঞ্চয়। এখন সব পুড়ে নিশানা পর্যন্ত নেই, পথে বসার উপক্রম তার।
আরেক দোকানিও কোটি টাকার সিগারেট এনে রেখেছিলেন, যা আগুনের খোরাক হয়েছে।
দোতলা দোকানগুলোর কাঠামোটুকুই রয়েছে শুধু। নিচ থেকে তাকালে নীলচে আকাশে সে কাঠামোর জ্যামিতিক আকার আরও যেনো বিষণ্নতা বাড়ায়।
টিনগুলো বেঁকে গেছে, লোহার সিঁড়িগুলোর বেশ ক’টি ঠিকঠাক রয়েছে। পোড়া ছাইগুলো থেকে কিছু উদ্ধারের আশায় মাথায় টুপি পরা এক যুবক খোঁজাখুঁজি করছিলেন। কোনো আলাপে সায় নেই তার। আপনমনে ছাই খুঁচিয়ে চলেছেন তিনি।
সামনের রাস্তাটুকুতে ডাব, কচি তালসহ নানা সামগ্রী আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, যাচ্ছেও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু কোথাও যেনো সুর কাটা। অন্য সময়ের মতো সেই উচ্ছ্বাস নেই কারও মাঝে।
দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে তাদের মনে নানা সংশয়। ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কেউ জানতে চান- পোড়া টাকা ব্যাংকে চলবে কিনা, পুড়ে যাওয়া পরিচয়পত্র আবার তাদের দেওয়া হবে কিনা, নম্বরটি দিলে আরেকটি কার্ড করতে কতোদিন সময় লাগবে।
তারা জানান, পুড়ে যাওয়া দোকানগুলোর ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই দীর্ঘ সময়ের পরিশ্রমে এ ব্যবসা গড়েছেন। আশেপাশে তাদের বাসা নিয়েছেন, বাচ্চাদের স্কুলও কাছাকাছি। এখন সব মিলিয়ে সর্বনাশ হয়েছে।
তাদের দুঃখী মনে বিভিন্ন সন্দেহও ঘুরপাক খায়। কাশেম বলেন, এইটা ষড়যন্ত্র হইতে পারে। কোনো না কোনো কারনে এই আকাম হইতে পারে। সরকার আমগোরে না দেখলে কই যামু? দেখি, ক্ষতিপূরণ দিবো কইসে, দিলেতো তাও কিছু সান্ত্বনা থাকে, রুটি-রুজির ব্যবস্থা থাকে।