ওসমানীনগরের রেজিয়ার বিষফোঁড়া থেকে ৫০ কেজি টিউমার
নিউজ ডেস্ক :: বিষফোঁড়া থেকে রূপান্তর হওয়া টিউমারের ওজন প্রায় ৫০ কেজি। বিশালাকার এই টিউমার নিয়ে বেঁচে আছেন পয়ত্রিশ বছর বয়সী রেজিয়া বেগম।
তিনি সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালা বাজারের এওলাতৈল গ্রামের আব্দুল মানিকের স্ত্রী।
বেঁচে থাকলেও নিজের ইচ্ছায় চলাফেরা করতে পারেন না রেজিয়া। স্বামী-সন্তানের সাহায্যে সকালে ঘর থেকে বারান্দায় বের হন। আবার দিন শেষে তারা বারান্দা থেকে ঘরে নেন। এভাবে জীবন চলছে বিরল রোগে আক্রান্ত রেজিয়ার। পায়ের আঙ্গুলে ওঠা বিষফোঁড়ায় তার জীবন বিপন্ন হতে চলেছে। শুয়ে-বসতেও কষ্ট হচ্ছে। হাঁটতে হয় অন্যের সাহায্য নিয়ে। রাত কাটে চরম যন্ত্রণায়।
রেজিয়া বলেন, ‘বিশ বছর আগের কথা। পায়ের আঙ্গুলে একটি ফোঁড়া ওঠে। দিন যতো যায়, ততোই বড় হতে থাকে। দেড় যুগেরও অধিকসময় ধরে চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি।
জটিল রোগে আক্রান্ত রেজিয়াকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে তার পরিবার। দিনমজুর স্বামী আব্দুল মানিক স্ত্রীকে সুস্থ করে তুলতে নিজের ভিটেমাটি বিক্রি করেছেন। গিয়েছেন ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে। চিকিৎসকরা বলেছেন, এটা নাকি ‘পাইলেরিয়া’ রোগ। ২০ বছরে ধরে স্ত্রীকে সুস্থ করতে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায়। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করানোও বন্ধ। স্থানীয় এক চিকিৎসকের ওষুধে পরিত্রাণ খুঁজছেন তারা।
রোগের বর্ণনা দিতে গিয়ে মানিক বলেন, বিয়ের প্রায় চার বছর পর রেজিয়ার পায়ের পাতায় প্রথমে একটা বিষফোড়া উঠে। এরপর ক্রমশ, তা বড় হতে থাকে। ২০ বছর ধরে এ রোগে ভুগছেন তার স্ত্রী। দেখতে অনেকটা টিউমারের মতো এর ওজন ৫০ কেজি হবে, চিকিৎসকরা তাকে এমনটি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ভিটেমাটি বিক্রি করে একই এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের পুকুর পাড়ে বসত ঘর তৈরি করে জীবন-যাপন করছি। আর জমি চাষ করে দুই মেয়ের একজনকে বিয়ে দিয়েছি। অভাবের তাড়নায় এসএসসি পরিক্ষার্থী ছোট মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছি।
মানিকের আশ্রয়দাতা রাজ্জাক মিয়া বলেন, ভূমিহীন আব্দুল মানিককে থাকার জায়গা ব্যবস্থা করে দেন তিনি। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ১০ কেদার (৩শ’ শতক) ধানী জমিও বর্গা চাষ করেন। কিন্তু ছয় কেদার ধানী জমিতে কাস্তে লাগাতে পারেননি। চিকিৎসা চালানো এ যেনো মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ।
এ ব্যাপারে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ইলিফেন থিয়াসিস’ জীবানুবাহী রোগ এটি। সাধারণত মশাবাহিত এই রোগ উত্তরবঙ্গে দেখা মিলে।
তার মতে, লিপ্রেডিক চ্যানেল বা শরীরের অভ্যন্তরে সাদা কেমিকেল পদার্থ ব্লক হয়ে গেলে এ রোগ হতে পারে। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পরীক্ষা করালে এ রোগ শতভাগ নির্ণয় করা যেতে পারে বলে আশাবাদী তিনি।