রায় শুনে ১৭ গ্লাস পানি পান করেন নিজামী
নিউজ ডেস্ক :: রিভিউ আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ কপি সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় পড়ে শুনানোর পর গলা শুকিয়ে যায় একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর। তাই ওই রাতে কারারক্ষীদের কাছ থেকে তিনি ১৭ গ্লাস পানি পান করেন।
মতিউর রহমান নিজামীকে বর্তমানে রাখা হয়েছে কেন্দ্রীয় কারাগারের রজনীগন্ধা সেলের ৮ নম্বর কক্ষে। এই সেল থেকে ফাঁসির মঞ্চের দূরত্ব মাত্র ২০ গজ। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরের বিশ্বস্ত সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
কারা সূত্রে আরো জানা যায়, মৃতুদণ্ডের রায় পড়ে শোনানোর পর গভীর রাত পর্যন্ত নিমাজী সেলের মধ্যে পায়চারী করেন। পরে রাত ২টার দিকে তিনি ঘুমাতে যান। ভোরারাতে উঠে আবার ফজরের নামাজ আদায় করেন।
এদিকে নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের জন্য প্রধান জল্লাদ হিসেবে সন্ধ্যা নাগাদ কাশিমপুর কারাগার থেকে শাজাহান ও রাজুকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হতে পারে। তবে মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা প্রধান জল্লাদ জনি ও ছাত্তার এবার থাকছেন না। জনির বাম পা কেটে ফেলা হয়েছে এবং ছাত্তারের কোমড়ে রয়েছে সমস্যা। সে কারণেই তাদের পরিবর্তে দেখা যাবে নতুন দুই মুখ। প্রাণ ভিক্ষার আবেদন এবং পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎসহ আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে চকবাজারের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারেই নিজামীকে ফাঁসির মঞ্চে ঝোলানো হবে।
জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করা নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে উৎসুক জনতার ভিড় বাড়ছে। মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নানা পেশার মানুষ কারাগার চত্বরে ভিড় করছেন। তাদের সবারই জানার ইচ্ছা, কখন ফাঁসি হচ্ছে বদর নেতা নিজামীর?
কেন্দ্রীয় কারাগারের আশেপাশের দোকানীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যে কোনো ফাঁসি কার্যকরের আগে কারাগার এলাকার আশেপাশের সব দোকান বন্ধ রাখতে কারাকর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়ে থাকেন। তবে এখন পর্যন্ত তারা এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পায়নি।
উল্লেখ্য, নিয়মানুযায়ী রায় পড়ে শোনানোর পরবর্তী সাতদিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। তবে নিজামীর দল জামায়াতের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে- নিজামী তার স্বজনদের জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন না তিনি। আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে নিজামীকে ফাঁসির রশিতে ঝোলাতে আইনগত আর কোনো বাধা থাকবে না।
এদিকে সোমবার (০৯ মে) একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ খারিজের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। রায় প্রকাশের পর সেটি পাঠানো হয় ট্রাইব্যুনালে। সেখান থেকে রায়ের কপি যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
গত বৃহস্পতিবার (০৫ মে) মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ খারিজ করে দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এক শব্দের এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় প্রধান বিচারপতি শুধু বলেন, ‘ডিসমিসড’।
বেঞ্চে আরো ছিলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এদিকে রিভিউ আবেদন খারিজের পর পুরোজাতি এখন নিজামীর ফাঁসির অপেক্ষায়।