দণ্ডবিধি অনুযায়ী এটি শাস্তিযোগ্য : আইনমন্ত্রী
নিউজ ডেস্ক :: নারায়ণগঞ্জে এক শিক্ষককে গণধোলাই ও পরে এমপি সেলিম ওসমানের নির্দেশে কান ধরে উঠবসের ঘটনাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
মঙ্গলবার (১৭ মে) সকাল ১১টায় রাজধানীর বিচার প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিশেষ জজদের নিয়ে আয়োজিত এক সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করার ঘটনাটি পেনাল কোড (দণ্ডবিধি) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তারা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।’ জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
গত ১৩ মে বিকেলে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি এবং শিক্ষার্থীকে মারধর করার অভিযোগে কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কল্যান্দি এলাকায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে গণপিটুনি দিয়ে সবার সামনে কান ধরে উঠবস করিয়ে ক্ষমা চাওয়ানো হয়।
তবে ওই শিক্ষক বলছেন, তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এর আগেও কয়েকবার বিভিন্ন ইস্যুতে ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়ে সবশেষ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মিথ্যা অভিযোগ তাকে অপদস্ত করা হয়।
ঘটনার তিনদিন পর বন্দর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আকম নুরুল আমিনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
ইতোমধ্যে তদন্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, ঘটনার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের তথ্য রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য মিলেছে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ও দোষীদের শাস্তি দাবি করে কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছে জেলার শিক্ষকরা। এ লক্ষ্যে আজ জরুরি সভা আহ্বান করেছেন জেলা শিক্ষক সমিতির নেতারা।
সোমবার (১৬ মে) তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, তারা ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে প্রধান শিক্ষককে অপদস্ত করার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের তথ্য পেয়েছেন। এর মধ্যে একটি হলো, মসজিদের মাইকে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে পরিস্থিতিকে উসকে দেয়া।
কারণ ঘটনাস্থলে যাওয়া বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী হাবিবও জানিয়েছেন, আহত স্কুল ছাত্রের অভিযোগে ধর্মীয় অনুভূতির বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। এ ছাড়া ম্যানেজিং কমিটির বিরোধের বিষয়ে তারা তথ্য পেয়েছেন। এ বিষয়ে তারা বিস্তারিত তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন।
শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত এখন নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে পুলিশ হেফাজতে ভর্তি চিকিৎসাধীন। তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতালে কারো সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতেও রাজি হচ্ছেন না।
এদিকে, একজন শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় বাংলাদেশকেই কান ধরে উঠবস করানো হয়েছে, এমন মন্তব্য করে শাহবাগে জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছে ‘লেখক-শিল্পী-শিক্ষক-সাংস্কৃতিক কর্মীবৃন্দ’। মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় তারা প্রতিবাদে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষকে।