সালমান শাহ হত্যা: রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশন মামলার পুনঃশুনানি ১৪ জুলাই
নিউজ ডেস্ক:
জনপ্রিয় বাংলা চলচ্চিত্রের প্রয়াত নায়ক চৌধুরী মোহাম্মাদ ইমন ওরফে সালমান শাহ (২৫) হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে দায়ের করা রিভিশন মামলায় পুনরায় শুনানির জন্য আগামি ১৪ জুলাই তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬এর বিচারক মো. ইমরুল কায়েসের আদালতে সোমবার রাস্ট্র পক্ষের সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ শুনানির দিন নির্ধারণ করেন।
গত ১৭ এপ্রিল উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. কামরুল হোসেন মোল্লার আদালত রিভিশন মামলাটির আদেশ প্রদানের জন্য গত ১১ মে ধার্য করেন। সেদিন আদালত আদেশ প্রস্তুত না করতে পারায় ৩০ মে আদেশের জন্য তারিখ ধার্য করেন। পরে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. কামরুল হোসেন মোল্লা রিভিশন মামলাটির আদেশ প্রদানে বিব্রত বোধ করায় গত ১৭ মে এক আদেশে মামলাটি বর্তমান আদালতে বদলি করেন। ফলে এ মামলায় আবার নতুন করে শুনানি হবে।
ইতিপূর্বে ঢাকার আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে পিপির বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরী। সালমান শাহ হত্যা মামলায় তদন্তের বিরুদ্ধে রিভিশন দায়ের করায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবুর বিরুদ্ধে আসামিদের পক্ষাবলম্বনের গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেছেন নিহতের মা নীলা চৌধুরী।
রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, ‘রাষ্ট্র আমার বিপক্ষে কেন গেলো, এটা আমার আসল প্রশ্ন। আমি অবাক হয়েছি রাষ্ট্রপক্ষের পিপি কোনো কারণে কত টাকা খেয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে স্বৈরাচারি কায়দায় উনি ওনারটা করে নিয়েছে।
নীলা চৌধুরীর বক্তব্য থেকে জানা যায়, তার সামনেই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবুকে তার কাজের বিষয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে ফাইল নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। তার মতে, তিনি মামলার বাদী, তিনি না থাকলে তার স্বামী এবং তার স্বামী না থাকলে ভক্তদের কেউ বাদী হয়ে এ মামলা চালাবেন। পিপি সাহেব আমাদের স্বার্থ দেখবেন এটাই নিয়ম। কিন্ত তিনি তা না করে যা করলেন তা আসামিদের স্বার্থ রক্ষা বৈ অন্য আর কিছু নয়। এজন্য পিপিকে একদিন জবাবদিহি করতে হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ সময় নীলা চৌধুরী জানান, রিভিশন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত র্যাব তদন্ত করতে পারছে না। তিনি বলেন, বাদী হিসেবে রাষ্ট্রপক্ষ বাদীর পক্ষেই থাকবে। কিন্তু এখানে রাষ্ট্রপক্ষ আমার বিপক্ষে গিয়ে রিভিশন মামলা করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু হত্যাকারীদের পক্ষ নিয়ে রিভিশন মামলা করেছে। র্যাবের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন দায়ের করায় থেমে যায় তদন্ত কার্যক্রম।
এ মামলাটিতে গত ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মামলার বাদী সালমান শাহ’র মা নিলুফার চৌধুরী ওরফে নিলা চৌধুরীর নারাজি গ্রহণ করে র্যাবকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। এদিনও সালমান শাহ হত্যা মামলার সঠিক বিচার ও শাস্তি দাবি করে সালমান শাহ স্মৃতি সংসদের ব্যানার নিয়ে আদালত পাড়ায় মিছিল করে ভক্তরা।
গত ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর বাদী সালমান শাহ’র মা নিলুফার চৌধুরী মামলাটির বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে আদালতে হাজির হয়ে নারাজি দাখিলের জন্য সময় প্রার্থনা করেন।
প্রায় ১৫ বছর ধরে চলা মামলাটিতে আদালত সালমান শাহ’র বাবা কমর উদ্দিন ও মা নিলুফার চৌধুরীসহ ৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহ’র ১১/বি নিউইস্কাটন রোর্ডের ইস্কাটন প্লাজার বাসার নিজ কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে তাকে প্রথমে হলি ফ্যামেলি পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ নিয়ে সালমান শাহ’র বাবা একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। উক্ত মামলা প্রথমে রমনা থানা পুলিশ পরে ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির তদন্ত করেন। তদন্তকালে সালমান শাহ’র লাশ প্রথম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে, সালমান শাহ’র মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। পরে সালমান শাহ’র পরিবার ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আপত্তি দিলে সালমানের লাশ কবর থেকে তুলে ফের ময়নাতদন্ত করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিবেদনে, লাশ অত্যাধিক পঁচে যাওয়ার কারণে মৃত্যুর কারণ নির্নয় করা সম্ভব হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়।