নতুন বাড়িতে থাকা হলো না অপুর
নিউজ ডেস্ক :: পুরাতন বাড়িতে থাকতে সমস্যা হওয়ায় ছেলের আবদার মেনে নতুন বাড়ি তৈরি করেছিলেন সদর উদ্দিন। কিন্তু অপুর সেই বাড়িতে থাকা হলো না। এখন কে থাকবে তার শখের নতুন বাড়িতে।
যশোরের বাঘারপাড়ায় জোড়া খুনের শিকার লিজন আহমেদ অপুকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান তার বাবা-মায়ের এমন বিলাপে ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাস।
সোমবার (০৬ জুন) দুপুরে বাঘারপাড়া উপজেলার রঘুনাথপুর এলাকায় অপুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় অপুকে হারিয়ে শোকে কাতর গোটা পরিবার।
বাড়িতে প্রতিবেশী ও স্বজনদের ভিড়। অপুর বাবা-মা প্রলাপ বকছেন। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া অপুর একমাত্র ছোট বোন ভাইয়ের জন্য কেঁদে হয়রান।
অপুর বাবা সদর উদ্দিন কে বলেন, আমাদের একমাত্র ছেলে অপু। আমার ভূষিমালের ব্যবসাতে সংসার চলে। অপু ডিগ্রি পাস করে যশোর সরকারি এমএম কলেজে মাস্টার্স শেষ পর্বে পড়াশুনা করছে। তাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু একরাতেই আমার সব স্বপ্ন পুড়ে ছারখার হয়ে গেলো।
তিনি জানান, পুরানো বাড়িতে থাকতে সমস্যা হচ্ছিল, এজন্য অপুর শখমতো পুরাতন বাড়ির কিছু অংশ ভেঙে ইটের দেওয়াল আর টিনের ছাউনি দিয়ে পাঁকা বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন তিনি। এতে বাড়িতে থাকতে কিছুটা সমস্যা হওয়ায় রাতে বাড়ির পাশের আব্দুল
বারী ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজারের সঙ্গে পেট্রোল পাম্পে ঘুমাতেন অপু।
রোববার রাতেও অপু পাম্পে ঘুমাতে যায়। সোমবার সকাল ৭টা বাজলেও অপু না ফেরায় ডাকতে যান তিনি। কিন্তু ঘরের দরজায় তালা মারা দেখেন। পরে স্থানীয় কেউ কেউ জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে ঘরের ভিতরে রক্তাক্ত অবস্থায় অপু ও ফিলিং স্টেশন ম্যানেজারকে পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
অপুর বাবা আরো জানান, পাম্পের ম্যানেজার ওবায়দুল খুব ভালো ছিলেন। বিশ্বস্ত হওয়ায় বাড়িতে টাকা না রেখে তার কাছে রাখতেন। তবে ওই পাম্পের নজেলম্যান (তেল সরবরাহকারী) সিরাজুল ইসলাম গতকাল রাতে ওবায়দুলের কক্ষে ঘুমাতে গেলেও হত্যাকাণ্ডের পর দরজায় তালা দিয়ে পালিয়ে গেছে বলে এলাকাবাসীর ধারণা।
সোমবার সকালে সিরাজুলকে পাশের একটি ধান মিলের চাতালে গিয়ে হাত-মুখ ধুতে দেখেছেন স্থানীয়রা। এরপর থেকে সিরাজুলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছয়েরুদ্দিন আহমেদ কে বলেন, সিরাজুলকে ভোরে চলে যেতে দেখেছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। তাকে আটকের চেষ্টা করছে পুলিশ।
স্থানীয় চাড়াভিটা বাজারের দোকানি মহিদুল ইসলাম কে জানান, রোববার রাত ৯টার দিকে অপু ও সিরাজুল তার দোকানে এসে চুইংগাম কিনে নিয়ে গেছেন।
এদিকে, একই উপজেলার ধলগ্রামের রহমান মোল্যার ছেলে ওবায়দুল রহমানের বাড়িতে গিয়েও দেখা যায় শোকের মাতম। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তার বাবা-মা পাগলপ্রায়।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম কে বলেন, হত্যার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের আটকের জন্য পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে।
ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করে ক্রাইম সিনও সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্ত শেষে সব বিষয় পরিষ্কার বলা যাবে বলে জানান তিনি।