যেকোনো সময় ফাঁসি কার্যকর, সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
নিউজ ডেস্ক: মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী প্রাণভিক্ষা না চাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়ায় তার ফাঁসি কার্যকরে আর কোনো বাধা নেই। এখন কেবল সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা।
এর আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না বলে জানিয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পাওয়া মীর কাসেম আলী। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার শর্ত দিয়ে দুই দিন আটকে রাখার পর গতকাল শুক্রবার তিনি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ। তার ফাঁসি কার্যকরে এখন আর কোনো বাধা নেই। আজ-কালের মধ্যেই ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কারা কর্তৃপক্ষের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল বলেছেন, আজ শনিবার রাতে তার ফাঁসি কার্যকর করার মতো প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। কাশিমপুর কারাগারেই ফাঁসি কার্যকর করা হবে। মানবতাবিরোধী অন্য আসামিদের মৃত্যুদণ্ড যেভাবে কার্যকর করা হয়েছে, ওই প্রক্রিয়ায় মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করা হবে। ফাঁসি কার্যকরের আগে মীর কাসেম আলীর স্বজনেরা তার সঙ্গে একবার দেখা করার সুযোগ পাবেন। এ জন্য কারা কর্তৃপক্ষই তাদের ডেকে পাঠাবে। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বজনেরা দেখা করার ডাক পাননি।
কাশিমপুর কারাগার-২-এর কারাধ্যক্ষ (জেলার) নাশির আহমেদ জানান, কারাগারের কনডেম সেলে বন্দী মীর কাসেম আলী সুস্থ আছেন। কারাগারের চিকিৎসকেরা তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। তাকে স্বাভাবিক খাবার দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর কনডেম সেলে রাখা হয়েছে মীর কাসেমকে। গতকাল তার সঙ্গে দেখা করার পর কাশিমপুর কারাগার-২-এর জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, ‘দুপুরের খাবারের পর বেলা তিনটার দিকে কনডেম সেলে মীর কাসেমের কাছে তিনিসহ কয়েকজন কারা কর্মকর্তা দেখা করেন। এ সময় তারা জানতে চান মীর কাসেম প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না। জবাবে মীর কাসেম বলেছেন, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর মধ্য দিয়ে তার ফাঁসি কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকল না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন যেকোনো সময়ে মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হতে পারে।
কবে ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে জানতে চাইলে জেল সুপার প্রশান্ত বণিক বলেন, ‘শুক্রবার ফাঁসি কার্যকরের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে সরকারি আদেশ বাস্তবায়নে কারা কর্তৃপক্ষ সব সময়ই প্রস্তুত থাকে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ীই সময়-ক্ষণ ঠিক করা হবে।’
মীর কাসেমের আইনি লড়াইয়ে রিভিউ আবেদনই ছিল শেষ ধাপ। গত বুধবার মীর কাসেমের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ওই দিনই মীর কাসেমের পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে মীর কাসেমের স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ছেলেকে ছাড়া রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন না মীর কাসেম। ডিবি পরিচয় দেওয়া লোকজন গত ৯ আগস্ট তাদের ছেলে ব্যারিস্টার আহম্মেদ বিন কাসেমকে মিরপুরের বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে। ব্যারিস্টার আহম্মেদ তার বাবার আইনজীবীও। পারিবারিক যেকোনো পরামর্শের জন্য তাকে প্রয়োজন। আর পরিবারও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না।
কারা কর্মকর্তারা জানান, বুধবার রাতে রিভিউ আবেদনের রায় কারাগারে পৌঁছানোর পরে কারা কর্মকর্তারা মীর কাসেমের কাছে প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি চিন্তা করার জন্য কিছু সময় চেয়েছিলেন। কারা কর্তৃপক্ষ তখন বলেছিল, তাকে ‘যৌক্তিক’ সময় দেওয়া হয়েছে। এর দুই দিন পর তার সিদ্ধান্তের কথা জানালেন কারা কর্মকর্তারা।
এদিকে মীর কাসেমের সিদ্ধান্ত জানার পর শুক্রবার বিকাল থেকেই হাজার হাজার উৎসুক জনতা ভিড় করতে শুরু করেন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার কমপ্লেক্সের বাইরে। সেই সঙ্গে বাড়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের উপস্থিতি।
এরই মধ্যে কারাগারের প্রধান ফটক থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সংযোগ সড়ক এলাকা পর্যন্ত র্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশের টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়। সন্ধ্যার পর আশপাশের এলাকায় দোকানপাটও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ভিড়ের মধ্যে ‘কোনো অঘটন যাতে না ঘটে’ সেজন্যই তাদের এ নিরাপত্তা।