সাজাপ্রাপ্ত দুই মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি বিএনপির
নিউজ ডেস্ক: আদালত অবমাননার জন্য দোষী সাব্যস্ত খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি। সে সঙ্গে দলটি সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার তারিখ থেকে (২৭ মার্চ) দুই মন্ত্রীর সই করা সব আদেশ বাতিলেরও দাবি জানিয়েছে।
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ এ দাবি জানান। দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সাজাপ্রাপ্ত মন্ত্রী দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ চালানো হলে আইনের শাসন বাধাগ্রস্ত হবে এবং বিচার বিভাগের মান ক্ষুণ্ন হবে।
মওদুদ আহমদ বলেন, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হককে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করেছে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আট সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ দুই মন্ত্রীকে আদালত অবমাননার জন্য ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে সাত দিনের জেল দেন। বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারক মত দিয়েছেন, দুই মন্ত্রী সংবিধান রক্ষার শপথ ভঙ্গ করেছেন। বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে দুই মন্ত্রী বিচার বিভাগের মর্যাদাকে খাটো করেছেন। তারা রায় প্রদান প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছেন এবং সুপ্রিম কোর্ট সম্পর্কে কুৎসা রটনা করেছেন।
বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কেউ এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেননি। সে কারণেই দেশের দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
মওদুদ আহমেদ বলেন, দুই মন্ত্রী পাবলিক সার্ভেন্ট। একজন মন্ত্রী শুধু দেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, কোনো দলের নয়। তাই পাবলিক সার্ভেন্ট অধ্যাদেশ ১৯৮৫ এর ধারা ৩ (১) অনুযায়ী রায় ঘোষণার তারিখ থেকে তারা পদচ্যুত হবেন। কারণ, ফৌজদারি মামলায় কোনো পাবলিক সার্ভেন্ট আদালত কর্তৃক ১০ হাজার টাকার বেশি জরিমানা হলে তিনি স্বপদে বহাল থাকতে পারেন না।
এ প্রসঙ্গে লিখিত বক্তব্যে চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ ভারত ও পাকিস্তানে আদালত অবমাননার মামলায় একাধিক মন্ত্রীর পরিণতির ঘটনা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ১২ মে মাসে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মহারাষ্ট্রের পরিবহনমন্ত্রী স্বরূপ সিং নায়েককে আদালত অবমাননার মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেন। এর পরপরই তিনি পদত্যাগ করেন। ১৯৮২ সালে কেরালার মন্ত্রী শ্রী আর বালা কৃষ্ণ পিল্লাই সুপ্রিম কোর্টের মতামত পাওয়া মাত্রই পদত্যাগ করেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিকে ২০১২ সালে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট আদালত অবমাননার মামলায় ৩০ সেকেন্ড প্রতীকী জেল দেন। পরে আদালত অবমাননা-সংক্রান্ত মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকেই পদত্যাগে বাধ্য হন গিলানী।
সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ মার্চ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির আদেশ পাওয়া মীর কাসেম আলীর আপিল মামলা পুনঃশুনানির দাবি জানান। ওই শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেলকে অংশ না নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। একই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকও প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন।
এর তিন দিনের মাথায় ৮ মার্চ আপিল বিভাগ জামায়াতের নেতা মীর কাসেম আলীর আপিলের রায় ঘোষণা করেন, তাতে তাঁর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। ওই দিন আপিল বিভাগ দুই মন্ত্রীকে কারণ দর্শাতে বলেন এবং আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। দুই মন্ত্রী আদালতে হাজির হয়ে তাদের ব্যাখ্যা দাখিল করেন এবং নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।