নির্বাচনে মনোযোগ বিএনপির

নিউজ ডেস্ক: দল গোছানো, বহির্বিশ্বের সমর্থন আদায় ও কার্যকর আন্দোলনে গুরুত্ব আন্দোলনবিহীন প্রায় দেড় বছর পার করার পর জাতীয় নির্বাচনে মনোযোগ দিয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলটি মাঠপর্যায়ের সাংগঠনিক ভিত মজবুত করার উদ্যোগের পাশাপাশি বহির্বিশ্বের সমর্থন আদায় ও কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলা এই তিন বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে সামনে এগোচ্ছে। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করে জানা গেছে, ২০১৯ সালের আগেই নতুন নির্বাচন হবে, এমন ‘বার্তা’ থেকেই এসব প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।–নয়াদিগন্ত।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনকারী মাঠের বিরোধী দল বিএনপি আগামী নির্বাচন নিয়ে ‘কট্টর’ কোনো অবস্থানে নেই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি পূরণ না হওয়ায় ওই নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনে নেমেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল। জানা গেছে, বিএনপি পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলোচনার পক্ষপাতী।
এ ক্ষেত্রে পূর্ব কোনো শর্তও নেই তাদের। আলোচনার টেবিলে বিএনপি যে দু’টি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে চায় তা হচ্ছেÑ নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। সমঝোতার ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন নিশ্চিত হলে বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিতে আপত্তি নেই দলটির।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চলমান সঙ্কট থেকে উত্তরণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন জরুরি। বিএনপির দাবিই এটি। কিভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, ইনকুসিভ একটা নির্বাচন হতে পারে, সে জন্য আলোচনা হওয়া উচিত। আমরা আলোচনাই চাই।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের দাবিতে দলটি শিগগিরই তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করবে। কারণ কাজী রকীবউদ্দিন আহমদ নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ এখন শেষের দিকে। বিএনপি আশা করছে, নতুন কমিশন গঠনের আগে সরকার বিএনপির সাথে আলোচনা করবে। যদি পক্ষপাতদুষ্ট ও একতরফা কোনো ইসি গঠন করা হয়, তাহলে শক্ত অবস্থান নেবে তারা। নামবে আন্দোলনেও।
সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সব সময় সিইসি ও ইসি নিয়োগ দিলেও ২০১২ সালে সর্বশেষ কমিশন হয় সার্চ কমিটির মাধ্যমে। সেই সময় প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপে বসেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি।
জানা গেছে, দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে দল পুনর্গঠনের কাজে হাত দিয়েছে বিএনপি। নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর মাঠপর্যায়ে দলকে ঠেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারা দেশে ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার অধীন সব ক’টি ইউনিট নতুন নেতৃত্ব দিয়ে সাজানো হবে। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকেরা এ কাজ এগিয়ে নিতে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছেন।
তাদেরকে কেন্দ্র থেকে প্রস্তুতিমূলক সব কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে। মাঠপর্যায়ের সংগঠন গোছানোর পাশাপাশি যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে অক্টোবরের মধ্যেই। ছাত্রদলেরও নতুন কমিটি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।
নির্বাচনের দাবি আদায়ে দ্বিতীয়ত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের বিষয়টিকে। দলের হাইকমান্ড উপলব্ধি করছে, বিগত সময়ে সুযোগ্য নেতাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এ জন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়নের পাশাপাশি বিএনপির দাবির পক্ষে সমর্থন আদায়ে সুযোগ্য অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত নেতাদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি যার যার অবস্থান থেকে কাজ শুরু করেছে। দায়িত্বের বাইরে যাতে কেউ অযাচিত কোনো কর্মকাণ্ড না করতে পারেন সে বিষয়টিও হাইকমান্ড নিজেই তদারকি করছে।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকার বহির্বিশ্বে ভুল মেসেজ দিয়ে নিজেদের পক্ষে কিছুটা সমর্থন আদায় করলেও এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন আসছে। বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্রই মনে করে শক্তিশালী গণতন্ত্রের স্বার্থে বাংলাদেশে দ্রুত একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া উচিত। নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর বহির্বিশ্বের চাপও আছে। শিগগিরই এ চাপ আরো বাড়বে। এ ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবসহ প্রভাবশালী অনেক রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা বাংলাদেশ সফর করবেন বলেও জানান বিএনপির এই নেতা।
গত মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশ সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। তার সাথে বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে নতুন নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। একই সাথে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের কথাও বলা হয়েছে। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, জন কেরি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবেন, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সূত্র মতে, আন্দোলনকে নির্বাচনের দাবি আদায়ের ‘সর্বশেষ বিকল্প’ হিসেবে হাতে রেখেছে বিএনপি। পরবর্তী আন্দোলনের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে বিএনপি। কোনো পরিকল্পনা ছাড়া হুট করে বড় ধরনের আন্দোলনে যাবে না তারা। তৃণমূল থেকে শীর্ষ প্রতিটি পর্যায়ে আলোচনা করার পর তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলেই বড় আন্দোলনের দিকে যাবে তারা।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, সর্বশেষ দীর্ঘ মেয়াদের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করেছে বিএনপি। এর প্রধান কারণ ছিল কোনো পরিকল্পনা ছাড়া এ আন্দোলনে নামতে হয়েছিল। এ ছাড়া সিনিয়র ও মধ্য সারির অনেক নেতাই এ আন্দোলনের বিষয়ে অবগত ছিলেন না। হুট করে আন্দোলনের ঘোষণা এবং সরকারের জুলুম-নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। তার সাথে পুরো বিএনপি হয়ে পড়েছে ছত্রভঙ্গ। এবার আর সেই ভুল করা হবে না। আন্দোলনের মতো আন্দোলন হলে মাত্র সাত দিনেই সফল হওয়া সম্ভব।