আসুন মুখে তালা লাগাই
নাসির উদ্দিন হায়দার ::একজন এমপিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র। এমপি মহোদয় ছাত্রটির বিরুদ্ধে থানায় জিডি করলেন, আর পুলিশ শিশুটিকে ধরে এনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে হাজির করলেন। আদালত ছাত্রটিকে আইসিটি আইনে দুই বছর সাজা দিলেন।
এ বিষয়ে ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন একজন আইনজীবী হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে উপস্থাপন করেন। বিচারকরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল দেন। আদালত ওই শিক্ষার্থীকে কীভাবে গ্রেফতার করা হলো এবং কিসের ভিত্তিতে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে, সে সংক্রান্ত নথিপত্র নিয়ে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ওসিকে আদালতে উপস্থিত থাকতে বলেছেন। এখানে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শামসুদ্দোহা তালুকদারের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘আইসিটি আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দিতে পারেন না। মন্তব্যের জেরে জিডি হয়েছে, এর তদন্ত হবে। এখানে আরেকটি বিষয় পরিষ্কার করা দরকার, আইন অনুসারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের স্পটে অপরাধ সংঘটিত হতে হবে। এ ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি।’
বর্তমান সময়ে আইসিটি আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে ৫৭ ধারা নিয়ে সাংবাদিকরাও উদ্বিগ্ন। ফেসবুকে কেউ বেআইনি কিছু লিখলে সেটার বিচার অবশ্যই হতে হবে। কারণ কারও সম্মানহানি করা অপরাধ। কিন্তু কে কী লিখেছে সেটার তদন্ত ছাড়াই বিচার করা বা শাস্তি দেওয়া অমানবিক, তাও একজন স্কুলছাত্রকে। আসলে এসব ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে কি না সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। এসব কর্মকাণ্ড কিন্তু সরকারের সুনাম বাড়াচ্ছে না।
নিজেদের মানে সাংবাদিকদের কথা একটু বলি। আমাদের মান্যগণ্য সাংবাদিক নেতারা দেখছি ইদানীং ক্ষমতার দম্ভে এমন কিছু করে বুক ফুলিয়ে হাঁটছেন। ফেসবুকে লেখালেখির বিচার করার দুঃসাহস দেখাচ্ছেন সাংবাদিক সংগঠনের কিছু প্রতাপশালী নেতা। বন্ধুকৃত্য করতে গিয়ে তারা সহকর্মী তথা সংগঠনের সহযোগী সদস্যের গলা কাটতেও দ্বিধা করছেন না। ফেসবুকে কোন সাংবাদিক কার বিরুদ্ধে কী লিখল সেটার বিচার কি সাংবাদিকদের বিনোদন সংগঠনের নেতারা করতে পারেন? তাহলে দেশে আইন আদালত আছে কেন?
এইসব সাংবাদিক নেতারা নীতি-নৈতিকতা নিয়ে বড় বড় কথা বলেন। অথচ এরা আদালতের নির্দেশ মানারও প্রয়োজন বোধ করেন না। আবার আদালত অবমাননার মামলা খেয়ে বুক ফুলিয়ে হাঁটেন। আশা করি, মহামান্য আদালত এইসব অনাচারেরও সুবিচার করবেন।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী