পুরাতন জীর্নশীর্ণ লাইনে প্রতিনিয়ত ঘটছে ত্রুটি, কমলগঞ্জে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চা শিল্প
ভ্যাপসা গরমে গত এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুতের ঘন ঘন বিপর্যয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের অধীনস্থ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। পুরাতন আর জীর্নশীর্ণ লাইনের কারনে প্রতিনিয়ত ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চা শিল্প। প্রতিদিন কয়েক দফা বিদ্যুৎ আসা যাওয়া, দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকা ও লো-ভোল্টেজের কারনে ৪ ঘন্টা চায়ের উৎপাদন বন্ধ এবং স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী পড়াশুনায় চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের অধীনস্থ প্রায় ৫২ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ পিডিবির গ্রীড লাইন ও কুলাউড়াস্থ পিডিবির গ্রীড লাইন থেকে পর্যায়ক্রমে কমলগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কুলাউড়া গ্রিডের সমস্যা ও পুরাতন লাইনের কারনে বিদ্যুৎ সরবরাহে প্রতিনিয়ত ত্রুটি ঘটছে। পবিস কমলগঞ্জ জোনালের অধীন কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলার একাংশ গত এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহে শুরু হয়েছে নানা ত্রুটি বিচ্যূতি।
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ বার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়। একবার বিদ্যূৎ সরবরাহ বন্ধ হলে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে টানা ৪ ঘন্টা লো-ভোল্টেজের কারনে চা বাগানে কারখানা সমুহে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অপরদিকে গরমে নাকাল বিদ্যুৎ গ্রাহক ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। শুধু চা বাগান এলাকা নয়। গোটা কমলগঞ্জে মানুষের বিরক্তের কারন এখন বিদ্যুত। গত এক মাস ধরে বিদ্যুত ব্যবস্থা প্রায় বেহাল পরিস্থিতি। বিদ্যুত বিভাগ শুধু লাইনে সমস্যা বলে দিন পার করছে। বিষয়টি ভাল ভাবে খতিয়ে দেখার দাবী জানিয়েছেন বিদ্যুত গ্রাহকরা। সকাল হলেই দুই তিনবার আর সন্ধ্যা যেতে না যেতেই কয়েক দফা বিদ্যুত আসা যাওয়া করে। রাতে প্রায় বিদ্যুত ঘন্টার পর ঘন্টা থাকে না।
ন্যাশনাল টি কোম্পানী (এনটিসি) এর মাধবপুর চা বাগান ব্যবস্থাপক বিদ্যুৎ কুমার রায় বলেন, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে চা উৎপাদনে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চায়ের কারখানা একটি ধারাবাহিক প্রসেস শিল্প। সেখানে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এই শিল্পের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারন হয়ে দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যেখানে ৪০০ ভোল্টেজ থাকার কথা সেখানে ৩৫০ ভোল্টেজের কারনে চা কারখানা সচল রাখা সম্ভব হয় না। ফলে অধিকাংশ সময়ে চা কারখানা বন্ধ রাখতে হয়। এদিকে কমলগঞ্জে কলেজ শিক্ষক জমসেদ আলী, শিক্ষাথী নাবিল আহমেদ, নীলিমা সুলতানা, কাওসার আহমদ বলেন, যেভাবে এখন বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটছে তাতে পড়াশুনা মোটেই সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ট করে তোলছে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনালের ডিজিএম প্রকৌশলী মোবারক হোসেন সরকার বলেন, আসলে তিনি এখানে নতুন এসে এই সমস্যা দেখে নিজে সরেজমিনে উপস্থিত থেকে বিদ্যুৎ লাইনের উপর থেকে সকল গাছ গাছালি পরিস্কার করাচ্ছেন। তাছাড়া কুলাউড়া গ্রিডে সমস্যা এবং পুরাতন লাইনের কারনে একটু বেশি সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তিনি সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।