বিশ্বনাথবাসী যে আশা নিয়ে ৩৭ বছর ধরে হাসিনা-খালেদার দিকে তাকিয়ে আছেন!
প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামীলীগ ও বিএনপি গত ৩৭ বছর ধরে একজন মন্ত্রীর জন্য আওয়ামীলীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার দিকে তাকিয়ে আসছে। কিন্তু গত তিন যুগেও তাদের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। স্থানীয় নেতাকর্মীদের প্রশ্ন কবে শেষ হবে তাদের এ প্রতিক্ষা? অথচ মন্ত্রীত্ব পাওয়ার জন্য সব যোগ্যতাই বিশ্বনাথের নেতাদের রয়েছে ।
এই মূহুর্তে ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ থাকায় এবং তাদের ক্ষমতার মেয়াদ আরো প্রায় আড়াই বছর থাকায় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা এবার তারা সফল হবেনই। বিশ্বনাথের ইতিহাসে শফিকুর রহমান চৌধুরীই হবেন বিশ্বনাথের ১ম কোন আওয়ামীলীগ সরকারের মন্ত্রী। ঠিক তেমনী বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীই হবেন বিশ্বনাথের ইতিহাসের ২য় কোন বিএনপি সরকারের মন্ত্রী। প্রসংগত বিশ্বনাথের ইতিহাসে ১৯৭৯ সালে সর্বপ্রথম তখনকার বিএনপি সরকারে আমলে প্রতিমন্ত্রী হন দেওয়ান তৈমুর রাজা চৌধুরী ।
পূণ্যভূমি সিলেটের আলোকিত এক জনপদ প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ উপজেলা । স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় রাজনীতির কারণে স্বাধীনতার পর থেকেই বিশ্বনাথ নামক জনপদটি সারাদেশে ব্যাপক আলোচিত। স্বাধীনতার পর থেকেই সিলেট জেলার রাজনীতিতে এ অঞ্চলের রাজনীতিবিদরা বিরাট একটি প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। তারা যোগ্যতা বলেই বিএনপি, আওয়ামী লীগ , জাতীয় পার্টি সহ বিভিন্ন দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ।
গত প্রায় তিনি দশক বিশ্বনাথের শাহ মোদাব্বির আলী মানিক মিয়া, আ ন ম শফিকুল হক ও ইফতেখার হোসেন শামীম যেমন আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ঠিক তেমনী বিশ্বনাথের এম ইলিয়াস আলী গত প্রায় দেড় দশক ধরে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন । নিজস্ব ব্যক্তিত্ব, যোগ্যতা ও কারিশমাটিক নেতৃত্ব দিয়ে তারা যেমন দলীয় প্রধানের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন ঠিক তেমনী দলীয় নেতাকর্মীর ভালবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৮-২০১৪ এই দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বিশ্বনাথের আনম শফিকুল হক কিংবা ইফতেখার হোসেন শামীমের ভাগ্যে মন্ত্রীত্ব পদটি শোভা পায়নি।
সিলেটে জাতীয় নেতা হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, আব্দুস সামাদ আজাদ, শাহ এস এম কিবরিয়া, আবুল মাল মুহিত ও নুরুল ইসলাম নাহিদের জন্মভুমি হওয়ায়। অপরদিকে ১৯৯১-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ এই দুই মেয়াদে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে আনম শফিকুল হক ও ইফতেখার হোসেন শামীমের মত এম ইলিয়াস আলীর জন্য তেমন প্রতিবন্ধকতা না থাকলেও অনেকটা নবীন হওয়ায় মন্ত্রীত্বের স্বাদ পাননি তিনি । পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে সিলেট বিদ্বেষী ষড়যন্ত্রতো ছিল । তবে বিএনপির শেষ মেয়াদে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিলও প্রচুর, কিন্তু শেষমেষ বিশ্বনাথের মানুষের সেই কাঙ্খিত প্রত্যাশা পুরন হয়নি। তথাপি স্থানীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে যেমন নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর সন্ধান মিলবে ঠিক তেমনী গত এক দশকে এম ইলিয়াস আলীর রাজনৈতিক ভূমিকা তাকে অনায়াসেই মন্ত্রীত্বের পদ দিয়ে সম্মানীত করা হবে ।
বর্তমান সরকার এবার ২য় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিল জোটের সাথে জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদ থেকে নমিনেশন প্রত্যাহারকারী সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী দলের জন্য এই ত্যাগের কারণে তিনি মন্ত্রীত্ব পাবেন । আর বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেটের কৃতিসন্তান ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শাহ মহসিন আলী হঠাৎ করে মৃত্যুবরণ করলে শফিকুর রহমান চৌধুরীর একটি সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় । কিন্তু শেষমেষ স্থানীয় নেতাকর্মীদের সেই কাঙ্খিত স্বপ্ন পুরন হয়নি। তবে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকায় এবং তাদের ক্ষমতার মেয়াদ আরো প্রায় আড়াই বছর থাকায় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা এবার তারা সফল হবেনই । বিশ্বনাথের ইতিহাসে শফিকুর রহমান চৌধুরীই হবেন বিশ্বনাথের ১ম কোন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী।
স্বাধীনতা আন্দোলন সহ দেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান পালনকারী প্রবাসী বিশ্বনাথবাসীর সেই ভূমিকার জন্য এবং জাতীয় অর্থনীতিতে রেকর্ড সংখ্যক প্রবাসী রেমিটেন্স প্রদানকারী বিশ্বনাথের মানুষকে দীর্ঘ ৩৭ বছর অন্তত একটি মন্ত্রীত্বের পদ প্রদান করতে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে আসবেন সেই প্রত্যাশা এ জনপদের প্রতিটি প্রাণের ।