অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের কবর রচিত হয়েছে বাংলাদেশে – নিউইয়র্কে প্রধান বিচারপতি
প্রবাস ডেস্ক: প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, বাংলাদেশে আর কখনো অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের সুযোগ নেই। সেই সুযোগের কবর রচিত হয়ে গেছে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের অপরাধের বিষয়টি শাসনতন্ত্রে সংযুক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সময় রবিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। এতদিন বিচার বিভাগকে সরকারের অঙ্গ মনে করা হতো। এখন সেই ধারণা পাল্টেছে। বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের একটা অঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিচার বিভাগ নিরপেক্ষ না থাকলে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় না। বিচার বিভাগের অনিয়ম দূর করে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আরেকটু সময় প্রয়োজন। প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশে কোন অন্যায় কাজ সুপ্রিম কোর্ট থাকতে হতে পারবে না। কোন ধরনের অন্যায় দেখলেই বিচার বিভাগ সেখানে হস্তক্ষেপ করবে। এসময় প্রধান বিচারপতি কিছু সরকারি কর্মকর্তা এখনো দুর্নীতিগ্রস্ত আছে বলে মন্তব্য করেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ইসলাম কখনো সন্ত্রাসকে সমর্থন করে না। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে যারা সন্ত্রাস করছে তাদের কোনো ধর্ম ও দেশ নেই। বর্তমান সরকার সন্ত্রাসের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে এবং বিচারের মাধ্যমে এসব সন্ত্রাসীদের শাস্তি নিশ্চিত করছে। তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিতের কথা উল্লেখ আছে। এই সমান অধিকার নিশ্চিত করা একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। আমাদের দেশে আইন আছে, কিন্তু আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষায় বিচার বিভাগের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তবে এ কথা সত্যি যে বাংলাদেশে বিচার প্রক্রিয়ায় ধীর গতি রয়েছে। সারা দেশে এখনো ৩০ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আমি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর বিচার বিভাগে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করেছি। নিম্ন আদালতের বিচারকদের সকাল, বিকাল উভয় সময়ে কোর্টে যাওয়া নিশ্চিত করেছি। তারা গরীব মানুষের অর্থে চাকরি করছেন, আর বিচারপ্রার্থী জনগণকে আদালতে এসে হয়রানির শিকার হতে হবে, এটা আমি কখনো চাই না।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকারের অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ৩০ একর জমির গাছ কেটে ইন্ডাস্ট্রি করতে চেয়েছিলো। কিন্তু বিচার বিভাগের মাধ্যমে আমরা তা বন্ধ করেছি। ট্যানারিকে সাভারে স্থানারিত করতে আমরা কঠোর নীতি অবলম্বন এবং আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করেছি। নতুন আইন এবং আইনের প্রয়োগের কারণে বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন কমে এসেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত এস্টোরিয়ার ক্লাব সনমে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ল’ সোসাইটি নিউইয়র্ক। সংগঠনের সভাপতি মোর্শেদা জামানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি এম আর হোসেন, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল এমপি, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. শামীম আহসান, অল পার্লামেন্টিরিয়ান পার্টির সাধারণ সম্পাদক শিশির শীল, এটর্নি অশোক কর্মকার ও মঈন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াহিদ, মিয়া মো. জাকির হোসেন প্রমুখ।